প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
শিকলে বাঁধা জীবনে বন্দি হাফেজ আবদুল খালেক
মৃত্যুর পর হাফেজ সন্তানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়ানো হবে। আবার হাফেজ হয়ে পবিত্র কোরআনের আলোয় নিজ পরিবারের পাশাপাশি এলাকাকে আলোকিত করবে এমন চিন্তায় সন্তানকে হাফেজী পড়ানোর মাধ্যমে হাফেজ বানাতে সক্ষম হলেও তাতে বাধ সেজেছে নিয়তি। হাফেজ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলে বাঁধা জীবন কাটাচ্ছে সেই হাফেজ আবদুল খালেক। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাবন করতে হচ্ছে এই কোরআনের হাফেজকে।
|আরো খবর
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে আব্দুল খালেক (৩৫)-এর করুণ কাহিনী এটি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর পর হাফেজ সন্তানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়াবে এমন চিন্তায় ভোটাল গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ইচ্ছায় উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় হাফেজী পড়া শুরু করে আব্দুল খালেক। পড়াশোনায় সে খুব মনোযোগী ছিলো। কিন্তু হাফেজি পড়া শেষ করার পর কয়েক মাসের মধ্যে সে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা করানো হলেও বর্তমানে বসত ঘরের সঙ্গে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
আবুদল খালেকের মা শামসুন নাহার জানান, মৃত্যুর পর হাফেজ সন্তানের ইমামতিতে জানাজার নামাজ পড়ানো হবে। আবার হাফেজ হয়ে পবিত্র কোরআনের আলোয় নিজ পরিবারের পাশাপাশি এলাকাকে আলোকিত করবে এমন চিন্তায় ছেলে আব্দুল খালেককে হাফেজী পড়তে দেন তার পিতা। কিন্তু হাফেজ হলেও সে গত ১৫ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলেন। বিভিন্ন সময় এদিক সেদিক চলে যায়, পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ তাকে দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্যে তাকে ঘরে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেন মা।
তিনি বলেন, রাতে ছেলের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ছেলের এমন অবস্থায় মা হয়ে আমি নিজেও সারারাত ঘুমাতে পারি না। কারণ কখন সে কী করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আমি গরিব মানুষ। আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করতেন, ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সম্পত্তি বিক্রি করেও তার চিকিৎসা করানো হয়েছে। তার বাবাও কয়েক বছর আগে মারা যান। বর্তমানে ঠিকমতো সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, ছেলের চিকিৎসা করবো কীভাবে? এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শামসুন নাহার ছেলের চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহ্তামিম হাফেজ মহসিন মিয়া জানান, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো। সে অসুস্থ হওয়ার পর আমরা মাদ্রাসায় আমাদের তাওফিক অনুযায়ী দোয়া আয়োজন করেছি। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে, বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। তাকে সুস্থ করার জন্য আল্লাহর রহমতের পাশাপাশি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গনি বাবুল পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন আবদুল খালেকের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার চেষ্টা করবো।