প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৪
বিশ্বাস, মুনাফা আর রাজনীতির ঘোরে প্রবীণ জীবন

প্রবীণ জীবনে নেশা শুধু মাদক নয়, বিশ্বাস, ধন আর দলের ঘোরও হতে পারে এক মানসিক আসক্তি। জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে কেউ গভীর ধর্মীয় ভাবনায় ডুবে যান, কেউ নতুন ব্যবসা বা বিনিয়োগে ঝোঁকেন, আবার কেউ সকাল-বিকেল রাজনৈতিক আলোচনায় মত্ত থাকেন। এসব প্রবণতা একদিকে সময় কাটানোর উপায়, অন্যদিকে মানসিক স্থিতি নষ্টের কারণ হয়ে উঠে।
|আরো খবর
প্রবীণ বয়সে মৃত্যু ও পরকালের ভাবনা মানুষকে ধর্মীয় চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে, যা ইতিবাচক ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু কারও কারও মধ্যে বিশ্বাসের তীব্রতা এমন মাত্রায় পৌঁছায় যে, তাঁরা অন্যের ধর্মকে তুচ্ছ করে দেখতে শুরু করেন। কেউ আবার নিজের মতবাদে অন্যকে টানার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় ধর্ম হয়ে উঠে আধ্যাত্মিক প্রশান্তির বদলে তর্ক-বিতর্কের ক্ষেত্র। ফলে পরিবারে ও সমাজে দূরত্ব বাড়ে, মানসিক শান্তি হারিয়ে যায়।
সমাধান একটাই সহনশীলতা। ধর্মকে আত্মশুদ্ধির পথ হিসেবে দেখা, অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করা এবং প্রচারের চেয়ে অনুশীলনে গুরুত্ব দেওয়া।
মুনাফা ও সম্পদের নেশায়
অবসরের পর অনেক প্রবীণ সময় কাটাতে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা বা শেয়ার বাজারে যুক্ত হন। কেউ উত্তেজনার খোঁজে, কেউ সাফল্যের প্রমাণ দিতে গিয়ে অযথা ঝুঁকি নেন। অর্থ হারালে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, আত্মসম্মানও আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
এ পর্যায়ে দরকার আর্থিক সতর্কতা। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সীমিত বিনিয়োগ করা এবং সম্পদের চেয়ে অভিজ্ঞতার বিনিয়োগে মনোযোগী হওয়া, তরুণ উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেওয়া বা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হওয়া হতে পারে এক অর্থবহ বিকল্প।
রাজনীতির তর্কে নিমজ্জিত জীবন
রাজনীতি প্রবীণদের জীবনের এক আকর্ষণীয় ক্ষেত্র। কে ক্ষমতায় যাবে, কার দল ভালো—এসব নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা আলোচনা চলতে থাকে। অনেক প্রবীণ নিজের জীবনে রাজনৈতিক সুবিধা না পেলেও বিশেষ দলের প্রচারে আগ্রহী থাকেন। এতে মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে বটে, কিন্তু মানসিক স্থিরতা নষ্ট হয়, পরিবারে বিভাজনও দেখা দেয়। রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ থাকা দোষের নয়, তবে তা যেন ইতিবাচক হয়—যেমন ভোটার সচেতনতা, প্রবীণ কল্যাণ বা স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া।
প্রবীণ জীবনের পথনির্দেশ
ধর্ম, মুনাফা ও রাজনীতি এই তিন ক্ষেত্রই প্রবীণ জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। তবে এদের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তা হয়ে উঠে বিভ্রান্তি ও একাকীত্বের উৎস।
প্রবীণ বয়সে তাই দরকার আত্মসমালোচনার ক্ষমতা, যুক্তিবোধ ও সহিষ্ণু মনোভাব। অতিরিক্ত বিশ্বাস নয়, ভারসাম্যই শান্তি আনে।
প্রবীণ জীবনের আসল নেশা হওয়া উচিত জ্ঞানে, মানবিকতায় ও প্রশান্তিতে। এই নেশাই মানুষকে ভেতর থেকে আলোকিত করে—যেখানে সে নিজের আলোয় জেগে থাকে, অন্যকে অন্ধকারে ঠেলে না দিয়ে।







