প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২১, ০০:০০
স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট নির্মাণে সরকারি বরাদ্দের পর্যাপ্ততা ছিলো না বললেই চলে। দেশ পুনর্গঠনে স্বাধীন দেশের মানুষ তাদের সবল দুটি হাত কাজে লাগিয়ে কতো কিছুই না করেছে। স্বেচ্ছাশ্রমে তারা দেশের আনাচে কানাচে বানিয়েছে অসংখ্য রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এমনকি কেটেছে খালও। চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তিতে সরকারের ডাকসাইটে আমলা ড. এম.এ. সাত্তার একাধিক রাস্তা বানিয়েছেন গ্রামবাসীকে স্বেচ্ছাশ্রমে উদ্বুদ্ধ করে। আশির দশক থেকে রাস্তা নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম ক্রমশ নির্বাসনে যেতে থাকে। কেননা, এ দশকে রাস্তা নির্মাণে দেশী-বিদেশী অনুদান পাওয়া যায় প্রচুর। নামকরা এনজিও’র মাধ্যমেও তৈরি হয় কিছু রাস্তা। রাস্তার দাপটে রেলপথের জৌলুস ও বিস্তার পর্যন্ত সঙ্কুচিত হয়ে যায়। রাস্তার উন্নয়নে চলতে থাকে মহাযজ্ঞ। হতে থাকে একের পর এক বড় বড় সেতু। সবশেষে বিদেশী অর্থায়ন ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু (সোয়া ছয় কিলোমিটার), যাতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০হাজার কোটি টাকা।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দেখা যাচ্ছে যে, বরাদ্দের অভাবে কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় অনেক রাস্তাই নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, সংস্কার, মেরামত করা যাচ্ছে না। চাঁদপুর জেলায় রয়েছে এমন কিছু রাস্তা যেগুলো যানবাহন চালকরা তাদের চলাচলের সুবিধার্থে স্বীয় চাঁদার অর্থে ক্ষুদ্র মেরামত/সংস্কার করে থাকে। কিন্তু চলতি বর্ষায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু রাস্তা চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়লেও করোনাজনিত লকডাউনের কারণে রিকশা ব্যতীত অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ থাকায় এসব রাস্তার ক্ষুদ্র মেরামতে চালকরা ভূমিকা রাখতে পারছে না। পরিণতিতে এসব রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলজিইডিও এসব রাস্তার চলাচল-উপযোগিতা রক্ষায় রাখতে পারছে না সময়োপযোগী ভূমিকা। এমতাবস্থায় কিছু সংগঠন এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে স্বস্তি ও আনন্দ সঞ্চারিত হয়েছে জনমনে।
চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় বাগানবাড়ি ইউনিয়নের কালিরবাজার প্রধান সড়ক চলতি বর্ষার বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান ও জনচলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন মেরামত না করায় সড়কের ঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় বন্ধু একতা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা নিজেরা চাঁদা তুলে ইট, রড, সিমেন্ট ও বালি ক্রয়পূর্বক ট্রাকে করে নিয়ে যায় এবং স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক মেরামত করে। একই কাজ করেছে হাইমচরের আরেকটি সংগঠন, যার নাম দক্ষিণ আলগী আদর্শ যুব সমাজ ও সুদীপ্ত সমাজ সেবা সংঘ। তারা দক্ষিণ আলগী গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলো মেরামত করে চলাচল উপযোগী করে তোলে।
নিঃসন্দেহে মতলব উত্তর ও হাইমচরের সংগঠনগুলো রাস্তা মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থ দিয়ে অনেক বড় কাজই করেছে। এজন্যে সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ ও প্রতিটি সদস্য অনেক অনেক ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বুঝিয়ে দিয়েছে, সময়োপযোগী কাজ কোন্টি এবং সে কাজ করতে গিয়ে কেবল সরকারের দিকে না তাকিয়ে কীভাবে স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা রাখতে হয়। এর পেছনে তাদের প্রদর্শনেচ্ছার চেয়ে কল্যাণবুদ্ধ মানসিকতাই বেশি কাজ করেছে বলে আমরা মনে করি।