প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫২
মতলব উত্তরেই লাগাতার অভিযান হলো, অন্যত্র হলো না কেন?

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। এ মাছটির নিরাপদ আশ্রয়, বেড়ে ওঠা ও প্রজননের সুবিধার্থে ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রম আছে। সেগুলো হচ্ছে : বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত চলে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের দৈর্ঘ্যরে নিচের ইলিশ তথা জাটকা মৌসুম। এ সময়ে জাটকা ধরা ও বেচাকেনা নিষিদ্ধ থাকে। এই জাটকাকে ব্যাপকভাবে বাঁচিয়ে ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দু মাস উল্লেখিত ছয়টি অভয়াশ্রমের আওতাধীন নদী সমূহে জাটকাসহ সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। চাঁদপুরের অভয়াশ্রমটি মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই অভয়াশ্রমে জেলা টাস্কফোর্স, হাইমচর, চাঁদপুর সদর উপজেলা ও মতলব উত্তর উপজেলা টাস্কফোর্স কিংবা জেলা/উপজেলা মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ নিয়মিত/ লাগাতার অভিযান চালানোর কথা। আজ ৩০ এপ্রিল দু মাসের অভয়াশ্রমের শেষদিন। কিন্তু গণমাধ্যমের রিপোর্ট পর্যালোচনায় এবার মতলব উত্তর উপজেলা টাস্কফোর্স ছাড়া অন্য টাস্কফোর্স সমূহকে, এমনকি কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশকে নিয়মিত/ লাগাতার অভিযান চালাতে দেখা যায় নি। এর কুফলে মণে মণে, টনে টনে জাটকা ধরেছে অসাধু জেলেরা এবং সেসব জাটকা পাচারকালে মাঝে মাঝে জল ও স্থলপথে ধরা পড়েছে।
জ্বালানি সঙ্কটে নৌপুলিশ অভয়াশ্রমে ব্যাপক অভিযান চালাতে পারে নি বলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদে জানা গেলেও অন্যান্য মিডিয়া থেকে সেভাবে জানা যায় নি। এ জাতীয় সঙ্কটে জেলা মৎস্য বিভাগ কিংবা জেলা টাস্কফোর্স ভুগেছে কিনা সে ব্যাপারে তারা মুখ খোলেনি। অভয়াশ্রম চলাকালে মতলব উত্তর উপজেলায় টাস্কফোর্স ও পৃথকভাবে উপজেলা মৎস্য বিভাগকে জেলা টাস্কফোর্স, জেলা মৎস্য বিভাগ, হাইমচর ও চাঁদপুর সদরের টাস্কফোর্স ও মৎস্য বিভাগ, এমনকি কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় মনে হয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে। মতলব উত্তরে জ্বালানি সঙ্কট কিংবা অন্য অজুহাতের বিষয়ে কিছু জানা যায় নি। শুধুই জানা গেছে জলে ও স্থলে তাদের জাটকা রক্ষার নানা তৎপরতা। এটা বিশেষ কোনো প্রকল্পের আওতাধীন থাকা ও সেই প্রকল্পের অর্থায়নে সম্ভব হয়েছে কিনা সেটা জানা যায় নি।
তিক্ত হলেও এই সত্য অকপটে বলতেই হয়, এবার চাঁদপুরে ইলিশের অভয়াশ্রমে অতীতের তুলনায় অভিযান কম হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে অভয়াশ্রমের কোথাও কোথাও নানান কারণে অভিযান শিথিল রাখা বা থাকার অভিযোগ শোনা যেতো। গণমাধ্যমেও আসতো নৌপুলিশের থানা বা ফাঁড়ির অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মুখরোচক সংবাদ। এবার তেমন সংবাদও চোখে পড়ে নি। তাহলে মতলব উত্তর ছাড়া অন্যত্র মার্চ-এপ্রিলের অভয়াশ্রম চলাকালে অসাধু জেলেদের তৎপরতা কম ছিলো? পর্যবেক্ষকদের মাথায় এমন আরো কিছু প্রশ্ন আছে, যার জবাব অভয়াশ্রম শেষে ইলিশ প্রাপ্তির ভিত্তিতেই তারা খুঁজে নেবেন আশা করি।