প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৩:৪৭
প্রসঙ্গ ‘শিল্পনন্দন’ এবং প্রতিযোগিতামূলক সাহিত্যচর্চা

চাঁদপুরে সাহিত্য সংগঠন ‘শিল্পনন্দন’-এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৪ জুলাই ২০২২ তারিখে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি চঁাদপুরের লেখকদের বইয়ের প্রমোশন ও পাঠকের হাতে পেঁৗছাতে নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সৃষ্টিশীলতায় উদ্বুদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সংগঠনের স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে ‘শিল্পে সৌন্দর্য, সৃষ্টিতে আনন্দ’। শনিবার (৮ নভেম্বর ২০২৫) সাহিত্য একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঘোষিত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন : সভাপতি মোরশেদা খানম বেবী, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও দেওয়ান মাসুদ রহমান, সাধারণ সম্পাদক এইচএম জাকির, সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস ও জিহাদ সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান শাকির ইমরু, অর্থ সম্পাদক আবু বকর বিন ফারুকী, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন, প্রকাশনা সম্পাদক আজম পাটওয়ারী, আয়োজন সম্পাদক সালাউদ্দিন হাজরা, সাহিত্য সম্পাদক সজীব খান, সংস্কৃতি সম্পাদক ইসতিয়াক সৈকত, পাঠচক্র সম্পাদক খাইরুল আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মাসুদ হোসেন, আবৃত্তি সম্পাদক সামিরা মেহনাজ নুসরাত, কার্যনির্বাহী সদস্য উজ্জ্বল হোসাইন, নূরুল ইসলাম ফরহাদ, নূরে আলম, মুহাম্মদ হানিফ, এমআরএম শোভন, মারিয়া আক্তার অনুপমা, তাসফিয়া ইসলাম, মুসলিম হোসেন ও মো. আবুল হাসেম সাহরীয়ার স্বপন। আজীবন সদস্য মির্জা জাকির, গিয়াস উদ্দিন মিলন, সোহেল রুশদী, জসীম মেহেদী, শরীফ হোসাইন ও মো. সাইফুল ইসলাম সুমন। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন : মইনুদ্দিন লিটন, ইলিয়াস ফারুকী, ড. নিলুফা আখতার ও কাজী নজরুল ইসলাম।
|আরো খবর
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এইচএম জাকির জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্পনন্দন চঁাদপুরের লেখকদের বইয়ের পাঠক সৃষ্টিতে কাজ করেছে, আগামীতেও অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি এটি অব্যাহত থাকবে। শিল্পনন্দন সাহিত্য অঙ্গনে পাঠক ও লেখক সৃষ্টিসহ সৃজনশীলতার বিকাশে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন নবগঠিত কমিটির সভাপতি মোরশেদা খানম বেবী। সভাপতি জানান, শিল্পনন্দন চঁাদপুরের সাহিত্য অঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। নবগঠিত কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাহিত্যচর্চার পরিসর আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তরুণ লেখক-পাঠকদের সৃষ্টি-উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। খুব দ্রুতই একটি বর্ণিল অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলতে চাই। চঁাদপুরের শিল্প-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।”
‘শিল্পনন্দন’ সাহিত্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে চঁাদপুরের বিদ্যমান সাহিত্যচর্চাকে আরো বেগবান করার জন্যে খুবই ইতিবাচক। