প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২
এতোদিন এমন একটি হাসপাতাল চললো কীভাবে?

‘জীবিত নবজাতককে দাফন চেষ্টার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আটক ৩ ॥ ইউনাইটেড হাসপাতাল সিলগালা’-এটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম। এ সংবাদের বিবরণী হচ্ছে : চাঁদপুরে কবরস্থ করার সময় জীবিত উদ্ধার হয় এক নবজাতক। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনাসহ পাহাড়সম অনিয়মের অভিযোগে চাঁদপুর শহরের আলোচিত ‘দি ইউনাইটেড হাসপাতালে’র সকল কার্যক্রম বন্ধ করে এটি সিলগালা করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে আদালতের পরামর্শে চাঁদপুর সিভিল সার্জনের নির্দেশে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল হাসান ফয়সাল হাসপাতালটি সিলগালা করেন। এর আগে কবরস্থান এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নবজাতকের পরিচয় ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তথ্য বেরিয়ে আসে। তারই সূত্র ধরে ১৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি। এদিকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ পৃথক অভিযানে ৩জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন : নবজাতককে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ফারুক হোসেন গাজীসহ একজন নার্স এবং নবজাতকের গর্ভধারিণী কিশোরী মা। এ ঘটনায় কবরস্থানের গোর খোদক শাহজাহান এবং চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, নবজাতক শিশুটির গর্ভধারিণীর বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার শোভাপাড়া গ্রামে। ১৫/১৬ বছরের কিশোরী তার ভগ্নিপতি মুন্না এবং তার ভাই সাব্বিরের লালসার শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ৬ থেকে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে জোরপূর্বক চাঁদপুর ইউনাইটেড হাসপাতালে গর্ভপাত করানো হয়। অভিযুক্ত এই হাসপাতালটিতে এ ধরনের অপরাধ হরহামেশাই করে আসছে বলে অনেকেই জানান। এ ছাড়া হাসপাতালটি কোনো ধরনের নিয়ম এবং বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করেই পরিচালনা করে আসছিলো মালিক পক্ষ। পাহাড়সম অনিয়ম নিয়েই হাসপাতালটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নাকের ডগায় বছরের পর বছর পরিচালিত হয়ে আসছিলো।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে এক জীবিত নবজাতককে দাফন করতে শহরের পৌর কবরস্থানে পাঠানো হয়। গোরখাদক শিশুটিকে দাফন করতে গিয়ে জীবিত দেখতে পেয়ে তিনি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান। পরে সাংবাদিক আশিক বিন রহিমসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা নবজাতককে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর ফেমাস স্পেশালাইজড হসপিটালের এনআইসিউতে ভর্তি করান। পরে আট ঘণ্টা চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতকটি মারা যায়। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর সমগ্র দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে উল্লেখিত সাংবাদিকদের মানবিক প্রচেষ্টা ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
সাংবাদিকগণের প্রায় সবাই সবসময় মানবিক কাজ করার চেষ্টা করেন। তবে বিভিন্ন এলাকায় ২-৪ জন বিপথগামী, লোভী ও নীতিহীন সাংবাদিকের কর্মকাণ্ডের জন্যে পুরো সাংবাদিক সমাজ গাল খায়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশালীন মন্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়। এমন বাস্তবতায় চাঁদপুরের সাংবাদিকদের জীবিত নবজাতককে দাফন চেষ্টার চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের বাইরে নবজাতককে বাঁচানোর চেষ্টাটি প্রশংসিত হওয়ায় আমরা আত্মশ্লাঘা বোধ করছি। আমাদের জিজ্ঞাসা কিন্তু নিরন্তর থেকেই যাবে, চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম কি সুষ্ঠুভাবে তদারকি করে না? শুধু লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়নের মধ্যেই তাদের কাজ শেষ? এ বিভাগের প্রধান হিসেবে সিভিল সার্জনকে বহুদিক সামলাতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের ব্যস্ততার বিপরীতে তাঁর কার্যালয়ে কর্মরত লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিতরা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে যথাযথ পরিদর্শন ব্যতিরেকে লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নে সহযোগিতা করে থাকে। এ কারণেই চাঁদপুর শহরে ইউনাইটেড হাসপাতালের মতো অনিয়মের চর্চাকারী হাসপাতাল লাইসেন্স পেয়ে বারবার নবায়নের সুযোগ পেয়েছে। এজন্যে দায়ীদের সিভিল সার্জন কর্তৃক শোকজ পাওয়া উচিত।
ইউনাইটেড হাসপাতালের নবজাতক কাণ্ডে চাঁদপুরের জেলা পুলিশ যে তৎপরতা ও সাফল্য দেখিয়েছে, তার জন্যে পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মামলার রহস্য উন্মোচনে জেলা পুলিশের একের পর এক সাড়া জাগানো সাফল্যের কথা তো অকপটে স্বীকার করতেই হয়। আমরা এমন সাফল্যের ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা করছি।