রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

মুখলেসুর রহমান মুকুলের মৃত্যুতে শোক
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের এক ধ্রুবতারা ছিলেন মুখলেসুর রহমান মুকুল। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে তাঁর প্রতিভার আলোক বিচ্ছুরণে সমৃদ্ধ হয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গন, আর সংস্কৃতি কর্মীরা হয়েছে উজ্জীবিত। গীতিকার হিসেবে তিনি ছিলেন বহুল পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যে তিনি লিখেছেন অসংখ্য গান। আর সুর করেছেন তাঁরই প্রিয় বন্ধু চাঁদপুরে ‘সংগীত গুরু’ নামে অভিহিত শীতল ঘোষাল। স্বাধীনতার পর তিনি একে একে রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান, দেশাত্মবোধক গান ও আধুনিক গান। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও রচনা করেন একাধিক গান। এভাবে গান রচনা করে তিনি একজন সাড়া জাগানো গীতিকারে পরিণত হন। তাঁর লেখা গান গেয়ে শিশু-কিশোররা জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়। গীতিকার হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা এতোটাই তুঙ্গে উঠে যে, চাঁদপুরে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাঁর লেখা কোনো গান ছাড়া সম্পন্নই হতো না।

১৯৫৩ সালের ৩০ মে হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন ১১নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের কাঠালী গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুন্সি বাড়িতে মুখলেসুর রহমানের জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন খলিলুর রহমান ও মাতা জীবুন্নেছা বেগম। তিনি ছিলেন পিতামাতার চতুর্থ পুত্র। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি কবিতা, গল্প, ছড়া ও গান লেখা শুরু করেন। পড়ালেখায় মেধাবী হবার কারণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান এবং এম.এ. পাস করে ব্যবসার পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় মনোনিবেশ করেন। এক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষ প্রণোদনা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনির আহমেদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক সম্পাদক অজয় ভৌমিক, সংগীত গুরু শীতল ঘোষাল, কণ্ঠ শিল্পী চম্পক সাহা, গীতিকার হরিপদ চন্দ বুদা ও সাংবাদিক অজিত কুমার মুকুল। তাঁর রচিত গানগুলোর সুরকার শুধু শীতল ঘোষালই ছিলেন না, চম্পক সাহাও ছিলেন। তাঁর লেখা গান ভালো ভালো শিল্পীর কণ্ঠে বাংলাদেশ টেলিভিশনেও পরিবেশিত হয়েছে। এমন একজন হচ্ছেন চাঁদপুরের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পক।

চাঁদপুরের প্রসিদ্ধ সাংস্কৃতিক সংগঠন ললিত কলার সাধারণ সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন এবং সভাপতি পদে কিছুদিন দায়িত্বপালন করেন মুখলেসুর রহমান মুকুল। তিনি ও শীতল ঘোষাল ছিলেন ললিতকলার প্রাণ। শীতল ঘোষালের অকাল মৃত্যুতে তিনি বন্ধুহারা হয়ে পড়েন এবং অনাকাক্সিক্ষত কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। এক পর্যায়ে চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডস্থ বাসভবনে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। যার ফলে ২০১৮ সালে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষে লোক সংস্কৃতিতে প্রদত্ত সম্মাননাটুকু তিনি অনুষ্ঠানে এসে গ্রহণ করতে পারেননি। সেজন্যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ওই সম্মাননাটুকু তাঁর বাসায় শয্যাপাশে গিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেন। যে বিষয়টি গণমাধ্যমে খুব গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়।

মুখলেসুর রহমান মুকুল অসুস্থাবস্থাতেই তাঁর বাসায় নীরবে দিনাতিপাত করছিলেন। বছরের পর বছর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেবার প্রয়াসটুকু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি যেভাবে তুলে ধরছিলেন, সেটি ৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখের পর আর দেখা যায়নি। তিনি সর্বশেষ লিখেছেন, “গত চারদিন আমার শাশুড়ি মাসহ আমরা সবাই প্রচ- জ¦রে আক্রান্ত। সবাই দোয়া করবেন।” বস্তুত এ জ¦রের মধ্য দিয়েই তিনি মহামারী করোনায় আক্রান্ত হলেন। অবশেষে গত ১৭ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা মুখলেসুর রহমান মুকুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমাদের বিশ^াস, তিনি তাঁর গানগুলোর কালজয়ী আবেদনে শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরজীবী হয়ে থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়