মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৩১

আমাদের স্বাধীনতা : যে চারা আজও হয়নি মহীরুহ

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের স্বাধীনতা : যে চারা আজও হয়নি মহীরুহ

জীবনের প্রতি নিঃশ্বাসে স্বাধীনতা অপরিহার্য। স্বাধীনতাহীনতায় কোনো জাতি যেমন উন্নত হতে পারে না তেমনি জীবনেও পূর্ণতা অর্জন করতে পারে না। মানুষ জন্মমাত্র স্বাধীন হলেও কখনও কখনও সাম্রাজ্যবাদী শাসকশ্রেণির শোষণ-নিপীড়নে সে স্বাধীনতা হরণ হয়ে যায় এবং দাসত্ব চেপে বসে। হাজার বছর আগে বাঙালি জাতির উন্মেষ হলেও স্বাধীনতা ছিলো তার সোনার হরিণ। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের অন্যতম পদকর্তা ভুসুকু পা’র চর্যা হতে জানা যায়, বাঙালি বহিঃশত্রুর আক্রমণে বার বার লুণ্ঠিত হয়েছে তার অবারিত ঐশ্বর্যে, তার অন্তহীন সম্পদ ও সৌন্দর্যে। নিজের মাংস যেমন খোদ হরিণ নিজের জন্যেই বৈরি বা অরি, তেমনি বাংলার সম্পদ ও সৌন্দর্য তার স্বাধীনতার পথে ছিলো বড় অন্তরায়। বর্গী-পাঠান-মোঘলের শোষণ-অত্যাচার পেরিয়ে ডাচ-ফরাসী-ইংরেজদের হাতে বাঙালি বারে বারে শোষিত ও প্রতারিত হয়েছিলো। উনিশশো সাতচল্লিশের দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভাজনে এ ভূমির মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলো স্বাধীন হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। কিন্তু সে স্বপ্নসৌধ তেইশ বছরে ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে কংসের কারাগারে। স্বাধীনতার পরিবর্তে বাঙালির হাতেপায়ে লেগেছে দাসত্বের বেড়ি। বাহান্নের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয়দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনে ধাপে ধাপে এনে দিয়েছে স্বাধীনতার অমোঘ মুক্তি। একাত্তরের সাত মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণ বিশ্বমঞ্চে আমাদের স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে অনিবার্যরূপে। অপারেশন ব্লিৎজ্ হতে অপারেশন সার্চ লাইটের গণহত্যায় জন্ম নেয় বাঙালির নিজস্ব মানচিত্র, স্বতন্ত্র পতাকা যা লাল-সবুজের রূপ নিয়ে আমাদের দিশা দিয়েছে মুক্তির। ছাব্বিশে মার্চের প্রথম প্রহরে বেতারে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যায় কালের অমোঘ বার্তা। নয়মাস অকুতোভয় লড়াইয়ে তিরিশ লাখের জীবন বিসর্জনে আমরা পেয়েছি শৃঙ্খল মুক্তির স্বাধীনতা। আজ সেই স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছরের অভিযাত্রা। এ মহান দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি শহীদ ও জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে, সকল বীরাঙ্গনা মা-বোনকে, মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর সহযোগীদের।

কিন্তু চুয়ান্ন বছর পার হলেও, একাত্তরের মীমাংসিত মহান অর্জন আজও কারও কারও ভাষ্যে-হাস্যে, বচনে-লাস্যে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে উঠছে, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে তোলারও চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরপেক্ষতার দোহাইয়ে মূল ভূমিকার মহৎ ব্যক্তিরা যেমন অসম্মানিত হচ্ছেন, তেমনি বিরোধিতাকারীরাও পাচ্ছে বীরের তকমা। সঠিক ইতিহাসের স্বার্থে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে সকল ধরনের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে। মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে রক্তে অর্জিত মহান পতাকা বেঁধে আজ কেউ কেউ নতুন করে একাত্তর ও স্বাধীনতার বিরোধিতা করছেন আকারে-ইঙ্গিতে বা সরাসরি। এসব অপতৎপরতা অনভিপ্রেত। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে, রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টিকে বিতর্কিত করা চলবে না এবং এর চেতনাকে সর্বাবস্থায় সমুন্নত রাখতে হবে। শুধু গদি দখলের জন্যে নয়, বরং একটি মানবিক ও উন্নত বাংলদেশ বিনির্মাণের নতুন স্বপ্নে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। তবেই শহীদের রক্তদান মর্যাদান্বিত হবে। একাত্তরে যে স্বাধীনতার সবুজ চারা আমরা রোপণ করেছিলাম, চুয়ান্ন বছরে তা আজও হয়নি মহীরুহ। নানা ঘাত-সংঘাত ও ষড়যন্ত্রে আজও স্বাধীনতা বিপন্ন, বিপদ সংকুল। একটা কথা চিরকাল স্মরণে রাখতেই হবে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তাকে রক্ষা করা কঠিন। কোনো অবস্থাতেই যেন অর্জিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত না হয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই লাল-সবুজের পতাকাকে কলঙ্কিত করতে না পারে। এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর পরেও এর প্রকৃত সুফল জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছেনি। যতদিন এর সুফল প্রতি ঘরের চৌকাঠ পার না হবে ততদিন এ রক্ত বিসর্জন সার্থক হবে না। তাই আজও কবি শামসুর রাহমান প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন,

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,

তোমাকে পাওয়ার জন্যে

আর কতবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায়?

আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?

নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক

এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়