প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৮
বৃদ্ধ বয়সে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতন

বৃদ্ধ বয়স এমন একটি সময়, যখন মানুষ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সবচেয়ে বেশি সহানুভূতি ও যত্নের প্রয়োজন বোধ করে। কিন্তু সমাজের এক বড়ো অংশে দেখা যায়, প্রবীণ নারীরা এই বয়সে ভালোবাসা নয়, বরং নির্যাতনের শিকার হন, আর সেই নির্যাতনকারী অনেক সময় তাদেরই জীবনসঙ্গী, বহু বছরের স্বামী। এ এক নীরব, কিন্তু গভীর মানবিক ট্র্যাজেডি।
|আরো খবর
প্রবীণ নারীর প্রতি স্বামীর নির্যাতন নানা রূপে প্রকাশ পায়। কখনও তা শারীরিক, কখনও মানসিক, আবার অনেক সময় আর্থিক ও সামাজিক বঞ্চনার মধ্য দিয়েও ঘটে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে, চলাফেরায় কষ্ট হয়, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এসব পরিবর্তনের কারণে অনেক স্বামী অধৈর্য হয়ে উঠেন। কেউ কেউ অপমানজনক কথা বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় রাগারাগি করেন, এমনকি মারধর পর্যন্ত করেন। আবার কেউ মানসিক নির্যাতনের পথ বেছে নেন অবহেলা, অবিশ্বাস, ঠাণ্ডা ব্যবহার বা অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ প্রদর্শনের মাধ্যমে। এভাবে প্রবীণ স্ত্রীকে কষ্ট দেন।
অন্যদিকে আর্থিক নির্যাতনও কম নয়। স্বামীর হাতে সংসারের সব অর্থ থাকায় প্রবীণ নারী প্রায়ই অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ফলে নিজের চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, এমনকি নাতি-নাতনিদের জন্যে কিছু কিনতেও স্বামীর অনুমতির ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী পেনশনের টাকা বা সম্পত্তি লুকিয়ে রাখেন, যাতে স্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন।
এই নির্যাতনের আরেকটি বড়ো দিক হলো মানসিক নিঃসঙ্গতা। সন্তানরা বড়ো হয়ে নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, আর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটি যদি সহমর্মিতার বদলে কটুবাক্য ও অবহেলায় ভরে উঠে, তখন প্রবীণ নারী একা হয়ে যান। তিনি নিজের অস্তিত্বকেই তুচ্ছ মনে করতে শুরু করেন। এই অবস্থায় অনেক নারী বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা আত্মসম্মানহানিতে ভোগেন, যা তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে।
করণীয় হলো : প্রথমত, পরিবার ও সমাজে প্রবীণ নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সহানুভূতির চর্চা বাড়াতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রবীণ কল্যাণ সংস্থাগুলোর উচিত প্রবীণ নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া। নারীরা যেন সাহস করে নির্যাতনের কথা প্রকাশ করতে পারেন, সে পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। পাশাপাশি, আইনগত সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সবচেয়ে বড়ো কথা, বৃদ্ধ বয়সে দাম্পত্য সম্পর্ককে ভালোবাসা, যত্ন ও পারস্পরিক সম্মানের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একে অপরের দুর্বলতা নয়, বরং দীর্ঘ জীবনের সঙ্গী হিসেবে একে অপরের সান্ত্বনা হয়ে উঠলে তবেই প্রবীণ জীবনের প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে।
এই বয়সে নির্যাতন নয় ভালোবাসা, যত্ন ও সহমর্মিতাই হওয়া উচিত প্রবীণ নারীর প্রাপ্য।




