প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও মানুষের মাঝে পূর্বের ন্যায় ভয়-ডর নেই। করোনাকে মানুষ এখন কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ আরো কিছু রোগের মতোই মনে করে। ভাবখানা এমন, অমুকের করোনা হয়েছে, অন্যান্য রোগের মতো সেটা হতে পারে, আমার তো হয়নি, অতএব আমি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে যত্রতত্র ঘুরবো ফিরবো, খাওয়া-দাওয়া করবো, ফুর্তি করবো, কিসের আবার স্বাস্থ্যবিধি? ২২ দিন কঠোর বিধি-নিষেধ তথা লকডাউনের পর সরকার পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৮দিনের জন্যে সেটি শিথিল করেছে। ঈদের একদিন পর অর্থাৎ ২৩জুলাই থেকে ৫আগস্ট পর্যন্ত চলবে আবার লকডাউন। কোথাও যুদ্ধ চলাকালে মাঝে মাঝে কার্ফ্যু জারি হয় এবং সেটি শিথিলও করা হয়। শিথিলাবস্থায় বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের যেমন ঢল নামে, তেমনি অবস্থা দেখা যাচ্ছে করোনাজনিত লকডাউন শিথিলের পর আমাদের দেশে। কোরবানির পশুর হাটসহ বিভিন্ন কেনাকাটার প্রয়োজনে মানুষ অবাধে ছুটছে শপিংমলসহ ছোট-বড় বিপণী বিতানগুলোতে। অধিকাংশজনের অবস্থা এমন, যা হবার তা-ই হোক, কোরবানির মাংস খেয়ে এবং আনন্দ-ফুর্তি করেই ঈদ কাটাবো।
সত্যিই আমরা এমন এক জাতি, যাদের মধ্যে দুর্যোগে-দুর্বিপাকে, রোগে-শোকেও ‘মানি না কো কোনো আইন’ এমন মানসিকতা বিরাজ করে। এটা যে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে, সেটা নিয়ে যেনো অনেকেরই ভাবনার অবকাশ নেই। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন মানসিকতার প্রতিফলন ঘটানোর মতো একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে, যেটির শিরোনাম হয়েছে ‘শাহরাস্তিতে পশুর হাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ॥ নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি’।
এ সংবাদে লিখা হয়েছে, শাহরাস্তি উপজেলার প্রধান কোরবানির পশুর হাট বসেছে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নিজ মেহার মডেল পাইলট হাই স্কুল মাঠে। শুক্রবার সকাল থেকেই কোরবানির পশু নিয়ে বিক্রেতারা হাজির হন। পশু কিনতে শত শত ক্রেতা হাজির হন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পশুর হাটে মানুষের ঢল নামে। এ সময় কাউকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি। ইজারাদারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। কোরবানির এই পশুর হাট দেখে কারো বোঝার উপায় হয়নি যে, দেশে করোনা মহামারী চলছে। প্রভাবশালী ইজারাদারের ভয়ে এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পায় নি। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদক বেশ কিছুক্ষণ বাজারে থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করেননি। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার স্বাস্থ্য বিধির কথা বলা হলেও ইজারাদার, ক্রেতা-বিক্রেতা কারোরই এটিকে আমলে নিতে দেখেন নি। উপস্থিত শত শত লোকের মুখে ছিলো না মাস্ক। শাহরাস্তিতে বর্তমানে করোনার যে ঊর্ধ্বগতি, এভাবে চলতে থাকলে করোনা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে চাঁদপুর শহর ও সদর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলার পশুর হাটের চিত্র খুব বেশি খারাপ না হলেও শাহরাস্তির পশুর হাটের এমন চিত্র সত্যিই উদ্বেগজনক এবং নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনাক্রান্ত রোগী ভর্তির উদ্যোগ নেয়া মাত্রই শাহরাস্তিতে প্রথম দিন (শুক্রবার) ১২ জন ভর্তি হয়েছে, যেটা সেখানকার করোনাজনিত পরিস্থিতির ভয়াবহতা নির্দেশক। কাজেই এ চিত্র পরিবর্তনে স্থানীয় উপজেলা ও থানা প্রশাসনের সক্রিয় হবার অনিবার্যতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।