প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ০০:০০
গত ২৫ জুলাই রোববার থেকে বাংলাদেশে সবচে’ বেশি আলোচিত ক্রিকেটার হচ্ছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে চলছে রীতিমত বন্দনা। তার আগুন ঝরানো ব্যাটিংয়ে ওইদিন টি-২০ ক্রিকেট বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সৌম্য সরকারের অলরাউন্ড নৈপুণ্যকে ছাপিয়ে শামীমের ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানই অনেক বেশি আলোচিত। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে তিনি সে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে ক্রিকেট বোদ্ধা ও নির্বাচকদের নজর কাড়েন। দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর অভিষেক হলেও দল জিতেনি। তবে তাঁর ১৩ বলে ২৯ রান ছিলো ভীষণ উপভোগ্য ও আলোচিত।
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে, সেই জেতার পেছনে শামীম পাটোয়ারীর রয়েছে অসামান্য অবদান। তিনি চাঁদপুরের সন্তান। ২০০০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল হামিদ পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম রিনা বেগম। তার বাবা বলেন, ছোটবেলায় স্কুলে না গিয়ে খেলার মাঠে পড়ে থাকার জন্যে ওকে অনেক মেরেছি। তবু স্কুলে খুব একটা ফেরাতে পারেনি। আজ ক্রিকেট খেলায় বিশ্বমানের কৃতিত্ব দেখিয়ে শামীম আমাদের সম্মান বাড়িয়েছে। মা বলেন, গ্রামের মাঠে ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকায় বাবা-চাচার হাতে শামীম অনেক মার খেয়েছে। পরে ওর চাচা ওকে চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন।
বস্তুত ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে শামীমকে তাঁর চাচার ভর্তি করিয়ে দেয়াটাই শামীমের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি এই একাডেমিতে খুঁজে পান ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ চিরকুমার এক কোচ শামীম ফারুকীকে, যিনি এই একাডেমির প্রতিটি ছাত্রকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন এবং ক্রিকেটের আদ্যোপান্ত শেখান। এর ফলে শামীম এই একাডেমিতে নিজেকে দক্ষ করে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হবার যোগ্যতা অর্জন করেন। বিকেএসপিই শামীমকে গড়ে তোলে পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে।
শামীমের প্রথম কোচ শামীম ফারুকী বলেন, শামীম হোসেন ন্যাচারালি ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার। জিম্বাবুয়েতে গিয়ে টি-২০ ক্রিকেটের বাংলাদেশ জাতীয় দলে তার অভিষেক হবার পর তার প্রতি আমার পজিটিভ চিন্তা ছিলো। সে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেই ফিনিশিং করে আসবে এ বিশ্বাস আমার ছিলো। রোববার সিরিজ জয়ের ম্যাচে আমার অনেক আনন্দের মুহূর্ত ছিলো যখন শামীমের ব্যাট থেকে জয়সূচক রানটি আসে। তিনি বলেন, শামীম জাতীয় দলের হয়ে মাত্র খেলা শুরু করেছে। অনেকে তাকে নিয়ে প্রশংসাসূচক অনেক কিছু বলবে ও লিখবে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর শিষ্য শামীমের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমার সেদিকে নজর দিলে চলবে না, তোমার ফোকাস থাকবে কীভাবে তুমি তোমার খেলার উন্নতি করতে পারো এবং তোমার খেলার মাধ্যমে দলকে জেতাতে পারো, দেশের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারো।
আমাদের দেশের ক্রিকেটসহ সম্ভাবনাময় অন্যান্য ইভেন্টের যে কোনো খেলোয়াড়ের খারাপ দিক হলো, তারা সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে না। এক/দুবারের আশাব্যঞ্জক বড় সাফল্যে তারা প্রশংসার জোয়ারে ভেসে হারিয়ে যায়। শামীম হোসেন পাটোয়ারী সেভাবে যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যে তার জীবনের প্রথম ক্রিকেট কোচ শামীম ফারুকীর পরামর্শ যথার্থই বটে। আমরা আশা করি, এই পরামর্শ মেনে চলে শামীম পাটোয়ারী তাঁর সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একের পর এক সাফল্য উপহার দিতে গুড ফিনিশারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।