বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৯

খাবারের চেয়ে খাবার পাত্রের গুরুত্বই নারীর আচার-আচরণের নির্দেশক

রিপন কুমার সাহা
খাবারের চেয়ে খাবার পাত্রের গুরুত্বই নারীর আচার-আচরণের নির্দেশক

আমাদের জীবন ধারণের জন্যে খাবার একান্তই প্রয়োজন, আর সেই খাবারের যোগানদাতা পুরুষ হলেও ঘরের নারীরাই তা পরিপাটি করে রান্না ও পরিবেশন করে থাকেন। অতীতে যখন খাবার পরিবেশনের জন্যে একমাত্র অবলম্বন ছিলো কলাপাতা, তখন মানুষের মনগত আচার- আচরণও ছিলো ঠিক কলাপাতার ন্যায় সহজ- সরল চির সবুজ এবং কোমল, আর ঘরের নারীরা ছিলো ঔষধি বৃক্ষের ন্যায় এক জনমে তথা পতিব্রতায় বিশ্বাসী আর অবগুণ্ঠনে আবৃত, ঠিক যেন সাক্ষাৎ দেবী।

এরপর মানুষের একটু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কলাপাতা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে মাটির পাত্রের প্রচলন শুরু হলো। সেই সময়ে মানুষের মন ও মানসিকতা ছিলো মাটিরই কাছাকাছি, কিন্তু সবুজতা হারিয়ে গেলো আর ঘরের নারীরাও পোড়া মাটির ন্যায় একটু কোমলতা ও সবুজতা থেকে রং পরিবর্তন শুরু করে দিয়ে অবগুণ্ঠন থেকে বের হয়ে এসে নিজেকে রমণী হিসেবে পরিচয় দিলো।

আরও আধুনিকতায় ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মাটির পাত্রের পরিবর্তে চলে আসলো কাঁশা-পিতল এবং তামার পাত্র। এ পাত্র যেমন তৈরিতে তপ্ত আগুনের পরশের পাশাপাশি শক্ত হাতুড়ির আঘাতের প্রয়োজন, তেমনি করেই ঘরের নারীরা উত্তপ্ত ও হাতুড়ির ন্যায় শক্ত হয়ে উঠলো। পতিব্রতা থেকে ক্রমান্বয়ে বের হয়ে গিয়ে শাড়ির আঁচলের অবগুণ্ঠনের পরিবর্তে ওড়নায় মাথার অর্ধেক ঢেকে দিয়ে মহিলা নামে পরিচিতি নিলো।

আজকের আধুনিক প্রযুক্তি অতি সহজলভ্য হওয়ায় পরিবেশের কথা বিবেচনা না করে তৈরি করা হলো থার্মোক্যালের ওয়ান টাইম পাত্র। যা কেবল মাত্র একবারই ব্যবহার যোগ্য--’জাস্ট ইউজ এন্ড থ্রো’। ঠিক তেমনই অধিকাংশ নারী তার দেবীত্ব শক্তিকে বিসর্জন দিয়ে নিজের মতো করে পছন্দকে বেছে নিলো পরিবর্তনযোগ্য সংসার নির্মাণে। আর অসভ্য এবং নারীলিপ্সু পুরুষরা সেই ফাঁদে পা বাড়ালো। সমাজ ও সংসার হয়ে গেলো কলুষিত এবং আগত সন্তানরা হয়ে গেলো পথভ্রষ্ট। আর সেই মহিলারা হয়ে গেলেন স্বাধীন ম্যাম--সকল প্রকার অবগুণ্ঠনহীন অতীব আধুনিক।

এভাবেই খাবারের পাত্র পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অতীতের সুন্দর সমাজ, সংসার, আচার-আচরণ, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় মতবাদের সকল বিশ্বাস ও ভক্তি হারিয়ে গেলো। সাথে হারিয়ে গেলো সম্প্রীতি, ভালবাসা, মায়া-মমতা। আমাদের বন্ধনের স্থায়িত্ব হয়ে গেলো ক্ষণস্থায়ী, যা বিচ্ছেদে পরিগণিত। পারবারিক সুশিক্ষার অভাবে নারীরা তথা ঘরের মায়েরা বিপথগামী হওয়ায় তাদের সন্তানরা সেই মায়ের আচরণে প্রলুব্ধ হয়ে মব সৃষ্টিতে দ্বিধাহীন। পরিণামে পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম আর সংশোধনের জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে গড়ে উঠছে সংশোধনাগার।

নারীই দেবী, নারীই জননীরূপে সন্তানের সৃষ্টিকর্তা এবং আদর্শ শিক্ষক। তাদের বর্তমান থার্মোক্যাল পাত্রের ধ্যান- ধারণা পরিবর্তন করে সেই অতীতের কলাপাতার ন্যায় করার চেষ্টায় আবার ফিরে আসবে সবুজতার যুগ আর ফিরে আসবে মানুষের মনুষত্ব, ফিরে পেতে পারে নারী তার দেবীত্ব এবং পূজিত হবে ঘরে ঘরে।

রিপন কুমার সাহা, সভাপতি,শারদাঞ্জলি ফোরাম, চাঁদপুর।

তাং-১৫/১০/২০২৫ খ্রি.।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়