প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ০৮:৩৪
প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশ ছাড়া এটা কীভাবে সম্ভব?

‘মতলব হাই স্কুলের ফলদ বৃক্ষ কেটে জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগ’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে রেদওয়ান আহমেদ জাকির যে শীর্ষ সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তাতে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদটিতে তিনি লিখেছেন, মতলবগঞ্জ জগবন্ধু বিশ্বনাথ (জেবি) সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মতলব সরকারি হাসপাতাল লাগোয়া পূর্ব-দক্ষিণ কোণায় ২৫ শতাংশ জায়গার ফলদ বৃক্ষ কেটে জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (৩ মে ২০২৫) বিষয়টি প্রাক্তন ছাত্র ও এলাকাবাসীর দৃষ্টিগোচর হলে প্রশাসনের সহযোগিতায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাবেদ হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, জনৈক নেয়ামত উল্লাহর তদারকিতে ৪/৫ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ওই বিদ্যালয়ের জায়গার আম, কাঁঠাল, জামরুল, লেবু গাছসহ প্রায় ৩০টি ফলদ বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়। ওই স্থানে গাছগুলো কেটে খণ্ড খণ্ড করে স্তূপ দিয়ে রাখা হয়। একাধিক এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের ছাত্ররা জানান, আম, কাঁঠাল ও লেবু গাছগুলোতে ফল ধরা অবস্থায় ছিলো। আমরা প্রায়শই এখানে এসে বিভিন্ন ফল ফলাদি খেতাম। এখন গাছগুলো কেটে ফেলায় আমরা ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম। কাঁঠাল ও আমগুলো বিদ্যালয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিগত বছরে এখানে বিদ্যালয়ের একটি বসত ঘর ছিলো, যেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মোস্তফা মিয়া দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন। এখন যদি বিদ্যালয়ের এ জায়গাটির প্রয়োজন হয়, তাহলে ইউএনও ও এসিল্যান্ড স্যারের মাধ্যমে জায়গাটি নিয়ম মোতাবেক কাজে লাগাতে পারে। নিয়ম বহির্ভূত কোনো কাজ প্রাক্তন ছাত্ররা ও এলাকার লোকজন মেনে নিতে পারছি না। এদিকে জায়গার পাশের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে শ্রমিকগণ গাছ কেটেছেন। স্যারকে কয়েকবার এখানে আসতে দেখেছি। এছাড়াও আমাদের দোকান ভেঙ্গে দু-একদিনের মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দিতে বলেছেন। তদারকির দায়িত্বে থাকা নেয়ামত উল্যাহ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (মো. মনজিল হোসেন)-এর কথা ও নির্দেশনা মোতাবেক আমি শ্রমিক দিয়ে গাছগুলো কেটে ফেলি। গত চারদিন যাবৎ এ কাজ চলছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনজিল হোসেন বলেন, আমি তাদেরকে গাছের ডালপালা ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে বলেছি। গাছ কাটার কথা বলিনি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাবেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি, ইউএনও স্যার প্রশিক্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রামে আছেন। স্যার আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের জায়গার গাছ কাটার বিষয়ে সভাপতি হয়েও আমি জানি না। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে কাজটি করা সঠিক হয়নি।
উপরোল্লিখিত সংবাদ বিবরণী পড়ে এটা কোনো পাঠকের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, প্রধান শিক্ষকের স্পষ্ট যোগসাজশে মতলবগঞ্জ সরকারি জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ফলদ বৃক্ষগুলো কেটে জায়গা দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। একজন সরকারি চাকুরিজীবীর এমন যোগসাজশ কিংবা প্রচ্ছন্ন লোভ যে কতোটা আত্মঘাতী হতে পারে সেটা যদি তিনি কোনো পরিণামের শিকার হন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, অন্যথায় নয়। এই পরিণাম থেকে বাঁচতে তিনি যদি তদবিরে তকদির ফেরাতে চান, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। তবে সরকারি জায়গা থেকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে গাছ কাটলে যে কতো সমস্যা হয়, সেটা ক্ষমতাধর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে লেখালেখিতে বিতর্কিত ও সমালোচিত হবার এবং পরিণামে ভোগার ২-৪ টি ঘটনার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যে। আমরা মনে করি, কালজয়ী ও কিংবদন্তীতুল্য প্রধান শিক্ষক ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারীর কারণে এককালে পুরো দেশখ্যাত মতলবের এই বিদ্যালয়টিতে ফলদ বৃক্ষ কাটার নামে বর্তমান প্রধান শিক্ষক যা করেছেন, সেটা নিন্দনীয়, ঘৃণ্য ও অমার্জনীয়। তার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রশাসন সহ স্থানীয় প্রশাসন যদি দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সেটা হবে অনেক হতাশার।