শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৪

তবে জীবন দিয়েই কি স্কুল ভবন আদায় করতে হবে?

অনলাইন ডেস্ক
তবে জীবন দিয়েই কি স্কুল ভবন আদায় করতে হবে?

‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান! মতলবে স্কুলের ছাদের পলেস্তারা খসে দুই শিক্ষার্থী আহত’ এটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম। সংবাদটি লিখেছেন রেদওয়ান আহমেদ জাকির। সংবাদটির বিবরণী হচ্ছে : মতলব দক্ষিণ উপজেলার ভানুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের ছাদের ভিমের পলেস্তারা খসে পড়ে দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল সাড়ে ৯টায় খাদেরগাঁও ইউনিয়নের এই বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পাঠদানের সময়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী বায়েজিদ ও মরিয়ম আহত হয়। বায়েজিদের মাথায় ও মরিয়মের পায়ে আঘাত লাগে। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহাসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে আগেও একাধিক ছেলেমেয়ে এভাবে আহত হয়েছে। আমাদের ক্লাসের দরজা-জানালা, দেয়ালসহ বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গা ও ফাটল রয়েছে। আমাদের স্কুলে একটা নতুন ভবন চাই। তাহলে আমাদের ভালো লাগতো। বাংলা শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বলেন, আমি শ্রেণীকক্ষে বাংলা ক্লাস নেয়ার সময় হঠাৎ ওপর থেকে ভিমের ঢালাইয়ের পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় দু শিক্ষার্থী আহত হয়। বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, আমরাও বিদ্যালয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগম বলেন, এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। এ বিষয়টি আমি আমাদের সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমান স্যারকে জানিয়েছি। নারায়ণপুর ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু আহতের কথা বলেননি। ভানুরপাড়সহ বেশ ক’টি বিদ্যালয় ভবনের জন্যে আবেদন করা আছে। বরাদ্দ পেলেই ভবন নির্মাণ করা হবে। মতলব দক্ষিণের ভানুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার বিদ্যালয়ে পলেস্তারা খসে পড়ে দুজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার বিষয়টি সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট গোপন রেখেছেন কি অভিমান করে না অন্য কারণে সেটা জানা যায়নি। তিনি সম্ভবত বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা প্রত্যাশা করছেন। বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ মারাত্মক আহত হলে কিংবা প্রাণ হারালে (আল্লাহ না করুক) প্রধান শিক্ষক তখন কষ্ট করে কাউকে জানানোর প্রয়োজন পড়বে না। বিষয়টি প্রথমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হবে এবং গণমাধ্যমের প্রধান সংবাদ শিরোনাম হবে। এতে নূতন ভবন নির্মাণের তোড়জোড় সৃষ্টি হবে। প্রধান শিক্ষক আরেকটি কারণেও না জানাতে পারেন। সেটি হচ্ছে, বিদ্যালয় ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি জানালেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প টিনের ভবনে পাঠদানের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়ে ও নূতন ভবনের প্রস্তাব পাঠিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। এতে সময় চলে যেতেই থাকেÑভবন নির্মাণ আর হয় না, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পেতে থাকে কষ্ট আর কষ্ট। অথচ বাস্তবতা হলো, কেবল নূতন ভবনের প্রস্তাবেই কাজ হয় না, চালাতে হয় তদবির। এই তদবির চালানোর সময় তো প্রধান শিক্ষকের নেই। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি)-এর সভাপতি কিংবা প্রভাবশালী অন্য কেউ উপরমহলে এই তদবিরের কাজটি করতে হয়। এতেই কাজ হয়, নয়তো নয়। বাস্তবতা আবার এমনওÑভবন দরকার নেই, কিন্তু এসএমসির জোরালো তদবিরের কারণে কোনো কোনো স্কুলে অতিরিক্ত ভবনও নির্মিত হয়ে যায়। এই বাস্তবতা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটু ভেবে দেখা দরকার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়