প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৬
স্মৃতি থেকে ঘটনা মুছে যাবার আগেই মামলার রায়!

চঁাদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোড-খান সড়ক এলাকায় জুয়া খেলায় হেরে পার্টনার রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যার অপরাধে মো. খোরশেদ আলম (২৭) নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে চঁাদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ সামছুন্নাহার এই রায় দেন। আসামীর উপস্থিতিতে এ রায় দেয়া হয়। হত্যার শিকার রেহান উদ্দিন মিজি শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার দক্ষিণ তারাবুনিয়ার বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে চঁাদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোড-খান সড়কের তামান্না শারমীন ভিলার তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। তিনি পেশায় ছিলেন ড্রেজার ব্যবসায়ী। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খোরশেদ আলম পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শেফালী পাড়া জোর ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোস্তফা ভূঁইয়ার ছেলে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার রেহান উদ্দিন মিজির সাথে আসামি খোরশেদ আলমের জুয়া খেলা নিয়ে পরিচয় হয়। তারা ক’জন মিলে জুয়া খেলতো। তার ধারাবাহিকতায় খোরশেদ বেশ ক’বার রেহানের কাছে জুয়া খেলায় হেরে যায়। যে কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনার দিন (২০২১ সালের ২৩ জুন) দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে রেহান উদ্দিনের ভাড়া বাসায় জুয়া খেলতে এসে পরিকল্পিতভাবে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। ওই দিন পারিবারিক কাজে রেহান উদ্দিনের স্ত্রী পারভীন বেগম সখিপুর নিজ এলাকায় ছিলেন। দুপুরে স্বামী রেহানকে ফোনে না পেয়ে পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মরিয়ম বেগমকে দেখার জন্যে বলেন রেহানের স্ত্রী। তিনি বাসার দরজা খোলা পান এবং দেখেন রেহান উদ্দিন বিছানায় উপুড় হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন তিনি চিৎকার দেন এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে রেহান উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার ২দিন পর ২৫ জুন চঁাদপুর সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা করেন হত্যার শিকার রেহান উদ্দিনের স্ত্রী পারভীন বেগম। মামলা দায়েরের পর পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামী খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে এবং ১ জুলাই তাকে চঁাদপুর আদালতে সোপর্দ করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চঁাদপুর সদর মডেল থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক এনামুল হক চৌধুরী মামলাটি তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ অক্টোবর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট কোহিনুর বেগম বলেন, মামলাটি চলমান অবস্থায় আদালত ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। সাক্ষ্য, প্রমাণ, মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা ও আসামী নিজে অপরাধ স্বীকার করায় বিচারক আসামীর উপস্থিতিতে এই রায় দেন।
আমাদের দেশে বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ড ছাড়া অন্যান্য হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলার রায় দ্রুত দেয়ার ঘটনা বিরল। চঁাদপুর শহরে ড্রেজার ব্যবসায়ী রেহান উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুব বেশি আলোচিত ছিলো না খুনি ও খুনের শিকার দু ব্যক্তি অস্থানীয় হবার কারণে। তারপরও হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের আশাব্যঞ্জক সাফল্য ও কম সময়ে চার্জশীট দাখিলের কারণে মামলাটির কার্যক্রমে গতিশীলতা ছিলো নিশ্চয়ই। এছাড়া সাক্ষীদের উপস্থিতি সহ অন্যান্য আনুকূল্য যথাযথ ছিলো বলে মামলার রায়টি তুলনামূলক দ্রুত সময়ে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সাধারণত গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শকদের মন থেকে কোনো ঘটনা বহুলাংশে মুছে যাবার পরই সে ঘটনা সংক্রান্ত মামলার রায় হয়। নিশ্চয়ই মামলাজট সহ অনিবার্য কোনো কারণে। এমতাবস্থায় রেহান উদ্দিন হত্যা মামলার রায় পাঠক/দর্শকদের মন থেকে মুছে যাবার আগেই হয়েছে, যেটা সন্তোষজনক। যেজন্যে এ মামলার বিজ্ঞ বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।







