প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
এমন ছিনতাই উদ্বেগজনক
১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট চাঁদপুরে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম শুরুর পূর্বে চাঁদপুর শহর ছিলো অপরাধীদের অভয়ারণ্য। রাতে তো বটেই দিনে-দুপুরে হতো ছিনতাই। আর চুরি ছিলো সাধারণ ঘটনা। মাঝে মাঝে ডাকাতি হতো। চাঁদপুর শহরে তখন খুনের ঘটনাও ঘটতো প্রায়শই। খুনের পেছনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্যের দ্বন্দ্বই ছিলো মুখ্য। এই শহরে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘর্ষ নেই বললেই চলে, যদিও বড় বড় দলের মধ্যে স্পষ্টত দ্বিধা বিভক্তি বিদ্যমান। দ্বান্দ্বিক অবস্থানে থাকলেও কেউ সীমা লঙ্ঘনের কিংবা বাড়াবাড়ির মানসিকতা প্রদর্শন করে না বলেই রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আর ছাত্র সংঘর্ষও নেই।
|আরো খবর
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রসহ মূল জায়গায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নৈশকালীন টহল চালুর পর চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এমতাবস্থায় ২০০২ সালের কোনো একদিন চাঁদপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোঃ বখতিয়ার আলম কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সমন্বয় সভায় সন্তুষ্টচিত্তে বলেন, দিনের চাঁদপুরের চেয়ে রাতের চাঁদপুর অধিক নিরাপদ। কারণ, ঐদিনগুলোতে থানা পুলিশকে চাঁদপুর শহরে রাতের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে দিনেরটা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিলো। এখনও তেমনটাই দৃশ্যমান।
চাঁদপুর শহরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাতের বেলা টিনের চাল কেটে বিভিন্ন দোকানে এবং দিনের বেলা ফ্ল্যাট বাসা বাড়িতে বাসিন্দাদের অনুপস্থিতিতে তালা খুলে/ভেঙ্গে দুর্ধর্ষ বেশ কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে এসব চুরির কুল কিনারা করতে পুলিশ সক্ষম হওয়ায়, বিশেষ করে সংঘবদ্ধ চক্রকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করায় এমন চুরি অনেক কমে গেছে। ক’বছর আগে অপরাধী চক্র চাঁদপুর শহরের কিছু বাসায় সন্ধ্যা বেলা গৃহকর্তা ও পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যের অনুপস্থিতিতে ফিল্মি কায়দায় ক’টি পরীক্ষামূলক ডাকাতি করেছিলো। পরবর্তীতে সেটিও পুলিশি তৎপরতায় বন্ধ হয়েছে। তবে গত ক’বছরে ভোর বেলা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে চলছে। ছিনতাইকারীরা ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে মোটর সাইকেলযোগে শহরের পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতে বিচরণ করে এবং পূর্বে রেকি করা সাপেক্ষে স্বর্ণালঙ্কার পরিধানকারী নারী (যারা মর্নিং ওয়াক করে) কিংবা প্রাইভেট পড়তে শিক্ষকের কাছে নিয়মিত যাতায়াতকারী ছাত্রীর ওপর চড়াও হয়।
অনেকদিন পর গত ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোরে চাঁদপুর শহরের কদমতলায় নিরিবিলি পরিবেশে অনিতা রাণী মজুমদার নামে এক নারী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। খুব দ্রুত মোটর সাইকেল আরোহী দু ছিনতাইকারী ডেগার দেখিয়ে নারীটির গলায় পরিহিত স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যেটি দেখা গেছে। চাঁদপুর শহরবাসী এমন ছিনতাইয়ে উদ্বিগ্ন।
আমরা মনে করি, চাঁদপুর শহরে ভোরের আলোতে যেসব মোটর সাইকেল বেপরোয়া চলাচল করে এবং এগুলোর মধ্যে যেগুলোতে দুজন থাকে, সেগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশের পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কেননা এদের মধ্যেই অপরাধী চক্রের কেউ কেউ থাকতে পারে, যারা কদমতলার ন্যায় ছিনতাইয়ের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। আশা করি চাঁদপুরের চৌকষ পুলিশ সুপার এমন পর্যবেক্ষণ ছাড়াও হয়তো অন্য কোনো উপায়ে ভোর বেলার ছিনতাইকারীদের শনাক্তকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে চাঁদপুর শহরবাসীর উদ্বেগের অবসান ঘটাবেন।