শনিবার, ১০ মে, ২০২৫  |   ৪০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৫, ০৯:১২

এতিম শিশুদের মতোই অসহায় যেনো সরকারি শিশু পরিবার!

অনলাইন ডেস্ক
এতিম শিশুদের মতোই অসহায় যেনো সরকারি শিশু পরিবার!

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা এই প্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে শুধু বাড়িতে যাতায়াতের পথই তৈরি করে নি, গত নয় মাসে কায়েম করেছে তাদের রাম রাজত্ব। এই প্রতিষ্ঠানটি এতিম শিশুদের বসবাস ও শিক্ষা গ্রহণের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান, যার নাম সরকারি শিশু পরিবার।

চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সরকারি শিশু পরিবারের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলেছিলো স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত। তারা কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো কথা না বলে দেয়ালটি ভেঙ্গে তাদের যাতায়াতের পথ তৈরি করেছে। ফলে শিশু পরিবারের শতাধিক এতিম শিশু, মেয়েসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) সেই পথ আবারো দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ রাতে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত শিশু পরিবারের পদ্মা ভবন সংলগ্ন উত্তর পশ্চিমের সীমানা প্রাচীরের প্রায় ৯ ফুট দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে। এরপর থেকে শিশু পরিবারের শতাধিক এতিম শিশু ও মেয়েসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে ছিলেন। প্রায়ই এসব দুর্বৃত্ত শিশু পরিবারে দিনরাত প্রবেশ করে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন করা, আড্ডা দেয়াসহ বিভিন্ন গাছের ফলফলাদি চুরি করে নিয়ে যেতো। কিন্তু দুর্বৃত্তদের ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পরতেন না।

শিশু পরিবারের একাধিক শিশু জানায়, তাদের সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে ফেলায় দিনে বা রাতে শিশু পরিবারের ভবন থেকে তারা বের হতে পারতো না। বের হলে বখাটে ছেলেরা তাদের সাথে ইভটিজিংসহ খারাপ আচরণ করতো। বিষয়টি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ছায়েফ উদ্দিন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। পরে বৃহস্পতিবার পুলিশি প্রহরায় নতুন করে সীমানা দেয়াল তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ছায়েফ উদ্দিন বলেন, এর আগে ২০১৮ সালে একই স্থানে একই দুর্বৃত্তরা শিশু পরিবারের ভেতর দিয়ে জোরপূর্বক চলাচলের চেষ্টা করলে তৎকালীন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রজত শুভ্র সরকার সেখানে সীমানা দেয়াল তৈরি করে দেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাতে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী মালি বাড়ির একদল দুর্বৃত্ত পুনরায় তাদের সীমানা দেয়াল রাতের অন্ধকারে ভেঙ্গে ফেলে। এরপর থেকে শিশু পরিবারের সবাই চরম আতঙ্কে দিন কাটাতেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বিষয়টি জানার সাথে সাথে পুলিশি সহায়তা নিয়ে নতুন করে আবারো সেখানে সীমানা দেয়াল তৈরি করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আমরা এবার সেসব দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। যাতে করে তারা আবার সরকারি সম্পত্তি জোরপূর্বক ভেঙ্গে প্রবেশ করে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর কিছু করতে না পারে।

চাঁদপুরের সরকারি এই শিশু পরিবারটি বাবুরহাট সরকারি এতিমখানা নামেই সাধারণ্যে বেশি পরিচিত। এটি অব্যবস্থাপনা, জনবল সঙ্কট, অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়ে কতোবার যে গণমাধ্যমের সংবাদের উপজীব্য হয়েছে, সেটা বলা কঠিন। এতিমরা যে কতো অসহায় সেটা বোধহয় এতিম ও তাদের অভিভাবক ছাড়া সংবেদনশীলতার সাথে অন্যরা খুব কমই উপলব্ধি করতে পারেন। এরা যেখানেই থাকুক, সেখানেই অবজ্ঞা-অবহেলার নানারূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। তাই বলে তাদের বসবাসের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়ালও ভাঙ্গা হবে? অথচ সেটিই বারবার হচ্ছে চাঁদপুরের সরকারি শিশু পরিবারটিতে। এবার সীমানা দেয়াল ভাঙ্গার নয় মাস পর চাঁদপুর জেলার সর্বোচ্চ সরকারি কর্তাব্যক্তি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেটি মেরামত করা হয়েছে। এজন্যে ভুক্তভোগীরা অবশ্যই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি, কিন্তু সীমানা দেয়ালটি ভাঙ্গার নয় মাস পর সেটি মেরামতের মধ্যে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অসহায়ত্ব ফুটে উঠেনি? এই অসহায়ত্ব কি ঢাকা যাবে? আমরা মনে করি, জেলা প্রশাসক তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যদি উল্লেখিত সীমানা প্রাচীরটি ভাঙ্গার সাথে জড়িত সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের দৃশ্যমান তৎপরতা প্রদর্শন করেন, তাহলে সরকারি শিশু পরিবারের অসহায়ত্ব কম-বেশি ঢেকে যাবে। আমরা এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার উদাসীনতাকে দায়ী না করে পারছি না। তিনি কি সরকারি শিশু পরিবারের সীমানা দেয়াল ভাঙ্গার সাথে সংশ্লিষ্টদের গডফাদার কিংবা অসীম শক্তিধর ভেবে নীরবতা পালন করেছেন, নিষ্ক্রিয় ছিলেন, না প্রচ্ছন্ন আপসকামিতায় নখদন্তহীন ছিলেন-সেটা সুধী-পর্যবেক্ষক, এমনকি অতি সাধারণ মানুষেরও ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়