প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
কিছুদিন আগে ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই উৎকট আনন্দ প্রকাশ করেছে এবং কেউ কেউ পরিহাসও করেছে। মৃত্যুর মিছিল এবং অক্সিজেন সঙ্কটে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিপর্যয়ের চিত্র দেখে বাংলাদেশ তারচে’ ভালো অবস্থানে আছে বলে অনেকেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছে। সরকার ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছিলো খোশ মেজাজে। এতোটুকু ব্যবস্থায় করোনার ভয়ঙ্কর রূপ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে তেমন বিস্তার ঘটাতে পারবে না বলেই তাদের ধারণা ছিলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র অনুধাবন করার প্রয়াস চালিয়েছেন বলে লক্ষ্য করা যায়নি। আমাদের বিদ্যমান জনবল ও নানা সঙ্কটেও সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের মাধ্যমে করোনাজনিত স্বাস্থ্য সেবা আরো উন্নত করার যে সম্ভাবনা ছিলো সেটি কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাজে লাগানো হয়নি। ফলস্বরূপ যা হবার তা-ই হয়েছে। করোনার দ্বিতীয়/তৃতীয় ঢেউয়ে আইসিইউ, অক্সিজেন, বেডসহ নানা সঙ্কটের চিত্র প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। গত ক’দিনে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ’ মৃত্যু এবং সংক্রমণ দশ সহস্রাধিক ছাড়িয়েছে। অগ্যত্যা সরকার কঠোর লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ শেষ না হতেই আরেক সপ্তাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের সাথে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি এবং তাদের উপস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রতিদিন পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
করোনায় কর্মহীনদের জন্যে সরকার খাদ্য সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসলেও বিত্তবান চিত্তবান মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিরা তাদের হাত গুটিয়ে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে বর্তমানের চেয়ে করোনার প্রকোপ অনেক কম থাকলেও সরকারের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিত্তবান মানুষ শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, স্বাস্থ্য উপকরণ নিয়ে অনেক বেশি এগিয়ে এসেছিলো। ফলে করোনাকেন্দ্রিক ত্রাণ তৎপরতার হিড়িক পড়ে গিয়েছিলো। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এই যে, এবার এমন হিড়িক যেমন নেই, তেমনি মানুষের মাঝে করোনা আতঙ্ক ও সচেতনতা পূর্বের ন্যায় নেই।
এমন কঠিন বাস্তবতায় করোনা রোগীদের জন্যে অক্সিজেন সেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি সেবামূলক সংগঠন। এ সংগঠনটির নাম ‘সোশ্যাল এইডার ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’। গত ১৩ এপ্রিল ২০২১ রাজধানী ঢাকাতে নিজেদের অর্থায়নে ৪টি সিলিন্ডার ক্রয়ের মাধ্যমে সংগঠনটি অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে। বর্তমানে তাদের সিলিন্ডারের সংখ্যা দশের অধিক। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া এ সংগঠনটির কার্যক্রম দেশের পাঁচটি জেলায় চলমান। এর মধ্যে চাঁদপুরও রয়েছে। অক্সিজেন সেবা ছাড়াও এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি শীতবস্ত্র, শিক্ষা উপকরণ, ঈদ সামগ্রী, খাদ্য সামগ্রী, হুইল চেয়ার, চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, এতিম শিশুদের ইফতার করানোসহ পবিত্র কোরআন শরীফ প্রদান, আর্থিক অনুদান প্রদান, মাস্ক বিতরণের কাজও করছে।
করোনার ভয়াবহ সংক্রমণকালে ‘সোশ্যাল এইডার ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে’র অক্সিজেন সেবা খুবই ক্ষুদ্র হতে পারে, তবে বেসরকারি ত্রাণ সঙ্কট বিবেচনায় মনে রাখার মতো কাজ। সর্বোপরি করোনা রোগীদের পাশে দুর্দিনের বন্ধু হওয়ার মতো মহতী উদ্যোগ। সামর্থ্যবান অন্য অনেকেই যখন হাত গুটিয়ে রেখেছে, তখন ক্ষুদ্র ও সীমিত সামর্থ্যরে উক্ত সংগঠনের এ উদ্যোগটি প্রশংসাব্যঞ্জক বলেই মনে হচ্ছে। আকাশ ভেঙ্গে পড়ার গুজবে ক্ষুদ্র চড়ুই পাখি দুটি পা উপরে দিয়ে এই ভাঙ্গন ঠেকাবার যে ব্যর্থ প্রয়াসের কথা ভেবেছে, উক্ত সংগঠনের অক্সিজেন সেবাকে তেমনটি ভাবার অবকাশ নেই। কেননা এতে কিছু প্রাণ হলেও রক্ষা পাবে।