প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
বিজ্ঞাপিত করা হোক বা না হোক, এমনিতেই চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন ‘ঠোঁডা’ প্রাকৃতিকভাবে খুবই আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ মাত্রই এ স্থানটির প্রেমে না পড়ে পারে না। এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে গুরুত্বও বেড়ে যায় অনেক। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ স্থানটির ‘ঠোঁডা’ নামে সন্তুষ্ট না হয়ে এর সুন্দর নাম দিয়েছে মোলহেড। বর্তমানে এই মোলহেড চাঁদপুর জেলার সবচে’ আকর্ষণীয় স্থান। পুরো চাঁদপুর শহর ও আশেপাশের লোকজনই শুধু নয়, পাশর্^বর্তী বিভিন্ন জেলাসমূহ সহ খোদ রাজধানী থেকে প্রতিনিয়ত প্রচুর লোকজন ছুটে আসে এই মোলহেডে। তিন নদীর মিলিত হবার স্থান যে কতোটা মোহনীয় হতে পারে, মোলহেডে এসে সেটা সহজে উপলব্ধি করা যায়। মোলহেডের সন্নিকটে মেঘনা ও ডাকাতিয়ার মিলনস্থলে বর্ষা ও বন্যাকালীন ভয়াল ঘূর্ণাবর্তের কারণে এবং সেখানে লঞ্চডুবির কারণে এ স্থানটিকে এক সময় আটলান্টিক মহাসাগরের ভয়ঙ্কর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে’র সাথে তুলনা করা হলেও এখন সেটি আর করা হয় না। কারণ, এ স্থানটিতে এখন আর লঞ্চ ডুবে না, ডুবন্ত লঞ্চ নিখোঁজ হয় না। তবে কালেভদ্রে নৌকা ও মানুষ ডুবলেও পূর্বের ন্যায় আতঙ্ক সৃষ্টির মতো কোনো ঘটনা মোলহেডের নিকটে ঘটে না।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (যেটি ওয়ান ইলেভেন নামে বহুল পরিচিত) বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটার পর মূলত চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে এটি উন্মুক্ত স্থানে পরিণত হয়। তারপর এখানে চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে পর্যটকবান্ধব কিছু স্থাপনা (বসার স্থান, টয়লেট ইত্যাদি) করে দিলে এটি ক্রমশ দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে থাকে। ২০১১ সালে এখানে তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহার উদ্যোগে এবং পৌরসভার অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমির স্মরণে ‘রক্তধারা’ নামে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলে পর্যটন-গুরুত্ব এবং পর্যটকের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এরই মধ্যে এখানে পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটির তত্ত্বাবধানে শ্রীবৃদ্ধির নানা কাজ করা হয়। পর্যটন কর্পোরেশনের মাধ্যমে এ স্থানটিকে পর্যটন স্পটে পরিণত করার প্রয়াসও চালানো হয়। একই সাথে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে এখানে ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল পার্ক করার অনুমোদনও পাওয়া যায়। স্থাপনা নির্মাণে সোচ্চার হয় পর্যটন মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাধ সাধে রেল মন্ত্রণালয়। তারা বলে, রেলওয়ের জায়গায় রেল কর্তৃপক্ষই করবে পর্যটনবান্ধব দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে মির্জা জাকির কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রেলওয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এক কোটি বারো লাখ টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডকে দর্শনীয় করার জন্যে নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার ও কার্যাদেশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সহসাই উন্মুক্ত পার্ক হিসেবে মোলহেডটি নূতন আলোর মুখ দেখবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বড় সুখবর। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগের সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করছি।