শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫০

চিঠিটির কার্যকারিতা ঠেকানো গেলেও লঞ্চের যাত্রী-হ্রাস কি ঠেকানো যাবে?

অনলাইন ডেস্ক
চিঠিটির কার্যকারিতা ঠেকানো গেলেও লঞ্চের যাত্রী-হ্রাস কি ঠেকানো যাবে?

চাঁদপুর কণ্ঠে সোমবার শীর্ষ সংবাদ হয়েছে ‘ঢাকা- চাঁদপুর নৌরুটে যাত্রী ভোগান্তি ও যাত্রী সংখ্যা হ্রাস\দুর্বল ব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে লঞ্চ ব্যবসা’। বুধবার একই পাতায় শীর্ষ সংবাদ হয়েছে ‘চঁাদপুর-ঢাকা দ্রুতগামী নৌযান চালুতে মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসকের চিঠি’। সোমবারের সংবাদের ফলোআপ স্বরূপ যেনো হয়েছে বুধবারের সংবাদটি। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চঁাদপুর-ঢাকা নৌরুটে দ্রুতগামী ও আধুনিক নৌযান চালুর দাবিতে সরব হয়েছেন সাধারণ যাত্রী ও স্থানীয় বিভিন্ন পেশার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে রুটটিতে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর সেবার মান নিম্নমানের থাকায় যাত্রী সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ রুটে আধুনিক ও দ্রুতগতিসম্পন্ন নৌযান চালু করার দাবি দিন দিন জোরদার হচ্ছে। এ বিষয়ে চঁাদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জেলাবাসীর পক্ষে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৫) নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) সকালে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানা যায়, এক সময় ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত ছিল চঁাদপুর নৌবন্দর। কিন্তু তিন নদীর মিলনস্থল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এবং ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় পরবর্তীতে শহরের নিশি বিল্ডিং এলাকায় স্থানান্তর করা হয় বন্দরের কার্যক্রম। সেখানে এখন গড়ে উঠছে আধুনিক নৌবন্দর। যাত্রীরা মনে করেন, বন্দর আধুনিক হলেও রুটে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে আধুনিক ও দ্রুতগামী না করা পর্যন্ত যাত্রীসেবার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পেঁৗছাবে না।

চঁাদপুর পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ বলেন, এই রুটের লঞ্চগুলোতে উন্নতি হয়নি। তাদের মতো করে পরিচালনা করে। তারা শীত এবং গরম মৌসুমে এসির ভাড়া একই রকম নেয়। কিন্তু সেবার মান বৃদ্ধি হয়নি। চঁাদপুর শহরের নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, একটা সময় মানুষ বেশি লঞ্চে যাতায়াত করতো, কিন্তু বর্তমানে সময় বেশি লাগায় সড়ক যোগে মানুষ যাতায়াত করছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সময়ের সাথে সাথে এখানে যাতে দ্রুতগতির একটি লঞ্চ চালু করা হয়। তাহলে মানুষ কম সময়ে যেতে পারবে, আবার কাজ সেরে দ্রুত চলে আসতে পারবে। চঁাদপুর শহরের ট্রাক রোড এলাকার শিক্ষক হাফেজ জাকির হোসেন বলেন, লঞ্চগুলোর যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অব্যবস্থাপনা থাকায় লঞ্চের প্রতি যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এখন নতুন করে আধুনিক নৌ বন্দর নির্মাণ এবং দ্রুতগামী নৌযান বাস্তবায়ন হলে মানুষ আবারো এই রুটে যাতায়াত করা শুরু করবে। এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেন, ঢাকা থেকে বরিশাল বিভাগের সকল জেলা এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের লঞ্চ, কার্গো ও জাহাজ চলাচলের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চঁাদপুর নদী বন্দর ব্যবহৃত হয়। চঁাদপুর শহর পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত হওয়ায় এবং ইলিশের বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। জনসাধারণ নৌ পথে চঁাদপুর-ঢাকা যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বর্তমানে নদীপথে চঁাদপুর-ঢাকা যাতায়াতে সাড়ে ৩ঘন্টা থেকে ৪ঘন্টা সময় লাগে। অপরদিকে সড়কপথে যাতায়াতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। ধীরগতির পুরোনো লঞ্চ সড়কপথের তুলনায় নদীপথে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ায় জনসাধারণ নদীপথে যাতায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। নদীপথে যাতায়াত তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল, আরামদায়ক ও নিরাপদ। নদীপথের যাতায়াত স্বল্পসময়ে সম্পন্ন করার জন্যে দ্রুতগতির লঞ্চ চলাচল নিশ্চিত করা প্রয়োজন। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমানে যে সকল লঞ্চ ৩ ঘণ্টায় চঁাদপুর থেকে ঢাকায় পেঁৗছায় ওইসব লঞ্চ আড়াই ঘণ্টায়ও পেঁৗছানো সম্ভব। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, চঁাদপুর-ঢাকা নৌরুট সচল রাখার জন্য আমি মনে করি আধুনিক এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন লঞ্চ চালুর উদ্যোগ, লঞ্চসমূহ সংস্কার, সেবার মান বৃদ্ধি, আধুনিকায়ন এবং আড়াই ঘণ্টার মধ্যে চঁাদপুর-ঢাকা পেঁৗছানোর লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সড়কের ওপরে চাপ কমাতে হলে জনপ্রিয় এই নৌরুটের সেবার মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, অন্যথায় ভবিষ্যতে যাত্রীর অপ্রতুলতায় লঞ্চ সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

লঞ্চ ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি আছে, যারা তাদের স্বার্থে চঁাদপুরের জেলা প্রশাসক কর্তৃক দ্রুতগামী লঞ্চ সংক্রান্ত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত চিঠির কার্যকারিতা বন্ধ করে দিতে পারে, ফাইল চালাচালি স্থবির করে দিতে পারে নানান ধরনের তদবিরে। আবার এ চিঠির কারণে লঞ্চ মালিকরা জরুরি সভায় বসে লঞ্চগুলোকে যাত্রীবান্ধব করার ব্যাপারে সমূহ উদ্যোগ নিতে পারে। আর লঞ্চগুলো সংস্কার করে এবং ইঞ্জিন শক্তিশালী করে দ্রুতগামী করতে পারে। তঁারা এ কাজটি না করে যদি নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকরের দুরভিসন্ধিমূলক কিছু করে, তাহলে চঁাদপুরের জেলা প্রশাসকের চিঠির কার্যকারিতা হয়তো বন্ধ হবে। কথা হলো, এতে নিম্নমানের সেবা ও ভোগান্তিহেতু যাত্রী-হ্রাস কি ঠেকাতে পারবে?

দূর অতীতে চঁাদপুর-ঢাকা নৌরুটে দ্রুতগামী নৌযান হিসেবে সী ট্রাক ও স্পীড বোট সার্ভিস চালু হয়েছিলো, কিন্তু উপর্যুপরি দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সেটি সরকারিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। সেজন্যে নৌ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকের চিঠি আমলে নিয়ে দ্রুতগামী ছোট কোনো লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং বর্তমানে চলাচলরত বড়ো লঞ্চগুলোকে কীভাবে দু-থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-চঁাদপুর রুটে চালানো যায় সে ব্যাপারে লঞ্চ মালিকদের সাথে সভা করাটা যথার্থ হবে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরামর্শের আলোকে নৌরুটে বিদ্যমান ডুবোচর খননসহ অন্যান্য পরামর্শ কার্যকরে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়