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে চঁাদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৌম্য সালেকের উদ্যোগে সাহিত্য একাডেমি, চঁাদপুর-এর তৎকালীন কমিটির আন্তরিক সাড়ায় একাডেমিতে মাসিক সাহিত্য আড্ডা চালু হবার পরই চঁাদপুর শহরে সাহিত্যচর্চায় পুনর্জাগরণ ঘটে। একাডেমির নিজস্ব সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি সাহিত্য আড্ডায় অংশগ্রহণকারীদের বই, লিটল ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশসহ সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন হতে থাকে। সাহিত্য একাডেমি প্রথমে জাতীয় মানের সাহিত্য সম্মেলন করে কয়েক দশকের জড়তা ভাঙ্গে। তারপর সাহিত্য একাডেমির মাসিক সাহিত্য আড্ডার আড্ডারুদের দ্বারা গঠিত চঁাদপুর সাহিত্য মঞ্চ একের পর এক সাহিত্য সম্মেলন ও সাহিত্য পদক প্রদান করে চলছে। সাহিত্য একাডেমির আড্ডারু, বিশিষ্ট লেখক ও আইনজীবী রফিকুজ্জামান রনির চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি প্রায় প্রতি বছর দেশের প্রখ্যাত লেখকদের জানাচ্ছে সম্মাননা ও করছে বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠান। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন বঁাশি স্মৃতি সংসদ করেছে একাধিক ছড়া উৎসব। চঁাদপুর লেখক পরিষদের সক্রিয়তা ও জাতীয় সাহিত্য পরিষদ চঁাদপুর জেলা শাখার কার্যক্রমও ছিলো লক্ষণীয়। আর সব্যসাচী লেখক ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার একের পর এক প্রকাশনা ও ঋদ্ধ লেখক সৌম্য সালেকের লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও নিজের বই প্রকাশনা, এগুলোর প্রকাশনা উৎসব ও পাঠ পর্যালোচনা এবং অন্যান্য সাহিত্য আড্ডারুদের প্রকাশনায় চঁাদপুরের সাহিত্য অঙ্গন ক্রমশ সরগরম হতে থাকে।
অতি সম্প্রতি সাহিত্য একাডেমির সাহিত্য আড্ডার আড্ডারু, বিশিষ্ট লেখকদ্বয় ম. নূরে আলম পাটোয়ারী ও সুমন কুমার দত্তের নেতৃত্বে গঠিত চঁাদপুর সাহিত্য পরিষদ নানা কার্যক্রমে চঁাদপুরের সাহিত্যচর্চাকে বেগবান করেছে। একাডেমির ক’জন সক্রিয় ও নিবেদিতপ্রাণ আড্ডারু মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, মাইনুল ইসলাম মানিক ও কাদের পলাশ তঁাদের প্রকাশনা ও গবেষণায় এগিয়েছে অনেকদূর, আর ছোট-বড় পুরস্কারসহ নানা সাফল্যে নিজেদের ও চঁাদপুরকে করে চলছেন আলোকিত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সাহিত্য একাডেমির মাসিক সাহিত্য আড্ডার এ তিন আড্ডারু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যথাক্রমে সাহিত্য একাডেমির পরিচালক ও মহাপরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে একাডেমির নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রবীণ লেখক আব্দুল্লাহিল কাফী তঁার বন্ধ থাকা কবিতাপত্র ‘অভিষেকে’র পুনঃপ্রকাশ শুরু করেছেন এবং সরকারি চাকুরি থেকে তঁার অবসরগ্রহণোত্তর সময়টাকে সাহিত্যচর্চায় বেশ ভালোভাবেই কাটাচ্ছেন। নির্বাচিত নারী সদস্য নুরুন্নাহার মুন্নি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা শুরু করেছেন, একাধারে নিজের প্রকাশনায়ও অনেক মনোযোগী হয়ে আলোর মুখও দেখাচ্ছেন। এভাবে চঁাদপুর শহরে সাহিত্যচর্চায় রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। সাহিত্য একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত, নারীনেত্রী মোরশেদা খানম বেবীও চঁাদপুরে তঁার জন্মস্থানে সাহিত্য সংগঠনের কর্ণধার হবার তাগিদ অনুভব করে সদ্য গঠিত ‘শিল্পনন্দনে’র সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন। বিশিষ্ট সংগঠক ও লেখক এইচএম জাকিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মিসেস বেবী মূলত চঁাদপুরের সাহিত্য অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতেই এগিয়ে এসেছেন। তঁাকে আমরা স্বাগত জানাই। আর প্রত্যাশা করছি তঁার সংগঠন শিল্পনন্দনের টেকসই অস্তিত্ব। ‘শিল্পনন্দনে’র পর চঁাদপুরে যদি নূতন কোনো সাহিত্য সংগঠন জন্ম নেয়, তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছুই থাকবে না। কেননা চঁাদপুরে বর্তমানে চলছে সাহিত্যচর্চার এক স্বর্ণযুগ (২০১৪-২০২৫)।








