প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ০৮:২১
বৈশাখীর হিরন্ময় সংগীত
বিশ্ব বাঙালির মহামিলনের উৎসব পালন করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা

অরল্যান্ডো, শনিবার, তেসরা মে : ‘কী ফুল ফেটাবে তুমি হে বৈশাখ ? তোমার শাখায় সে কথা তুমিই জানো, হয়তো বা তুমি জানো না, তোমার প্রথম দিনে বিধাতার মৌন অনুরোধ পারে না হেলিতে। তাই ঘুরে ঘুরে আসে, বারে বারে আসে চৈত্রের শেষে’।
বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় আদিকাল থেকে এ ভূখণ্ডের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। যার রংধনু রশ্মি ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে বাঙালিকে নিয়ে গেছে দেশে দেশে। এ বৈশাখ সংগীত আজ বিশ্ব বাঙালির মহামিলন ও ঐক্যের উৎস, যা বাংলাদেশ সোসাইটি লালন করে আসছে দীর্ঘ ঊনিশ বছর ধরে। বাঙালির হাজার বছরের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা তুলে ধরতে, শিখরের খুশবু ছড়িয়ে দিতে নব আনন্দে নতুন বছরকে, সকল বাঙালিকে এক মোহনায় উপনীত করেছে অরলান্ডোর ‘আপনা’ খ্যাত বৈশাখী চত্বরে। স্বদেশগত ভাবনায় উন্মুখ অধীর প্রাণের পরশ নিতে সবাই ছুটে এসেছে যুক্তরাষ্টে অংকিত দীর্ঘায়িত আলপনা কর্নারে। এটা আমাদের গৌরবদীপ্ত সংকৃতির প্রোজ্জল বীজপত্র। যার স্রষ্টা শিল্পী স্নিগ্ধা লিপি। এই ক্যানভাসের পাদদেশে দাঁড়িয়ে শিশু, কপোত-কপোতীরা ছবি তোলার জন্যে ভিড় জমিয়েছে রাত বারোটা পর্যন্ত।
বিশাল চত্বরে তাঁবু টানিয়ে বসেছিলো মেলা। প্রচুর শাড়ি চুড়ি কাপড় প্রসাধনী বিক্রি হয়েছে মধ্য রাত পর্যন্ত। ছিলো পান্তা ইলিশ, চটপটি , চা , মিষ্টি, পিঠা, খাবারের রকমারি আয়োজন। উচ্ছল আনন্দে আড্ডায়- খাওয়ায় বিভোর হয়েছে আগতকরা। এদিকে অপরূপা বৈশাখী সাজে আপনা অডিটোরিয়াম মঞ্চে সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয়েছে শিশুদের ‘যেমন খুশী তেমন সাজো’ নামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা। খবর বাপসনিউজ।
প্রত্যেকটি মা এনেছেন সন্তানদের সাজিয়ে। চিরন্তন বাংলার বধূ, জামাই, কৃষক, জেলে, ঘটক, শিক্ষক, বেদে-- কতো কী। সবাইকে তাক লাগিয়ে ঈশান (ঘটক) প্রথম হয়েছে, দ্বিতীয় হয়েছে আজান (জেলে), তৃতীয় হয়েছে হাফসা (শিক্ষিকা)। দর্শকদের নজর কেড়েছে অতুলনীয় লাল শাড়ি সজ্জিত খুদে শিশু। বাদ্যযন্ত্র ঢোল বাঁশি প্ল্যাকার্ড নিয়ে লাল সাদা শাড়ি পরিহিতা বৈশাখী নারী, পুরুষদের মিছিল প্রদক্ষিণ ছিলো চিত্তাকর্ষক ও নূতনত্ব। মনখোরাকের মহৌষধ ছিলো সংগীত সন্ধ্যা। এতে অংশ নেন অরল্যান্ডো, কিসিমি, টেম্পার শিল্পীরা। তবে গেস্ট আর্টিস্ট রুখসানা মির্জা ও প্রেমা রহমান ছিলেন অনন্যা। তাদের গানের মুগ্ধতায় দর্শককুল বিমোহিত হয়েছে। সাড়া জাগানো রাফেল ড্রুতে প্রথম হয়েছে শোভন, দ্বিতীয় মিলু, তৃতীয় সাজিদ (মেলবোর্ন)। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে, পৃষ্ঠপোকতায় এই অনিন্দতম নবকিরণ বৈশাখ প্রজ্জ্বলিত হয়েছে, তাদেরকে অভিনন্দন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার সভাপতি, সেক্রেটারি সহ অগণিত সভ্যের বিরামহীন প্রচেষ্টায় বৈশাখীর এই সার্থক রূপায়ণ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বাসীকে উদ্ভাসিত করবে অনেকদিন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি ছিলো প্রবাসের আনন্দ উৎসবের বাতিঘর।