শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাজীগঞ্জে তাল গাছ থেকে পড়ে আহত যুবকের মৃত্যু
  •   অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন চৌধুরী মারা গেছেন
  •   ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া বৃদ্ধা মা
  •   মতলব উত্তরে ইকবাল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
  •   মতলবে ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩৪

ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা

হাসান আলী
ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর (রেজুলেশন ৪৫/১০৬) ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর থেকে সদস্য দেশ সমূহ এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। জাতিসংঘ এবারের প্রতিপাদ্য করেছে ‘ডিজিটাল ইকুইটি ফর অল এইজেস’ আর বাংলায় করা হয়েছে ‘ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা।’

বেশিরভাগ মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ এই বাক্যটির সাথে পরিচিত। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে সাধারণ মানুষ কি ধরনের উপকার পাবেন সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। করোনা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হবার পর ডিজিটাল পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়।

দেশের ৪৫৫০ ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্হাপন করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল।

ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে মোট ৫৫ টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশন সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলায় ১৫২টি উপজেলার ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রনয়ন করা হয়েছে।

বেতন, পেনশন, ভাতা, বৃত্তি, উপবৃত্তির টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদান করা হচ্ছে। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকি, সম্পত্তির জবর দখল বন্ধ করতে ডিজিটাল পদ্ধতি রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করবে।

বিভিন্ন অফিসে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের গোলমাল, ঝগড়া, বিবাদ এড়াতে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

সমাজে অপরাধ দমন, মানুষের স্বাধীন চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

কোভিড ১৯ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষ কে খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার আর ইন্টারনেট ব্যবহার কারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৪লাখ। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

২০১৯ সালে পৃথিবীতে ৬৫+ প্রবীণের সংখ্যা ছিল ৭০ কোটি। ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হবে ১৫০ কোটি হবে। আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী প্রযুক্তির ব্যবহারে খানিকটা পিছিয়ে আছে। শিশুরা দ্রুত প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে পারে কিন্তু প্রবীণদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে কিছুটা বেশি সময় লাগে তবে পারে।

চেষ্টা করলে, লেগে থাকলে, সময় দিলে, আন্তরিক হলে প্রবীণদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান কলাকৌশল আয়ত্ত্ব করানো সম্ভব হবে।

জাতিসংঘের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা’ যথার্থ হয়েছে।

এই লক্ষ্য অর্জনে সাইবার নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, বয়স বিদ্বেষী মনোভাব, মানবাধিকার, নৈতিকতা, জবাবদিহিতা বিবেচনায় নিতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন অর্জনে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধির আদর্শের উপর ভিত্তি করে সদস্য দেশগুলো কাউকে পিছনে না রেখে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ডিজিটাল প্রযুক্তি-ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন এবং ডিজিটালভাবে তথ্য সংগ্রহ, সঞ্চয়, শেয়ার করে নেয়ার অন্যান্য সরঞ্জাম বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের অনেকেই এসবের উপর কাজ করেন। তরুণ দের শিক্ষিত করতে, বন্ধু, পরিবার পরিজনের সাথে যোগাযোগ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে।

এই প্রযুক্তিগুলো ডিজিটাল পাবলিক সার্ভিস, ডিজিটাল পেমেন্ট, অনলাইন লার্নিং, টেলি স্বাস্থ্য সেবা, অনলাইন শপিংসহ আরো অনেক কিছু করতে সক্ষম হয়েছে।

বিশে^র প্রায় অর্ধেক লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাকি অর্ধেক করে না। লাখ লাখ মানুষ কাজ পায় না, দূরবর্তী স্কুলে যেতে পারে না বা প্রযুক্তির সুবিধা গুলো গ্রহণ করতে পারে না।

ইন্টারনেট সংযোগ হীন অনেকেই স্বল্পন্নোত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়ন শীল দেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চল, শহুরে দরিদ্র অঞ্চলে বসবাস করে।

ডিজিটাল বিভাজন এখনো কমবেশি দেশ সম্প্রদায় এবং মানুষের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। বিশে^র সকল মানুষকে ডিজিটাল জ্ঞান দক্ষতা (মোবাইল প্রযুক্তিসহ ইন্টারনেট) অর্জনে সক্ষম করা এবং ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করা একটি চ্যালেঞ্জ তা বিশ^ সম্প্রদায়কে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সমাধান করা প্রয়োজন।

উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সরকার, সুশীল সমাজ, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধিদের সকলের জন্য ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি মোকাবিলায় জরুরি বিষয়ে আলোচনা একত্রিত করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার কাজে উন্নত বিশে^র এগিয়ে আসতে হবে।

(সূত্র-ইউএন ওয়েব সাইট)

লেখক- সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়