প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়ার পাড়ে ওয়াকওয়ে!
এক সময় নদী ও খালের ওপর চাহিদানুযায়ী সেতু নির্মাণে আমাদের সরকারের আর্থিক সামর্থ্য ছিলো না। চীন ও জাপানের সহযোগিতা নিয়ে নদীর ওপর করতে হয়েছে মৈত্রী সেতু। আজ সরকারের সামর্থ্য এতোটা বেড়েছে যে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে অপ্রয়োজনীয় সেতু রাস্তাবিহীন পাহাড়ের ভেতর, খালবিহীন মাঠের মাঝখানে, বাড়ির পেছনে সড়কবিহীন ডোবার ভেতর পর্যন্ত নির্মাণের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এটাতো নেতিবাচক খবর। আর ইতিবাচক খবর হচ্ছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের যে নদী বা খালের ওপর সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা, চাহিদা ও দাবি উত্থাপিত হচ্ছে, সেখানে ক্রমশ সেতু নির্মিত হচ্ছে। একজন শিশুর চিঠিতে উদ্বুদ্ধ হয়েও প্রধানমন্ত্রী সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছেন। স্মরণাতীতকালের ইতিহাসে সবচে’ বড় কথা হচ্ছে এই যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল ও দুঃসাহসে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী পদ্মার ওপর দেশের সর্ববৃহৎ বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ এখন সমাপ্তির পথে।
|আরো খবর
প্রধানমন্ত্রীর নজর এখন নদীরক্ষা, নদী শাসন, নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের দিকে। গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় তিনি ঢাকার চারপাশে নদীর তীরে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্যে ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার আলোকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোঃ মামুন-আল-রশিদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আমাদের নদীর তীরগুলো অব্যবস্থাপনার কারণে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চলে যায়। যার কারণে নদীর নাব্যতার ক্ষতি হয়। আমরা যদি সেখানে পিলার করে ওয়াকওয়ে করে দিতে পারি, তাহলে নদীর ৩০-৪০ ফুট জায়গা বেঁচে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার রেশ কাটতে না কাটতেই চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়ে গত ৪ ডিসেম্বর ২০২১ শনিবার ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকা (চাঁদপুর-৫)-এর জাতীয় সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধকালীন ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। ছিখটিয়া ব্রিজ হতে সূচিপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত ডাকাতিয়ার দু কিলোমিটার তীরে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হবে আগামী এক বছরে। এই ওয়াকওয়ের পাশে রেস্টুরেন্ট, বসার স্থানসহ বিনোদনের জন্যে থাকবে আকর্ষণীয় অনেক কিছু এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, আগামীতে নদীকেন্দ্রিক চাঁদপুরে আরো উন্নয়ন করা হবে। তাঁর এ বক্তব্য আশাব্যঞ্জক।
শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়ার তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের সংবাদ নিঃসন্দেহে চাঁদপুর জেলাবাসীর জন্যে যেমন আনন্দের, তেমনি বিস্ময়েরও। কেননা এই ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে শাহরাস্তির পর্যটন-গুরুত্ব বেড়ে যাবে। নদীর সৌন্দর্য দেখার জন্যে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেডে পর্যটকদের চাপ কমবে এবং শাহরাস্তিতে পর্যটকদের আনাগোনায় এখানকার দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। আমরা যথাসময়ে উক্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ সমাপ্তির জন্যে এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।