সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

সড়ক যোগাযোগ সংক্ষিপ্তকরণের মোক্ষম জায়গা যেন চাঁদপুর জেলা
অনলাইন ডেস্ক

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দেশের সড়ক মানচিত্রে চাঁদপুর জেলার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে পরাধীন পাকিস্তান আমলেই। চট্টগ্রাম-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর কিছুটা পর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত বিরাট একটি অংশ ভারত সীমান্তঘেঁষা কিংবা ভারত সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় পাকিস্তান সরকার নিরাপদ দূরত্বে বিকল্প সড়ক নির্মাণের বিষয়টি তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে। সেমতে ফেনী থেকে নোয়াখালীর চৌমুহনী এবং লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকা অভিমুখী সড়ক নির্মাণের খণ্ডিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করে। কিন্তু সেটি জোড়াতালি দিয়ে চাঁদপুর শহরের প্রায় চার কিলোমিটার দূরবর্তী ডাকাতিয়া নদীর ইচলী লঞ্চঘাটের সংযোগ রক্ষার মধ্য দিয়ে থেমে যায়। স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে ফরিদগঞ্জবাসীর অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর নব্বইর দশকে ফরিদগঞ্জ-ইচলী সড়কটি পিচঢালা পাকা সড়কে রূপান্তরিত হলে ডাকাতিয়া নদীতে দুটি ফেরির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে বাস-ট্রাকসহ ছোট-বড় অন্যান্য যানবাহন চলাচল শুরু হয়। অপরদিকে ফরিদগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ হলেই চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়ে যায়। ইতোমধ্যে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জের মধ্যে দুটি ফেরি পরিহারে ডাকাতিয়ায় নির্মাণ করা হয় সেতু।

এমতাবস্থায় সড়ক বিভাগ চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং রাজধানী পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ সংক্ষিপ্তকরণের মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়। সেমতে রায়পুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ফরিদগঞ্জস্থ ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন চান্দ্রাবাজার হয়ে মেঘনার পূর্ব তীরবর্তী হরিনা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। তারপর চট্টগ্রামের সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর তিন শতাধিক কিলোমিটারের ঘুরপথ এড়াতে ১৯৯৯ সালে হরিনা দিয়ে মেঘনা নদীতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা হয়ে রাজধানীতে যাওয়ার ঘুরপথ এড়ানোর নানা পরিকল্পনা হাতে নেয় সড়ক বিভাগ। সেজন্যে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই ও কালিয়াপাড়া-কচুয়া-গৌরিপুর সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে। একই সাথে রহিমানগর-মাধাইয়া সড়ক, ধনাগোদা নদীতে ফেরি চালুর মাধ্যমে বাবুরহাট- মতলব উত্তরের শ্রীরায়েরচর ব্রিজ হয়ে দাউদকান্দি সড়ক এবং হাজীগঞ্জ-কচুয়া-সাচার-গৌরিপুর সড়ক নির্মাণের কাজও চালিয়ে যায়। শুধু কি তাই, ধনাগোদা নদীর ফেরি এড়াতে মতলব বাজারের পাশে নির্মাণ করে সেতু। ফলে শুধু চাঁদপুর নয়, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কার-মাইক্রোবাস সহ অন্যান্য ছোট যানবাহনের জন্য বাবুরহাট-মতলব-শ্রীরায়েরচর সড়ক রূটটি বহুল ব্যবহৃত হয়ে যায়। এবার চাঁদপুর-ঢাকা সড়ক রূটটি আর কতোটা সংক্ষিপ্ত করা যায় সে ভাবনাটিও মাথায় আনে সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা। সে ভাবনার প্রতিফলনে চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার কমাতে মতলব উত্তর থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার মধ্যে মেঘনা নদীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে একটি ব্যতিক্রম দৃষ্টিনন্দন সেতু। এ সেতু বাস্তবায়ন বিষয়ে গত মঙ্গলবার খুবই ঘটা করে অংশীজন তথা স্টেকহোল্ডারদের সাথে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম মোহন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বক্তব্যে সেতুটি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক লাইফলাইন হওয়াসহ সেতুটি নিয়ে উচ্চ আশাবাদে সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়।

আমরা ভৌগোলিক কারণে দেশের সড়ক মানচিত্রে চাঁদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ও নানা সম্ভাবনার কথা বহুবার এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছি। আমাদের দেশের সড়ক বিভাগ এবং চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও শরীয়তপুর জেলার এমপি-মন্ত্রীরা দেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগকে সংক্ষিপ্ত, সময় সাশ্রয়ী ও স্বচ্ছন্দ করার জন্যে চাঁদপুর জেলাকে বাস্তবতার নিরিখে কাজে লাগিয়েছে আন্তরিকভাবে--এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এজন্যে এঁদের সকলের প্রতি চাঁদপুর জেলাবাসীর পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়। আমরা মনে করি, সড়ক সংক্ষিপ্তকরণ প্রক্রিয়ায় চাঁদপুর জেলার সামগ্রিক গুরুত্ব বাড়বে এবং এখানে শিল্পাঞ্চল গড়া, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়