প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:০৩
হাইমচরের রনি : এক সম্ভাবনার নাম

‘নিজ বাড়িতে জামদানি শাড়ি বুনে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হাইমচরের রনি’ শিরোনামে চঁাদপুর কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. মিজানুর রহমান গতকাল লিখেছেন একটি ছোট প্রতিবেদন। এতে তিনি হাইমচরের রনি পাটওয়ারী সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি ৩নং দক্ষিণ আলগী দুর্গাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। প্রতিনিয়ত নিজ এলাকা ছাড়িয়ে এই জামদানি শাড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া এই উদ্যোক্তা। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, দিনব্যাপী নিজের একটি দোচালা টিনের ঘরে ক্ষুদ্র পরিসরে জামদানি শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রনির পিতা বিল্লাল পাটওয়ারী বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে পারিবারিক অভাব কাটাতে রনি হাইমচর ছেড়ে পাড়ি জমায় নারায়ণগঞ্জে। পরে সেখানে নানা জায়গায় থেকে জামদানি কাপড় বোনার পুরো কাজ রপ্ত করে সে পুনরায় এলাকায় ফিরে আসে। একাডেমিক পড়াশোনা না থাকলেও এখন এই শাড়ি বিক্রিতেই রনি সংসারের হাল ধরেছে। এতে অনেকটা আপ্লুত আমরা সবাই। রনির মা সালমা বেগম বলেন, সুতা, নাটাই, কাঠের ফ্রেম, কেচিসহ নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে একা হাতে এক একটি জামদানি তৈরি করতে রনির ৩/৪ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। তাই নানা প্রান্ত থেকে অর্ডার আসলেও তা ডেলিভারি দিতে ওর সময় লেগে যাচ্ছে। যদি সামথর্যবানরা এগিয়ে আসতো তাহলে রনির এখানে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো।
জামদানি শাড়ি তৈরির উদ্যোক্তা রনি পাটওয়ারী বলেন, আমাদের ৭ ভাই-বোনের মধ্যে এখন আমি জামদানি শাড়ি তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছি। তবে এ কাজটিতে আরও অনেকের কর্মসংস্থান তৈরির প্রত্যাশা রয়েছে। এজন্যে আমার চাই সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহায়তা।
রনি পাটোয়ারী আরও বলেন, আমার তৈরি এক একটি জামদানি শাড়ির বর্তমান মূল্য ৩৭শ’ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা। তবে যে কারো চাহিদানুযায়ী অর্ডার পেলে ৪/৫ লাখ টাকা দামের জামদানি শাড়ি তৈরিতেও আমি পারদর্শী। আমার এ কাজকে এগিয়ে নিতে আমি সবার দোয়া চাই।
এ বিষয়ে হাইমচরের ৩নং দক্ষিণ আলগী দূর্গাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুল জলিল বলেন, রনির জামদানি শাড়ির এই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানকে অনেক বড়ো করতে আমার পরিষদ থেকে সহায়তা থাকবে। আমি চাই এই শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাক। হাইমচরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, প্রশাসনিক বিভিন্ন মেলায় এই জামদানি শাড়িকে তুলে ধরাসহ এ শিল্পটিকে ছড়িয়ে দিতে রনির এই শিল্প তৎপরতাকে ঘিরে আরও ব্যাপকভাবে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হবে। ওর যে কোনো সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।
হাইমচরের রনি পাটোয়ারী নিঃসন্দেহে একটি সম্ভাবনার নাম। তার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যান অনেক ইতিবাচক। তঁারা উভয়ে রনির পাশে দঁাড়ালে জামদানি শাড়িকেন্দ্রিক রনির সফল উদ্যোক্তা হওয়াটা কঠিন বিষয় নয়। তবে তঁাকে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে বা অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করা বাঞ্ছনীয়। নির্ভার তথা চাপমুক্ত অবস্থায় রনিকে তার শিল্প বিকাশে সহায়তা করলে এটি যেমন বাণিজ্যিক সফলতা দেবে, তেমনি অনেকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। সবচে’ বড়ো কথা, নানা বিপন্নতায় আক্রান্ত হাইমচরকে নূতনভাবে পরিচিতি দেবে। আমরা অতিরিক্ত কিছু প্রত্যাশা করি না, তবে যে কোনো সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে প্রণোদনা, পৃষ্ঠপোষকতার গুরুত্বকে অস্বীকার করতে পারি না।