শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ যৌথ বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ৯০ যানবাহনে তল্লাশি।। ১২ মামলায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ গাড়ি জব্দ
  •   হরিণা থেকে দু মাদক ব্যবসায়ী আটক
  •   কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩৯ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৫

শিশুদের ধর্ম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

মুফতি মুহা. আবু বকর বিন ফারুক
শিশুদের ধর্ম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

শিশু হলো জাতির ভবিষ্যৎ, সমাজের আশা ও দেশের আগামী দিনের কর্ণধার। তাদের মাঝে লুকিয়ে আছে আগামী দিনের নেতৃত্ব, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রতিচ্ছবি। তাই শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা মানে এক জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। ইসলাম ধর্ম এই সত্যটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে শিশু কেবলমাত্র একটি জৈবিক সত্তা নয়, বরং এক মহান আমানত, যার শিক্ষা ও চরিত্র গঠন পিতা-মাতা, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর একটি গুরুদায়িত্ব।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি মানুষ ও পাথর।’ (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত ৬)

অর্থাৎ সন্তানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হলো তাদেরকে সঠিক ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা, আল্লাহভীতি ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া। কারণ, ইসলামী শিক্ষা মানুষের অন্তরে জাগ্রত করে ঈমান, চরিত্র, ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্ববোধ।

ইসলাম ধর্মে শিশুর মর্যাদা ও অধিকার

ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যা শিশুর জন্মের পূর্বেই তার অধিকার নির্ধারণ করেছে। কুরআনে গর্ভের সন্তানেরও নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন

প্রত্যেক শিশু ফিতরাত বা ইসলামী স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে; পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজক বানায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩৮৫)

এ হাদিসে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে, শিশুর জন্মগত স্বভাব ইসলামিক, কিন্তু তার চরিত্র ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে পিতা-মাতার শিক্ষার উপর। তাই প্রথম মাদরাসা হলো ঘর, প্রথম শিক্ষক হলো মা।

ইসলামে শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও মমতার নির্দেশ এসেছে বহুবার। নবী করিম (সা.) শিশুদের আদর করতেন, তাদের সঙ্গে খেলতেন, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তিনি বলেছেন যে, শিশুদের প্রতি দয়া করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩১৮)

এই দয়ার অন্যতম প্রকাশ হলো তাদেরকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করা, যা তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সফল করবে।

ইসলাম ধর্মে শিক্ষার গুরুত্ব

ইসলাম ধর্মে শিক্ষা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। প্রথম ওহিই শিক্ষা সম্পর্কিত ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আল-আলাক, আয়াত ১)

এ আয়াতে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনকে মানবজীবনের সূচনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইসলাম শিক্ষা দেয় জ্ঞান হলো আলোর উৎস, আর অজ্ঞতা অন্ধকারের প্রতীক। কিন্তু এই জ্ঞান যদি আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার সাথে যুক্ত না হয়, তবে তা বরং ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শিশুদেরকে শুধু দুনিয়াবি শিক্ষা নয় বরং ইসলামী জ্ঞানে শিক্ষিত করা অপরিহার্য।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও নারীর ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)

এখানে জ্ঞান বলতে কেবল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বা সাহিত্য নয়; বরং মূলত সেই জ্ঞান যা মানুষকে আল্লাহর পরিচয় করায়, হালাল-হারামের পার্থক্য শেখায়, এবং আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে।

শিশুদের শিক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব

শিশুর শিক্ষার সূচনা হয় পরিবার থেকে। কুরআন ও হাদীস পিতা-মাতাকে এই দায়িত্বের প্রতি কঠোরভাবে সচেতন করেছে। আল্লাহ বলেন- ‘তোমার পরিবারকে নামাজের আদেশ দাও এবং এতে ধৈর্য ধারণ করো।’ (সূরা ত্বাহা, আয়াত ১৩২)

এই আয়াত স্পষ্ট করে যে, সন্তানদের নামাজসহ ধর্মীয় দায়িত্বে অভ্যস্ত করা বাবা-মায়ের দায়িত্ব।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের আদেশ দাও, আর দশ বছর বয়সে তা না পড়লে শাসন কর।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)।

অর্থাৎ, ইসলামী শিক্ষা ও আমল শিশুর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত। পিতা-মাতার গাফলতি সন্তানকে পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেয়।

কুরআন-হাদীসের আলোকে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব

ইসলামী শিক্ষা শিশুদের মধ্যে গড়ে তোলে ঈমান, আদব, চরিত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ববোধ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন ‘বলুন, হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’ (সূরা ত্বাহা, আয়াত ১১৪)

এই দোয়া শেখানো হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে, যাতে বোঝা যায়Ñজ্ঞান অর্জন আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।

অন্য এক হাদীসে নবী করিম (সা.) বলেনÑ ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)

যে শিশু ছোটবেলা থেকেই কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, নামাজ ও নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়, সে কখনো অন্যায় পথে হাঁটে না।

ইসলামি ইতিহাসে শিশু শিক্ষার উদাহরণ

১. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)

তিনি ছিলেন অতি অল্প বয়সেই কুরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞানসম্পন্ন। নবী করিম (সা.) তার জন্য দোয়া করেছিলেনÑ ‘হে আল্লাহ! তাকে দীনের জ্ঞান দাও এবং তাফসির শেখাও।’ ফলস্বরূপ তিনি হয়ে ওঠেন ‘তরজুমানুল কুরআন’Ñকুরআনের বিশারদ।

২. ইমাম মালিক (রহ.)

