শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৬

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পর মাদ্রাসা সুপার আটক-উদ্বেগজনক

অনলাইন ডেস্ক

শাহরাস্তিতে এসএসসি পরীক্ষায় হল সুপারের দায়িত্বে থাকা একটি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়ার কারণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হাতেনাতে ধরা ও পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা হজম করতে না করতেই ফরিদগঞ্জে এক মাদ্রাসা সুপার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক ধরা পড়লেন প্রশ্ন ফঁাস-চেষ্টায় এবং তিনিও আরো দুজন সহ পুলিশে হলেন সোপর্দ গত বুধবার। শাহরাস্তিতে প্রধান শিক্ষক আটক হওয়াটাকে তার ছাত্র ও ভক্তরা হলুদ সাংবাদিকতার শিকার বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাতামাতি করলেও ফরিদগঞ্জের মাদ্রাসা সুপার কোনটার শিকার সেটা নিয়ে এই সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখা পর্যন্ত জানা যায় নি। এই মাদ্রাসা সুপারের আটক নিয়ে চঁাদপুর কণ্ঠে গতকাল যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেটা একটু পড়ে নেয়া যাক। ‘ফরিদগঞ্জে দাখিল পরীক্ষার প্রশ্ন ফঁাস-চেষ্টার অভিযোগে মাদ্রাসা সুপারসহ আটক ৩’ শিরোনামের সংবাদটিতে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, ২০২৫ সালের চলমান দাখিল পরীক্ষার হাদিস বিষয়ের প্রশ্ন ফঁাস করার চেষ্টার অভিযোগে ফরিদগঞ্জে এক মাদ্রাসার সুপারসহ তিনজন আটক হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল ২০২৫) ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার ও পুরাণ রামপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মফিজুর রহমান বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় বুধবার (২৩ এপ্রিল ২০২৫) লিখিত অভিযোগ করেন। আটককৃতরা হলেন : ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের এখলাশপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও. ইকরাম হোসাইন হামিদ (৪৬), ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী ইসমাইল হোসেন (৩২) ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী তারেকুল ইসলাম (৩০)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া।

           জানা গেছে, বুধবার ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার হাদিস বিষয়ে পরীক্ষা চলছিলো। পরীক্ষা চলাকালীন ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী ইসমাইল হোসেনকে দিয়ে অফিস সহকারী তারেকুল ইসলাম মাদ্রাসার দোতলার পরীক্ষা হলের ১০নং কক্ষ থেকে হাদিস পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি তুলে আনেন। পরে তিনি কেন্দ্রের বাইরে থাকা চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের এখলাশপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও. ইকরাম হোসাইন হামিদের হোয়াটসঅ্যাপে ডকুমেন্ট আকারে পাঠান। পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, হাদিস বিষয়ে পারদর্শী মাও. ইকরাম হোসেন হামিদ হয়তোবা প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করার চেষ্টা করতেন বা করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের নজরদারির বাইরে গিয়ে এমন জঘন্য কাজ করার দুঃসাহস কীভাবে এরা দেখায়? এই ঘটনার কারণে মাদ্রাসা কেন্দ্রের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এর সাথে যে বা যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। প্রশ্ন ফঁাসের বিষয়টি গোপন সূত্রে সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া মাদ্রাসার হল সুপার মাও. মফিজুর রহমান এবং অভিযুক্ত অন্য দুজনকে তঁার কক্ষে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময়ে এখলাশপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও. ইকরাম হোসাইন হামিদের হোয়াটসঅ্যাপে ডকুমেন্ট আকারে ওই প্রশ্ন দেখতে পান। যা ইসমাইলের মুঠোফোন থেকে তাকে পাঠায় বলে নিশ্চিত হন। পরে অভিযুক্তদের তিনি পুলিশের হাতে তুলে দেন।

           এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানান, প্রশ্ন ফঁাসের চেষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপারকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার নিদের্শনা দিয়েছি। একই সাথে অভিযুক্তদের থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহআলম জানান, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার পুরাণ রামপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মফিজুর রহমান বাদী হয়ে প্রশ্ন ফঁাসের চেষ্টার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা দায়েরপূর্বক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্তরা বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন।

           এই সংবাদটি পড়ে কোনো পাঠকের বা অন্য কারো কি উপরোল্লিখিত মাদ্রাসা সুপার হলুদ সাংবাদিকতা বা কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার বলে কি মনে হয়?-নিশ্চয়ই নয়। তিনি তার মাদ্রাসার ছাত্রীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাদিস বিষয়ে উত্তর সরবরাহের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রমাণসাপেক্ষে ধরা পড়েছেন এবং মামলায় দুজন সহযোগী সহ আইনি পরিণতি ভোগ করবেন-এটাই বাস্তব। শাহরাস্তিতে আটক প্রধান শিক্ষক হল সুপার হয়েও সরাসরি উত্তর বলে দেয়ার জন্যে আইনি পরিণতি ভোগ করবেন-এটাই নিশ্চিত। কথা হলো, এই দুজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নৈতিকতা কতোটা নিম্নমানের হলে তারা পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়া বা সরবরাহের কাজটি করতে গিয়ে নিজের পেশাগত ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেন? এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষায় নিজ শিক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে পাস করানোর এমন অপচেষ্টায় আর্থিক বা অন্য সুবিধা লাভ করা যায় বটে, কিন্তু বিবেকের দংশন ও পরকালীন কঠিন শাস্তি থেকে কি রেহাই পাওয়া যাবে? পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন এখন পরীক্ষার্থীর সাথে নকল, বই ইত্যাদি বহন করার ঝুঁকির মধ্যে আর নেই, যেখানে কিছু প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, সুপার সহ সহকারী শিক্ষক প্রকাশ্য/গোপন চুক্তিতে উত্তর বলে দেয়া বা সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। বিষয়টি উদ্বেগজনক, অনেক দুঃখজনক, ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়