প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
এ কেমন চাঁদাবাজি ?
রেলপথ ও আকাশ পথে চাঁদাবাজি নেই। ট্রেন ও প্লেনের চালকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা চাঁদাবাজির শিকার হবার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া সড়ক ও নৌপথে রয়েছে চাঁদাবাজির অবারিত সুযোগ। সড়কে চলাচলকারী ছোট-বড় সকল প্রকার যানবাহনের চালক-হেলপাররা চাঁদাবাজির শিকার হয় প্রতিনিয়ত। চাঁদাবাজিটা সহনীয় মাত্রায় থাকলে অর্থাৎ অতিষ্ঠ হবার পর্যায়ে না গেলে সাধারণত চালকদের মুখ ফুটে না। নৌপথের চাঁদাবাজিতেও নৌযান চালকরা সাধারণত ধৈর্যের পরিচয় দেন। কিন্তু তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে যখন চাঁদাবাজিটা মাত্রাতিরিক্ত হয়, অযৌক্তিক হয় কিংবা ন্যায় সঙ্গত না হয়। নৌপথে আপত্তিকর চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সম্প্রতি মতলব উত্তরে নৌযান শ্রমিকদের পিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে এক ব্যক্তি। কতোটা অতিষ্ঠ হলে নৌযান শ্রমিকরা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে সেটা ধারণা করতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে নৌপথে চলে এই চাঁদাবাজি।
|আরো খবর
চাঁদপুর জেলার নৌপথকে মেঘনার পাশাপাশি ডাকাতিয়াও সমৃদ্ধি দিয়েছে। ডাকাতিয়া নদীতে চাঁদাবাজিটা মেঘনার মতো আলোচিত হয় না। কারণ এ নদীটি অপ্রশস্ত এবং দুকূল অধিক জনঘনত্বে ভরপুর লোকালয় বেষ্টিত। এ নদীতে খুব বেশি নিরিবিলি পরিবেশে চাঁদাবাজির সুযোগ পায় না চাঁদাবাজরা। তবে বর্ষায় এ নদীটির কিছু এলাকা দুকূলপ্লাবী হলে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। এমন একটি এলাকা হচ্ছে নানুপুর-সাহেববাজার-পশ্চিম সকদী। চাঁদপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত এ এলাকাটিতে নৌ চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের কথা মাঝে মধ্যে শোনা গেলেও গণমাধ্যমে তেমন প্রকটভাবে আসে না। অথচ এই এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ে স্মারকলিপি পেশের সংবাদ অবশেষে প্রকটভাবেই এসেছে গণমাধ্যমে। গতকাল ১২ জুলাই চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘নদীতে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে ট্রলার মালিকদের স্মারকলিপি’।
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার নানুপুরের নিকটস্থ চরবাগাদীতে ডাকাতিয়া নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে পাম্প হাউজ অবস্থিত, সেখানে নেভিগেশন লক-গেট দিয়ে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট টোল ফি দিয়ে বিভিন্ন নৌযান যাতায়াত করে। এ ফি আদায়ে ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে মেসার্স ইমাম মাহাদী এন্টারপ্রাইজ। এই ইজারাদারের লোকজন উক্ত নেভিগেশন লক-গেট দিয়ে পারাপাররত নৌযান থেকে নির্দিষ্ট টোল আদায়ের কথা থাকলেও তারা পাম্প হাউজ থেকে এক কিলোমিটার দূরে পশ্চিম সকদী ও সাহেব বাজার পর্যন্ত মালামালবাহী নৌযানে ৭শ’ টাকা হারে টোল দাবি করে, যেটা চাঁদাবাজির নামান্তর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১১ জুলাই ট্রলার মালিকগণ পানি উন্নয়ন কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। এ প্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নেভিগেশন লক-গেট দিয়ে পারাপারে ইচ্ছুক নৌযান ছাড়া আশেপাশের কোনো নৌযান থেকে টোল আদায়ের অনুমতি আমরা ইজারাদারকে দেইনি। স্মারকলিপির আলোকে কমিটি গঠন করে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেবো।
আমাদের দেশে যে কোনো অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করে তদন্তের বিষয় উত্থাপিত হলে দীর্ঘসূত্রিতার আভাস মিলে। ট্রলার মালিকদের স্মারকলিপির আলোকে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কমিটি গঠনপূর্বক তদন্তের যে প্রক্রিয়া শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন, সেটি যেন গতানুগতিক দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পড়ে ভেস্তে না যায়। আমরা চাই, টোল আদায়ের নামে ইজারাদারের নৌ চাঁদাবাজি দ্রুত বন্ধ হোক।