সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

এমন ভাংচুর ও লুটপাট মেনে নেয়া যায় না
অনলাইন ডেস্ক

প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর শুনি ও দেখি। এমন প্রতিটা ঘটনা সকলের মনে সমানভাবে দাগ কাটে না। কিন্তু কিছু ঘটনা ঠিকই মনে দাগ কাটে। এমন একটি ঘটনাই ঘটেছে গত ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগাঁও গ্রামে। জুমার নামাজ পড়ার জন্যে মুসলমানদের প্রায় সবাই যখন মসজিদমুখী, তখন একদল দুর্বৃত্ত হয়েছে একটি দোকানের প্রতি হামলামুখী। এ দোকানটি হচ্ছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর হামলা চালিয়েছেন অনুতোভয়ে। অথচ সেই যুদ্ধের ৫১ বছর পর বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে তাঁর জীবিকার অন্যতম অবলম্বন তাঁর দোকানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে নিজ সহোদর শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত।

দুর্ভাগা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আমির হোসেন মৃধা। তিনি গাব্দেরগাঁও গ্রামের মরহুম মোঃ মুখলেছুর রহমান মৃধার জ্যেষ্ঠ পুত্র। মুখলেছুর রহমান তার মৃত্যুর পূর্বে তার এই ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তাকে, তার পরিবার, দেশ ও সমাজকে গৌরবান্বিত করেছেন বলে তার স্বীকৃতি হিসেবে বাড়ির সামনে নিজ সম্পত্তিতে জীবিকার অবলম্বন হিসেবে দোকানঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেন। এই সম্পত্তির ওপর আমির হোসেন মৃধা নিজ অর্থায়নে একটি দোকানঘর নির্মাণ করে সেটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন তার বড় ছেলেকে। কিন্তু হঠাৎ করে তার ছোট ভাই শফিকুর রহমান তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। সেই হয়রানির বাজে নজির হিসেবে গত শুক্রবার একদল দুর্বৃত্তসহ জুমার নামাজের প্রাক্কালে হামলা চালায় দোকানটিতে। এ হামলায় দোকানটিকে ভেঙ্গে প্রায় চুরমার করে ফেলে এবং মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল মান্নান আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এ ঘটনা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে হামলাকারী শফিকুর রহমানের কোনো বক্তব্য সংযোজন করা হয়নি। আমরা ধরে নিলাম, শফিকুর রহমান পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগের বিষয়ে সুষ্ঠু ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। সেজন্যে তিনি কোনো আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন বা নেবেন। কিন্তু রায়ের অপেক্ষা না করে কিংবা কোনো সালিস-মীমাংসার ফলপ্রসূ প্রয়াস না চালিয়ে তিনি আইন হাতে তুলে নেয়ার যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেটা মেনে নেয়া যায় না।

আমাদের দেশে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বলে বিবেচিত। তিরিশ লক্ষ জীবন ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ৮ মাস ২০ দিনের মুক্তিযুদ্ধে যে বিরল বিজয় এবং বহুল প্রত্যাশিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়, তার পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অসামান্য। সেজন্যে তাঁরা পরম শ্রদ্ধেয়। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে, তাদের সন্তান, নাতি-নাতনিদেরকে চাকুরি দিয়ে, ভাতা দিয়ে, গৃহহীনকে ঘর দেয়াসহ নানাভাবে সম্মান প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের অপরিশোধ্য ঋণ পরিশোধের প্রয়াস চালানোর মধ্যে যদি জানা যায়, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মালিকানাধীন দোকানঘরে হামলা চালানো হয়েছে, তাহলে তাতে শান্তিপ্রিয় প্রতিটি মানুষের উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো উপায় নেই। এ উদ্বেগ নিরসনে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলের ভূমিকা হবে কঠোর-এমনটাই প্রতিটি সচেতন মানুষের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়