তিনি শিশু অবস্থায় মায়ের অনুপ্রেরণায় হাদীস শেখা শুরু করেন। মা তাকে বলতেনÑ ‘জ্ঞান শেখার আগে আদব শিখো।’ এই শিক্ষা তাঁর জীবন বদলে দেয়।

৩. লুকমান (আ.)-এর উপদেশ

কুরআনে লুকমান (আ.) তার পুত্রকে উপদেশ দিয়েছিলেন- ‘হে আমার ছেলে! আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না; নিশ্চয়ই শিরক একটি মহা অন্যায়।’ (সূরা লুকমান, আয়াত ১৩)

এ আয়াত প্রমাণ করে, শিশুর শিক্ষার শুরু আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা থেকেই হওয়া উচিত।

ধর্মীয় শিক্ষার মানসিক ও সামাজিক প্রভাব

ধর্মীয় শিক্ষা কেবল ধর্মীয় জ্ঞান দেয় না, বরং শিশুর চিন্তা, আচরণ, মনস্তত্ত্ব ও নৈতিকতা গঠন করে।

১. মানসিক শান্তি : ইসলামিক শিক্ষা শিশুকে শেখায় ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা ও পরিতৃপ্তি। ফলে সে হতাশ হয় না, সমাজবিরোধী কাজে জড়ায় না।

২. নৈতিক চরিত্র : ধর্মীয় শিক্ষায় গড়া শিশু মিথ্যা বলে না, প্রতারণা করে না, চুরি করে না।

৩. সমাজবোধ : ইসলাম শেখায়, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া হারাম, গরিবকে সাহায্য করা সওয়াবের কাজ। ফলে শিশু সমাজমুখী হয়।

৪. আত্মনিয়ন্ত্রণ : ধর্মীয় শিক্ষা শিশুকে আল্লাহর ভয় শেখায়। তাই সে একা থাকলেও পাপ থেকে বিরত থাকে।

বর্তমান সমাজে ধর্মীয় শিক্ষার অভাবের পরিণতি

আজকের সমাজে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিশু আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে গেলেও নৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে তারা জানে না : নামাজ না পড়া গুনাহ, মিথ্যা বলা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত, পিতা-মাতার অবাধ্যতা হারাম।

ফলাফল হিসেবে সমাজে দেখা দিচ্ছে-

১. নৈতিক অবক্ষয়, ২.মাদকাসক্তি, ৩. প্রযুক্তি-আসক্তি, ৪. আত্মহত্যা প্রবণতা, ৫. অপরাধ ও যৌন বিকৃতি।

আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গেল, ফলে আল্লাহ তাদের নিজেদের কথা ভুলিয়ে দিলেন।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত ১৯) ধর্মীয় শিক্ষাহীন সমাজ তাই নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় শিক্ষা

বাংলাদেশে প্রধান ধর্ম ইসলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। শিশুদের হাতে মোবাইল, কিন্তু হাতে কুরআন নেই। অনেক পিতা-মাতা ধর্মীয় শিক্ষাকে পার্থিব শিক্ষার পরিপূরক মনে করেন না। তবে আশার কথা হলোÑদেশের বিভিন্ন এলাকায় মক্তব ও হিফজখানা ইসলামী শিক্ষার পুনর্জাগরণ ঘটাচ্ছে। সকালে শিশুদের মক্তবে কুরআন শিক্ষা, বিকেলে সাধারণ শিক্ষা-এই মডেলটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।

শিশুদের ইসলামি শিক্ষা উন্নয়নের উপায়

১ . পরিবারভিত্তিক করণীয় : পিতা-মাতা নিজেরাই নামাজ আদায় করবেন, যাতে শিশু অনুকরণ করে। প্রতিদিন ঘরে কুরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী গল্প বলার পরিবেশ তৈরি করবেন। শিশুকে ছোটবেলা থেকেই সালাম, দোয়া, শিষ্টাচার শেখাবেন।

২. প্রাতিষ্ঠানিক করণীয় : ক. স্কুলে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। খ. মাদরাসা-মক্তবগুলোকে আধুনিক পাঠদানের, মাধ্যমে আকর্ষণীয় করতে হবে। গ. প্রশিক্ষিত আলেম শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ঘ. ইসলামিক গল্প, নাটক, কার্টুন তৈরি করে শিশুদের আকৃষ্ট করতে হবে।

৩. সামাজিক করণীয়

ক. সমাজে ইসলামি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। খ. ইসলামি প্রতিযোগিতা, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। গ. ইসলামি শিশু সাহিত্য প্রচার করতে হবে।

