প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আমরা জাতীয় সংগীতে যে কথাগুলো উচ্চারণ করি, সে কথাগুলো নিয়ে সবাই ভাবি না। কথাগুলো হচ্ছে : আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।/চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥/ওমা, ফাগুনে তোর আমার বনে ঘ্রাণে পাগল করে,/মরি হায় হায়রে-/ওমা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥/কী শোভা, কী ছায়া গো, কীর ¯েœহ কী মায়া গো-/কী আঁচল বিছায়েছো বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে/মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,/মরি হায় হায়রে-/মা, তোর বদলখানি মলিন হলে, ওমা, আমি নয়ন জলে ভাসি॥
বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জাতীয় সংগীতের উক্ত কথাগুলো বঙ্কিমীয় ভাষায় রচনা করেননি যে, যার পাঠোদ্ধার কষ্টকর। তিনি এতোটা সহজ-সাবলীল শব্দ চয়ন করেছেন, যে শব্দগুলো মূর্খ, অর্ধশিক্ষিত, শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত সকল শ্রেণীর মানুষের জন্যে বোধগম্য। অথচ অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন সংগীতের কথাগুলোর ন্যায় জাতীয় সংগীতের কথাগুলো গতানুগতিক ভঙ্গিতে আওড়ান, গভীর আত্মোপলব্ধির সাথে আওড়ান না। যার ফলে এমন মানুষের মাঝে গভীর বা নির্ভেজাল দেশপ্রেমের পরিবর্তে খ-িত দেশপ্রেম লক্ষ্য করা যায়। দেশের সুনাম ক্ষুণœ করা, দেশের বদনাম করা, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি বা বিকিয়ে দেয়ার দৃশ্যে এমন মানুষগুলো থাকে নির্বিকার।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের মধ্যকার টি-টুয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজ চলাকালে মাঠের দর্শকদের মধ্যে কিছু কুলাঙ্গার বাংলাদেশকে ‘আই লাভ পাকিস্তান’ লিখা গেঞ্জি (টি-শার্ট) ও প্লে-কার্ড ব্যবহার করতে দেখা যায়। এতে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন, এরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানিদের বর্বরতা হয়তো নাও দেখেতে পারে, কিন্তু বই-পুস্তক, পত্রিকাসহ গণমাধ্যমের মাধ্যমে অবশ্যই জানতে পেরেছে। তারপরও খেলার মাঠে শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন দেশ-বিরোধী অবস্থানে থাকার সামিল, যাদের আচরণ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাবিরোধী এ দেশীয় দোসর, আলবদর, আল শামস্ তথা রাজাকারদের ঘৃণ্য আচরণের নামান্তর।
চাঁদপুরের ইতিহাসের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তাঁর বক্তব্যে বার বার বলেন, একজন বাংলাদেশী জাতীয় সংগীতে গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ মনের গভীর থেকে উচ্চারণ করলে কখনও অন্য দেশ কিংবা দেশের শত্রুদের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। তিনি গত ১৪ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, জাতীয় সংগীতের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কথাটি শুধু মুখে নয়, অন্তরেও ধারণ করতে হবে। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য সকলের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ-এর প্রতি ভালোবাসাকে ছাপিয়ে কোনোভাবেই অন্য দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের মানসিকতা থাকবে না।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ কর্তৃক বারবার বলা কথাটি অবশ্যই সকলের ভেবে দেখা দরকার। তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো সহজ কথা সহজভাবেই বলেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, এভাবে সকলে বলতে পারে না। এ বলতে পারার মধ্যেও থাকতে হয় আন্তরিকতা। আমরা মনে করি, জেলা প্রশাসনের কথাটি ভেবে দেখার জন্যেও আন্তরিকতা প্রয়োজন। তাহলেই ভাবুকের আন্তরাত্মা জাগবে এবং ব্যক্তিচরিত্রে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসবে।