রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:১৭

তাই বলে বেড়িবাঁধের মাটিও! এদের দৌরাত্ম্য রোধের কি কেউ নেই?

অনলাইন ডেস্ক
তাই বলে বেড়িবাঁধের মাটিও! এদের দৌরাত্ম্য রোধের  কি কেউ নেই?

‘হামানকর্দি বেড়িবাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়’ শিরোনামটিই উদ্বেগ ছড়িয়েছে পাঠকদের মাঝে। এই শিরোনামের সংবাদটি চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়েছে। সংবাদটিতে সোহাঈদ খান জিয়া লিখেছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নের হামানকর্দি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রি করা হয়। জানা যায়, স্থানীয় কিছু মাটি ব্যবসায়ী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কৃষি জমির মাটি ক্রয় করে। ক্রয়কৃত মাটি কেটে তারা ট্রলার যোগে ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করে। যার ফলে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এমনিতে জন্মের পরে বেড়িবাঁধের কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। যার ফলে দিন দিন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধে থাকা লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলোর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে বড়ো বড়ো গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এতে সরকার লাভবান হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে বলেন, কিছু মাটি ব্যবসায়ী বাঁধ সংলগ্ন জমির মালিকদের নিকট হতে মাটি ক্রয় করে। মাটি ক্রয় করার সময় বাঁধ থেকে দূরত্ব না রেখে বাঁধ সংলগ্ন স্থান পর্যন্ত সীমানা দিয়ে মাটি ক্রয় করে কেটে নিয়ে আশপাশের ইটভাটায় নিয়ে যায় । এসব মাটি বর্ষা মওসুমে মৈশাদী, হামানকর্দি ও শাহতলীর ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করে থাকে। শুষ্ক মওসুমে হামানকর্দির ইটভাটায় বেশি বিক্রি করা হয়। এমনকি বর্ষা মওসুমে বাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ কথা বলতে সাহস পায় না। এভাবে মাটি নিতে থাকলে বেড়িবাঁধ একদিন বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ইটভাটার মালিক মনির ভুঁইয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে হামানকর্দি বেড়িবাঁধের ভেতরের ফসলি জমি ও বাঁধ সংলগ্ন জমির মাটি শাহতলী ও মৈশাদীসহ বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করে ট্রলার মালিকরা। ইটভাটার মালিকরা কোনো মাটি কিনেন না।ট্রলার মালিকদের নিকট হতে ভাটার মালিকরা মাটি ক্রয় করেন। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের পাশ থেকে জমিনের যে মাটি কাটা হয় তাও ট্রলার মালিকরা ক্রয় করে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করেন। আমরা ট্রলার মালিকদের নিকট হতে মাটি কিনে থাকি।

আমাদের চাঁদপুর অঞ্চলে বালুখেকোদের ড্রেজার-সন্ত্রাস, মাটিখেকোদের ট্রলার-সন্ত্রাস, ট্রাক্টর-সন্ত্রাস আর ভেকু-সন্ত্রাস অতি সাধারণ বিষয়। নদীতে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশের টহল আছে বলে প্রায়শই বালুখেকোদের ড্রেজার ও বালুবাহী বাল্কহেড ধরা পড়ে। কিন্তু মাটিখেকোদের ট্রলার, ভেকু ও ট্রাক্টর কালেভদ্রে ধরা পড়ে। যে কারণে যত্রতত্র ট্রলার, ভেকু ও ট্রাক্টরের সন্ত্রাস অনেকটা নির্বিঘ্নভাবে চলে। ট্রলার, ট্রাক্টর ও ভেকুর মাধ্যমে যারা মাটির ব্যবসা করে, তারা প্রধানত ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, মোড়ল, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় টাউট-বাটপারদের ম্যানেজ করে চলে। এদের সন্ত্রাস প্রতিহত করতে ইউনিয়ন পরিষদকেই রাখতে হয় প্রথম ভূমিকা। কিন্তু প্রকাশ্য-গোপন সমঝোতার কারণে এই ভূমিকায় ইউনিয়ন পরিষদের কাউকে দেখা যায় না বললেই চলে। প্রতিবাদী ও সচেতন কেউ স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এমন মাটি ব্যবসায়ীদের খুবই বিরলভাবে শায়েস্তা করে, যার আবার নেই ধারাবাহিকতা। যে কারণে একবার দণ্ডিত হয়ে কোনো কোনো মাটি ব্যবসায়ী কয়েকগুণ তৎপর হয়ে যায়। আমরা মনে করি, চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের হামানকর্দি বেড়িবাঁধে মাটি ব্যবসায়ীদের যে দাপট চলছে, তাতে মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের বিরাট গাফলতি ও উদাসীনতা রয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ এলাকার ইউপি মেম্বারের নীরবতা ও উদাসীনতা তো প্রশ্নবোধক। কৃষিজমির মালিক মাটি বেচবে, তাই বলে কি বেড়িবাঁধের মাটিও ট্রলার মালিক কেটে নিয়ে যাবে? এটা কি মগের মুল্লুক? ট্রলার মালিক তথা মাটি ব্যবসায়ীরা কি এতোটাই ক্ষমতাধর? আমরা আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখেই যেনো প্রশ্নগুলোর জবাব জানতে চাই।

উল্লেখ করা দরকার, মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম শেখ আব্দুল মান্নানের সৃষ্টি এই হামানকর্দি বেড়িবাঁধ। এই বাঁধটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর কবল থেকে ফসল ও জনপদ রক্ষা, এ নদীর পানি সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, বনায়ন ও পার্শ্ববর্তী বাগাদী ইউনিয়নের সাথে মৈশাদী সহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সংক্ষিপ্ত যাতায়াতে ব্যবহৃত হতো। লোকজন স্বল্প খরচে ডাকাতিয়ার খেয়াপার হয়ে এই বাঁধ দিয়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো। মাটি কাটার ট্রলার মালিকরা তাদের সুবিধার্থে এই বাঁধটিকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় লোকজন বাঁধের ওপর হাঁটতে পারে না। তাই স্বল্প খরচের খেয়াপার আর নেই। এখন বেশি খরচে শাহতলী থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বাগাদী ইউনিয়নে যাতায়াত করতে হয়। সবশেষে লিখতে হয়, একটি বেড়িবাঁধকেন্দ্রিক মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রোধের কেউ কি নেই?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়