প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১৫
আজ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস
১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। ১৯৮৯ সাল থেকে অক্টোবরের দ্বিতীয় বুধবার এই দিন উদযাপন শুরু হয়।পরে ঠিক করা হয় । দুর্যোগ কমানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে দিবসটি প্রতিবছর অক্টোবরের ১৩ তারিখে দিনটি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।
|আরো খবর
এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় “মুজিব বর্ষের প্রতিশ্রুতি, জোরদার করি দুর্যোগ প্রস্তুতি”। দুর্যোগ প্রস্তুতিই আমাদের দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে । ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রান নির্ভর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আগাম সর্তকবার্তা প্রচারের ব্যবস্থা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ত্রাণ নির্ভর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে দুর্যোগে পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্যারাডাইম শিফটের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২, দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি ২০১৯, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৫ ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ তৈরী হয়েছে যার আওতায় বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে । দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল তা আমরা সাম্প্রতিক সময়ের দুর্যোগ ও পূর্ববর্তী দুর্যোগে আহত/নিহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র বিশ্লেষন করলেই বুঝতে পারি ।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম : ভোলা সাইক্লোন
সংঘটিত হওয়ার সময়কাল : ১২-১৩ নভেম্বর, ১৯৭০
গতিবেগ কি:মি:/ঘন্টা : ২২৪ কিলোমিটার/ঘন্টা
নিহতের সংখ্যা : ৫,০০০০০ জনঘূর্ণিঝড়ের নাম : ঘূর্ণিঝড় গোর্কি
সংঘটিত হওয়ার সময়কাল : ২৯-৩০ এপ্রিল, ১৯৯১
গতিবেগ কি:মি:/ঘন্টা : ২২৫ কিলোমিটার/ঘন্টা
নিহতের সংখ্যা : ১,৩৮,০০০ জনঘূর্ণিঝড়ের নাম : ঘূর্ণিঝড় সিডর
সংঘটিত হওয়ার সময়কাল : ১৫ নভেম্বর, ২০০৭
গতিবেগ কি:মি:/ঘন্টা : ২২৩ কিলোমিটার/ঘন্টা
নিহতের সংখ্যা : ৩৪০৬ জনঘূর্ণিঝড়ের নাম : ঘূর্ণিঝড় আইলা
সংঘটিত হওয়ার সময়কাল : ২৫ মে, ২০০৯
গতিবেগ কি:মি:/ঘন্টা : ১১০ কিলোমিটার/ঘন্টা
নিহতের সংখ্যা : ১৯০ জনএকই ক্যাটাগরীর ঘূর্ণিঝড় ভোলা সাইক্লোনে যেখানে ১৯৭০ সালে মৃতের সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ (কেউ কেউ বলেন ১০ লক্ষ্) সেখানে ২০০৭ সালে ঘূর্নিঝড় সিডরে মৃতের সংখ্যা ৩৪০৬ জন। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ যার মূল প্রতিপাদ্য “সকল প্রকার প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দুর্যোগ সহনশীলতা অর্জন (winning resilience against all odds)”এর অন্যতম কয়েকটি লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে মৃত ও নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা প্রতি লাখে ০.২০২৫ জনে কমিয়ে আনা; দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা প্রতি লাখে দুই হাজার নামিয়ে আনা; ১লাখ একর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ কমিয়ে আনা; জিডিপির অনুপাতে দুর্যোগের ফলে সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ০.৭%এর মধ্যে রাখা ।
এই লক্ষমাত্রা অর্জন করতে হলে দুর্যোগের সঠিক পূর্ব প্রস্তুতির বিকল্প নেই। এছাড়া দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের লক্ষে সেন্দাই কর্মকাঠামো ২০১৫-২০৩০, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের নিমিত্ত দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান, প্রযোয্য ক্ষেত্রে নীতি/পরিকল্পনা পরিমার্জন এবং দুর্যোগে কার্যকর সাড়াদানের জন্য প্রস্তুতি শক্তিশালীর করার মাধ্যমে আজকের দিবসের প্রতিপ্রাদ্যকে প্রকৃত অর্থে রূপদান করতে পারবো যা ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
লেখক পরিচিতি মো:রেজাউল করিম
জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, নারায়নগন্জ
দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা অধিদপ্তর