৪. রাষ্ট্রীয় করণীয় ক. জাতীয় পাঠ্যক্রমে নবী-রাসূলদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। খ. ইসলামি শিশু টিভি ও বই প্রকাশনায় সহায়তা করতে হবে। গ. শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষায় উৎসাহিত পরিবারকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। শিশুদের জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার ফলাফল একজন ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত শিশু হয়ে ওঠে- আল্লাহভীরু ও পরহেজগার, আদর্শ নাগরিক, সমাজের শান্তির বার্তাবাহক, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ নেতা, পিতা-মাতার আনুগত্যশীল সন্তান।

ধর্মীয় শিক্ষা তার মধ্যে সৃষ্টি করে আত্মনিয়ন্ত্রণ, পরোপকার, শৃঙ্খলা ও আল্লাহভীতি। যখন এমন হাজারো শিশু গড়ে ওঠে, তখনই একটি সমাজ হয় ‘শান্তির সমাজ’-যা ইসলামের লক্ষ্য।

অনুপ্রেরণামূলক কিছু বাস্তব ঘটনা : হযরত আনাস (রা.), রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে ছিলেন ১০ বছর। ছোটবেলাতেই নবী (সা.) তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন সত্যবাদিতা, ধৈর্য ও আদব। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো দেখিনি নবী (সা.) আমার কোনো ভুলে রাগ করেছেন।’ এই পরিবেশই তাঁকে মহান সাহাবিতে পরিণত করেছিল।

ঘটনা : ইমাম আবু হানিফা (রহ.) শিশু বয়সেই তিনি দোকানে বসতেন। একদিন মাকে দেখে বললেন, ‘মা, আমি আলেম হতে চাই।’ মা তাঁকে মক্তবে ভর্তি করে দেন। পরে তিনিই হয়ে ওঠেন ইসলামী ফিকহের মহান ইমাম। এই উদাহরণগুলো দেখায়, ছোটবেলা থেকেই ইসলামি পরিবেশ শিশুর ভাগ্য বদলে দিতে পারে।

প্রযুক্তি যুগে ধর্মীয় শিক্ষার নতুন কৌশল বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর। তাই শিশুদের ইসলামি শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহারও জরুরি।

ক. ইসলামিক মোবাইল অ্যাপ, খ.কুরআন শিখার এপস বা বিডিও, গ. ইউটিউবে ইসলামি কার্টুন, ঘ. ভার্চুয়াল মক্তব ক্লাস, এসবের মাধ্যমে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে ইসলাম শিখতে পারবে। তবে অভিভাবকদের দায়িত্ব থাকবে-শিশু যেন অনলাইন বিপদে না পড়ে।

শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষায় মক্তবের ভূমিকা মক্তব ইসলামী শিক্ষার প্রথম ধাপ। এখানে শিশুরা শিখেÑকুরআন তিলাওয়াত, নামাজের দোয়া, ইসলামী আদব, নবী-রাসূলদের গল্প। বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু প্রতিদিন মক্তবে যায়। এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা গেলে শিশুদের ঈমান ও চরিত্রের ভিত্তি আরও শক্ত হবে।

একটি প্রবাদ আছে- ‘যে শিশুর হাতে কুরআন, তার জীবনে অন্ধকার থাকে না।’ ধর্মীয় শিক্ষা বনাম আধুনিক শিক্ষা Ñসমন্বয়ের প্রয়োজন। ইসলাম আধুনিক শিক্ষার বিরোধী নয় বরং ইসলাম চায়-দুনিয়ার জ্ঞান ও আখিরাতের জ্ঞান একসাথে অর্জন করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনÑ‘দুনিয়া তোমার জীবনের বাহন, আর আখিরাত তোমার গন্তব্য।’ তাই শিশুদের এমন শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা দুনিয়ার দায়িত্বেও সফল হয় এবং আখিরাতেও মুক্তি পায়।

পরিশেষে বলব, ধর্মীয় শিক্ষা হলো মানবজীবনের ভিত্তি, বিশেষত শিশুদের জীবনের প্রথম দিকেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু নামাজ, রোযা বা কুরআন শেখা নয়; বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান শেখার প্রক্রিয়া। যদি আজ আমরা শিশুদের হাতে কুরআন তুলে দিই, আগামীকাল তারা আমাদের সমাজে ন্যায়, শান্তি ও আলোর পতাকা ওড়াবে। কিন্তু যদি আমরা তাদের হাতে কুরআনের বদলে কেবল মোবাইল তুলে দিই, তবে তারা হারাবে আত্মপরিচয়, হারাবে ঈমানের আলো।

তাই আসুনÑঘরে ঘরে কুরআনের শিক্ষা শুরু করি, মক্তব ও মাদরাসাকে শক্তিশালী করি, শিশুদের ইসলামি চরিত্রে গড়ে তুলি। কারণ, ‘আজকের শিশুই আগামী দিনের নেতা; আর যদি সে ইসলামী শিক্ষায় গড়ে ওঠে, তবে সমাজ হবে আলোকিত, জাতি হবে পরিশুদ্ধ, দেশ হবে শান্তির বাগান।’

লেখক : মুফতি মুহা. আবু বকর বিন ফারুক, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়