লিবিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যে সতর্কতা

লিবিয়ার ত্রিপোলিতে এক প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতাকে হত্যার পর শহরের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষ চলছে। এমন বাস্তবতায় ত্রিপোলিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছে লিবিয়ার বাংলাদেশি দূতাবাস। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকার পর আবারও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই ‘জরুরি নিরাপত্তা বার্তা’ জারি করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে বসবারত সব বাংলাদেশীকে ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। নিজ বাসায় থাকার পাশাপাশি সংঘাতপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলার কথাও বলা হয়েছে।

‘জরুরি নিরাপত্তা বার্তায়’ বলা হয়েছে ‘‘লিবিয়ার রাজধানীতে চলমান অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির কারণে ত্রিপোলিতে অবস্থানরত সব বাংলাদেশী নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন, নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান, সংঘাতপ্রবণ এলাকা এড়িয়ে চলা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে না বের হওয়ার জন্যে পুনরায় আহ্বান জানানো হচ্ছে।

জরুরি প্রয়োজনে ত্রিপোলিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কয়েকটি নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। নম্বরগুলো হলো : +২১৮৯১৬৯৯৪২০৭, +২১৮৯১৬৯৯৪২০২ এবং +২১৮৯১০০১৩৯৬৮।

এছাড়াও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যদি কোনো বাংলাদেশী আটকে পড়েন, তাকে উদ্ধারে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। নম্বর দুটি হলো : +২১৮৯৪০০০০৩৭৫ এবং +২১৮৯৪০০০০৩৭৬। এছাড়াও লিবিয়ার ইমার্জেন্সি মেডিসিন অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টারের ১৪১২ এবং +২১৮২১৩৬৬১৪১২ নম্বরেও যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এর আগে ১২ মে লিবিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্যে একই রকম জরুরি বার্তা জারি করেছিল বাংলাদেশ দূতাবাস।

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দূতাবাসও কার্যত বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তারা নিরাপত্তার স্বার্থে যার যার বাসায় রয়েছেন। ফলে, জরুরি কাজগুলো বাসায় বসে সম্পন্ন করছেন তারা।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘নিরাপত্তাজনিত কারণে কোনো লোকজনই তো বাইরে আসতে পারছেন না। ফলে, আমরা ঘরে বসেই জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করছি।

১২ মে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রাতে ভয়াবহ সংঘর্ষের শুরু হয়। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ওইদিন স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকায় ভারী অস্ত্রের গুলিবর্ষণ ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।

লিবিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল আল-আহরার ও সংবাদমাধ্যম আল-ওয়াসাত তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, দক্ষিণ ত্রিপোলিভিত্তিক প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি অ্যাপারেটাস’-র নেতা আবদেলগনি আল-কিকলি মারা গেছেন।

ত্রিপোলিভিত্তিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সব নাগরিককে নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও ত্রিপোলি ও আশেপাশের শহরগুলোতে সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, ত্রিপোলির সশস্ত্র গোষ্ঠী ও বন্দরনগরী মিসরাতার প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে রাজধানীর দক্ষিণের উপশহরগুলোতে সোমবার থেকে ওই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে লিবিয়া। দেশটি বর্তমানে দুটি প্রশাসনে বিভক্ত। একটি জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকার, রাজধানী ত্রিপোলি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপরটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন, যা সামরিক শক্তিধর হাফতার পরিবার পরিচালনা করে।