সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৯

প্রতীক্ষার প্রহর

বিমল কান্তি দাশ
প্রতীক্ষার প্রহর

অবিচ্ছিন্ন ১৭০ বছর অবধি পাক-ভারত উপমহাদেশটি ব্রিটিশ কলোনিয়াল শাসনের জাঁতাকলে সমগ্র ভারতবাসীর ওষ্ঠাগত প্রাণ ছিলো। একদল ভারতবাসী তখন কেউবা বিভিন্ন টনিকে আসক্ত হয়ে রাজাসনের প্রহর গুণছিলো, কেউবা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সহায়ক ভূমিকায় ছিলো, কেউবা দারুণ মর্মন্তুদ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়ক ভূমিকায় ছিলো, কেউবা পরাধীনতার নির্মম শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্যে আত্মদানে ও সংগ্রামে ভাস্বর হয়ে উঠেছিলো। এ কথা নির্জলা সত্য যে, এই মহান স্বাধীনতা যজ্ঞে আত্মোৎসর্গকারীরা অধিকাংশই ছিলো বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী।

যারা বেহায়াপনায় সমগ্র পৃথিবীতে অদ্বিতীয়, চাতুর্যে অত্যন্ত দক্ষ এমন একটা জাতিকে শুধুমাত্র ভারত ছাড়ো আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন এবং অহিংস আন্দোলনে বাধ্য করা যাবে না বুঝেই এই বঙ্গদেশের প্রবোদ্ধারা অত্যন্ত হিংস্র সশস্ত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তাদের বুকের টগবগে রক্ত রঞ্জিত প্রাণটা বিসর্জন দিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে স্বাধীন করে দিয়ে সমগ্র ভারত এবং পাকিস্তানবাসীকে শহীদের রক্তের কাছে চিরঋণী করে দিয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত প্রায় দলীয় শাসনে পরিপুষ্ট আর পাকিস্তানের একটি অংশ সামরিক শাসনে অতিষ্ঠ। অপর অংশ বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছিল সামরিক গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসক দ্বারা।

ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাশের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোথাও গণতন্ত্রের লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় নি বা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সংকেত পর্যন্তও অনুপস্থিত। গণতন্ত্র নামক সোনার হরিণটি কেবলই উঁকিঝুঁকি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম লিংকনের সংজ্ঞায়িত গণতন্ত্র হলো : A democratic government is Of the people By the people For the people. আর আমাদের এই অঞ্চলের সংজ্ঞা হলো : A democratic government is Off the people Buy the people Far the people.

অথচ আমরা সেই আদিকাল অবধি বাংলাদেশে গণতন্ত্রকেই খুঁজে হয়রান হচ্ছি। কারণ কখনো পাচ্ছিলাম অচর্চিত কাগুজে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা পরিস্থিতির সংস্কৃতি, কখনো পেয়েছি খাল খননের তন্ত্র, কখনো বা পেয়েছি সামরিক গণতন্ত্র, কখনো পেয়েছি স্বৈরাচারী লুটপাটতন্ত্র। আমাদের বাঙালি মগজ যে অদৃশ্য-অশুভ শক্তিতে পাশব বৃত্তির 'মগজে ট্রান্সপ্লানটেড' হয়ে গেলো তার প্রতিফলন ঘটলো পরমতে অসহিষ্ণুতায়, বাক স্বাধীনতা হরণের পটুতায় এবং কতিপয় ক্ষমতাধরদের নগ্ন দ্বি-চারিতায় দেশের সর্বস্তরেই নেমেছে 'হিপোক্রেসী এবং মবোক্রেসী।' মানুষের বিবেকের মধ্যেই বাস করে মনুষ্যত্ব। আর মনুষ্যত্বের চর্চাই হলো ঔদার্য।

দেশ পরিচালনায় 'মাহাথীর মোহাম্মদী' আদর্শ শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ঘটাতে হলে প্রয়োজন শুধুই প্রচলিত কাগুজে সনদগুলোকে পাশ কাটিয়ে নিখুঁত মানবতা চর্চায় এগিয়ে চলার নির্মল প্রচেষ্টা, যা অবশ্যই সুনাগরিকত্ব বোধের উদ্রেক ঘটাবে। একজন সুনাগরিক হতে হলে নৈতিকতাবহুল একমুখী প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন অপরিহার্য। একমুখী শিক্ষা এবং কেবলমাত্র একমুখী নৈতিকতা বহুল শিক্ষাই পথহারা বাংলাদেশীদেরকে মুক্তির পথের নিশানা দিতে পারে। ব্যত্যয়ে মহাশূন্যের 'ব্ল্যাক হউলে' পতিত হয়ে অপশক্তির করাল গ্রাসে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে।

দেশে এখন 'যেমন খুশি তেমন সাজো' সজ্জিত হওয়ার হিড়িক লেগেছে। কেউবা আখের গোছানোর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা কৃত্রিম দেশপ্রেমিক সাজতে ব্যাকুল, কেউবা দুষ্টমতি দ্বি-চারিতায় মশগুল, কেউবা ভাল মানুষের মুখোশের আড়ালে দুর্বৃত্তায়ন, লাম্পট্য এবং প্রতারণার শুধুই জয়জয়কারে আকুল। ভাগ্যের চাকা ঘূর্ণনে আমাদের বিধিবাম। চারিদিক থেকে শুধুই সংকট তাড়িত ঘুর্ণিঝড় সতর্ক বার্তা নিয়ে ধেয়ে আসছে। যা একান্তই মানবসৃষ্ট। আজ সমস্যা বিজড়িত বাংলাদেশটি এক জটিল বাঁকে এসে পৌঁছেছে। কারণ রাজনীতি এখন এমন একটা অনাকাঙ্ক্ষিত গ্রুপবাজিতে পরিণত হয়েছে, যা প্রতি পদে পদে জনগণের মূক ও বধিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে এখনো এমন অনেক সুধীজন রয়েছেন, যাঁরা জনস্বার্থে সর্বোচ্চ নিবেদিতপ্রাণ। অথচ এঁরা বাংলাদেশী রাজনীতির দলীয় গ্রুপিংয়ের তাণ্ডবে স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি-চাঁদবাজি-মাদকবাজি এবং বিবিধ বিশৃঙ্খলার কারণে আতঙ্কিত বোধ করছে। দেশে চলমান এই নষ্ট রাজনীতির গুণানুপাতিক ধারাকে সুস্থ রাজনীতির ধারায় প্রবহমান করতে হলে সর্বাগ্রে দলীয় মার্কার রাজনীতি সাময়িক স্থগিত রেখে প্রার্থীর ক্রমিক নম্বর সম্বলিত একটি ব্যালটে টিক চিহ্ন দেওয়াই ভোটিং পদ্ধতি হলে দুর্নীতি কিছুটা অবদমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ভোটিং পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত।

উচ্ছিষ্ট ক্ষমতাবাজরা ঘৃণিত আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে যেন মানবতায় প্রশংসিত ক্ষমতাবানেরাই বাংলাদেশের মসনদকে অলংকৃত করার অতলান্ত কামনায় আমরা নিরবধি অপেক্ষমান। যেখানে থাকবে শুধুই অগতানুগতিক স্বতন্ত্র এবং বিকল্পা ধারার রাজনীতি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়