প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
মেঘনায় দিবালোকে ডাকাতি প্রসঙ্গে
বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং এক বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চাঁদপুরের মেঘনা ও পদ্মা ছিলো বিপদসঙ্কুল নৌপথ। নৌবাহিনীর অভিযানে একদল নৌ ডাকাত হাতেনাতে ধরা পড়ার পর এই নৌপথে দিনে ও রাতে নৌযান চলাচল নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হয়ে উঠে। কিন্তু গত ২-৩ বছরে এই নৌপথে ডাকাতদের উপদ্রব বেড়েছে। এরা স্পীড বোট ও ডাবল ইঞ্জিনওয়ালা নৌকাযোগে ছোট লঞ্চ ও ট্রলারে ডাকাতি সম্পন্ন করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। কালেভদ্রে ২-১জন ধরা পড়লেও উক্ত নৌপথটি পুরোপুরি নিরাপদ হয়ে উঠছে না। এরা হাত পাকাতে পাকাতে কবে বড় লঞ্চে হানা দেয় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। কেননা লঞ্চগুলো এখন সশস্ত্র আনসার বাদ দিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তায় চলাচল করে।
|আরো খবর
গত ২-৩ বছরে চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর-সুরেশ^রসহ বিভিন্ন রূটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চে এবং বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী ও মালবাহী ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা তথা ট্রলারে ডাকাতরা দিনে ও রাতে আকস্মিকভাবে দুঃসাহসিক অভিযান চালাচ্ছে। তারা কম-বেশি পর্যবেক্ষণ তথা রেকির পর এ অভিযান চালাচ্ছে এবং সাফল্য খুঁজে পাচ্ছে। গত রোববার মুখোশধারী নৌডাকাতরা লাইফ জ্যাকেট পরে স্পীড বোটযোগে এসে মতলবের আমিরাবাদ থেকে চাঁদপুর অভিমুখী দুটি ট্রলারে সফল অভিযান চালায়। তারা বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন মেঘনা নদীর সফরমালী লঞ্চঘাট এলাকায় উক্ত দুটি ট্রলারে কাটা রাইফেল, শর্টগান, রামদা ও রড নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এরা সংখ্যায় মাত্র ৮-৯ জন হলেও নির্বিঘেœ যাত্রীদের নগদ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
চাঁদপুর নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান জানান, আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে চাঁদপুর সদর ও মোহনপুর নৌপুলিশের ওসিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরপর নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনকেও পাঠিয়েছি। ব্যবসায়ীদের হারানো মোবাইলগুলোর নম্বরসমূহ আমার কাছে চলে এসেছে। আমি সেগুলো দিয়ে ডাকাতদের ধরার বিষয়ে যা যা করণীয় তার সবটাই করছি। আশা করি ডাকাতদের ধরতে সক্ষম হবো। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন জানান, ডাকাতদের ধরার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল কাজই আমরা শুরু করে দিয়েছি। এ ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয়দের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে এতো টাকা নিয়ে নৌপথে মোকামে গেলে আমাদের সহযোগিতা নিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনের এ বক্তব্যের সাথে আমরা সহমত পোষণ করছি। লঞ্চ নয়, খোলা ট্রলারে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা মোকামে যাতায়াত করলে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবা দরকার। এজন্যে তারা নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাইতে পারে, যেহেতু এ দুটি বাহিনী নৌপথের নিরাপত্তা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় দায়িত্বপালন করছে। ‘কক্ষণো কিচ্ছু হয়নি এবং হবেও না’ এমন আত্মবিশ^াসে বিরাট অঙ্কের টাকা নিয়ে দিনে-রাতে কোনো যানবাহনেই যাতায়াত কোনো ব্যক্তির জন্যে সুখকর নয়। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুবিধাগ্রহণের বিষয়টি বিরাট অঙ্কের টাকা বহনকারীদের গুরুত্বের সাথে ভাবা দরকার বলে আমরা মনে করি।