মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৬

হাসপাতালটিতে অবিলম্বে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক

অনলাইন ডেস্ক
হাসপাতালটিতে অবিলম্বে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক

‘২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে একদিনেই রোগী ভর্তি ৪২৭ ॥ ওয়ার্ড ছাড়িয়ে বারান্দায় চলছে চিকিৎসাসেবা’ গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন শিরোনামে একটি সংবাদ পড়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়েছি। বিশেষ প্রতিনিধি কবির হোসেন মিজি পরিবেশন করেছেন এ সংবাদ। তিনি এর আগেও অনুরূপ সংবাদ পরিবেশন করেছেন। কবির হোসেন মিজি গতকালকের সংবাদটিতে লিখেছেন, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল তীব্র রোগীর চাপে ভারাক্রান্ত। একদিনেই রোগী ভর্তি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, হাসপাতালের অভ্যন্তরের শয্যাগুলো পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের ঠাঁই হয়েছে বারান্দা ও মেঝেতে। হাসপাতালের বারান্দায় শয্যা পেতে চিকিৎসা নেয়ার দৃশ্যই হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরছে। রোববার (১২ অক্টোবর ২০২৫)-এর হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালে মোট ৪২৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আর এই হিসেব একদিনের। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৫০। অর্থাৎ অনুমোদিত শয্যার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। খবর নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলা সাধারণত পুরুষ ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যদিও তথ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে বরাদ্দ ৬০টি বেড, কিন্তু রোগীর চাপে বাড়তি ২৮টি বেড বারান্দায় পাতা হয়েছে। যেখানে পুরুষ ওয়ার্ডে রোববার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো মোট ১১৫ জন। এছাড়া হাসপাতালের ৪র্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডে এদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ১২৩ জন, যা অন্য ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। শিশু ওয়ার্ডের ৩য় তলায়ও রোগীর চাপ বেশি, যেখানে ভর্তি ৭৮ জন শিশু। এছাড়া সিসিইউ ক্যার্ডিওলজি বিভাগে ২৮ জন, গাইনীতে ৩৬ জন, কেবিনে ৩১ জন, নবজাতকের স্ক্যানো বিভাগে ১১ জন, আইসিইউতে ২ জন এবং ওয়ানস্টপ ইর্মাজেন্সি কেয়ারে ৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রোগীর এই লাগামহীন চাপের কারণে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে ও পেছনে খোলা বারান্দায় অতিরিক্ত বেড পেতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে গরমকাল এবং বিভিন্ন মৌসুমী রোগব্যাধি বাড়ায় এই চাপ আরো বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, বারান্দায় চিকিৎসা নেয়ায় যেমন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে না, তেমনি অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে এতো বিপুল সংখ্যক রোগীর জন্যে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকটও প্রকট। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই হাসপাতালে অনেক রোগীর চাপ রয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালকে পাঁচ শ’র বেশি রোগীর চাপ নিতে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

আমরা ২৫০ শয্যার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালটি প্রায় দ্বিগুণ রোগীর চাপে কবে নাগাদ নিজেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে বস্তুত সে আশঙ্কায় ভুগছি। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এজন্যে যে, তারা চরম ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে অতিরিক্ত রোগীদের ধকল সামলিয়ে রোগীদের সেবা মোটামুটি চালিয়ে যাচ্ছে এবং কর্মরত জনবলের কেউ এখনও কাজের চাপে বেহুঁশ হয়নি কিংবা বিদ্রোহ ঘোষণা করেনি। ৬৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৪৭ জন অর্থাৎ ২০জন চিকিৎসকের অভাব ও নার্স পদে ৩০ জনের শূন্যতা সহ অন্যান্য পদে আরো শূন্যতা নিয়ে এ হাসপাতালটির কার্যক্রমে অতিরিক্ত রোগীর চাপে যে হিমশিম অবস্থা চলছে, সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পর্যায়ের কিংবা তারচে’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কারো সরেজমিনে পরিদর্শনে আসা উচিত। আমরা এ হাসপাতালের জনবল সঙ্কট নিরসনসহ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০০ করার জন্যে জোর দাবি জানাচ্ছি। এ দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সকলের সহমত বা ঐকমত্য প্রত্যাশা করছি। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে দাবি আদায় পর্যন্ত ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখার জন্যে উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, শয্যা সঙ্কট ও জনবল সঙ্কটে মানুষ নামের রোগীরা হাসপাতালের বারান্দায়, ফ্লোরে মানবেতরভাবে চিকিৎসা নেয়াটা অমানবিক ও অপমানজনক মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়