প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২১, ০০:০০
লকডাউন শতভাগ কার্যকরে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ দরকার
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচে’ খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক মৃত্যু এবং আট হাজারের অধিক সংক্রমণে গত ১ জুলাই থেকে সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধি নিষেধ তথা সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি মাঠে নেমেছে। সাথে তো প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রয়েছেনই। পূর্বের লকডাউনের চেয়ে এবারের লকডাউনে ঢিলেঢালা ভাব তুলনামূলকভাবে অনেক কম। লকডাউন কার্যকরে গলদঘর্ম সংশ্লিষ্ট সকলে। সরকার তার প্রশাসন যন্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশি কাজে লাগিয়ে এই লকডাউন কার্যকরে অধিক মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে সরকারের কাক্সিক্ষত মনোযোগ যে নেই, সেটা ধরে নেয়া যায়। কেননা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ কোনো নির্দেশনা চোখে পড়ছে না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে দুর্বিপাকে শাসক দল তথা সরকারি দল ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে এগিয়ে আসে, করোনা প্রতিরোধে সেভাবে এগিয়ে আসার আলামত সাধারণের চোখে তেমন পড়ছে না।
|আরো খবর
স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তারাই কেবল মাঠে আছেন করোনা প্রতিরোধে। সরকার এঁদের ওপরই বেশি আস্থা রাখছে। এঁদের পাশাপাশি সহায়ক শক্তি হিসেবে জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মাঠে নামাটাকে আবশ্যকীয় কর্তব্যের আওতায় আনার বিষয়টিকে সম্ভবত গুরুত্বের সাথে ভাবছে না। তারপরও ২-৪ জন জনপ্রতিনিধি মাঠে নামছেন বলে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা গেছে। এটা তারা সরকারি তাগিদ বা নির্দেশনার বাইরে স্বীয় কর্তব্য থেকে করছে বলে ধারণা করা যায়।
সচেতন, পর্যবেক্ষক ও অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, লকডাউন শতভাগ কার্যকরে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কমিউনিটি লিডার তথা সুধীজন, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় নেতাদের একাত্ম হয়ে যাবার অনিবার্যতা রয়েছে। এই অভিমতকে যদি সরকার গুরুত্ব দিতে না চায়, তাহলে সূক্ষ্ম বা তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের বিষয়টিতে মনোযোগী হতে হবে বলে অনেকেই ভাবছেন।
ইসলাম ধর্ম মতে, সবচে’ উৎকৃষ্ট জায়গা হচ্ছে মসজিদ এবং নিকৃষ্ট জায়গা হচ্ছে বাজার। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতের সময় এবং বাজারে ভোর থেকে মধ্যরাত (লকডাউন চলাকালে নির্দিষ্ট সময়সীমায়) ক্রেতাদের কম-বেশি ভিড় লেগেই থাকে। এ দুটি জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা সবচে’ কম দেখা যায়। অনেক মসজিদে ইমাম সাহেবকেই মাস্ক পরতে দেখা যায় না, আর বাজারে বিক্রেতা বা দোকানদারদের অধিকাংশকেই নাকের নিচে, থুতনির কাছে মাস্ক ঝুলিয়ে মাস্ক পরার অভিনয় করতে দেখা যায়। পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কেউ দেখতে আসলেই এরা মাস্কটিকে নাকের উপরিভাগে টেনে নিয়ে যায়। এমনটি করোনা প্রতিরোধে নিশ্চিতভাবে কার্যকর নয়।
মসজিদ, বাজারসহ যে কোনো ভিড়াক্রান্ত জায়গায় তীক্ষ্ণ বা সূক্ষ্ম নজরদারি না করলে কিছু বেপরোয়া মানুষকে শায়েস্তা করা যাবে না বলে আমরা মনে করি। লকডাউন কার্যকরে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে একাকী বা ছদ্মবেশে কাউকে না কাউকে ভিড়াক্রান্ত জায়গা পর্যবেক্ষণে বার বার পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানায় গরমিল দেখলেই প্রথমত সতর্ক করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়া কিছু বেপরোয়া মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানো যাবে বলে আমরা মনে করি না। সোজা আঙ্গুলে যেমন ঘি উঠে না, বাঁকা করতে হয়, তেমনি এমন বেপরোয়া মানুষগুলোর জন্যে বাঁকা চোখ ও কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি বলে আমরা মনে করি।