প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১৯
ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসীদের বাংলাদেশ ভাবনা

গত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশকে এখন ভিন্ন আরেকটি বাংলাদেশ হিসেবে দেখছেন ইউরোপে বসবাসকারী প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক, মানবাধিকার কর্মীসহ চাকরিজীবী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে রয়েছে হতাশা।
পাশাপাশি অভিযোগ, দেশে এর আগে কোনো আইনের সুশাসন ছিলো না। প্রশাসনের দলীয়করণে সাধারণ জনগণের জীবন চলার পথ এক প্রকার অস্বস্তিতে ছিল। এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর আ’লীগের রাজনীতি থেকে অনেকেই এখন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের শক্ত বিচরণ, যা দৃশ্যমান বলে প্রবাসীদের ধারণা।
এদিকে আইন শৃংখলার চরম অবনতিতে ভয়-আতংক, উদ্বেগ জনমনে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত চলছে। এ ব্যাপারে অনেকের দাবি, সাবেক সরকারের আমলে সমালোচনা করলেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। এজন্যে দিতে হতো চড়া মাশুল। সেদিকে বিবেচনা করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভাল বলেই সবাই উন্মুক্ত সমালোচনা করতে পারছেন। তারা মনে করেন, কঠোর জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে।
উন্মুক্ত আলোচনা-সমালোচনার মাঝে আগামীর বাংলাদেশ সম্পর্কে সৃজনশীল প্রবাসীরা যা বলেনÑ
সুইডেন প্রবাসী লেখক ও মানবাধিকার কর্মী রহমান মৃধা বলেন, এমন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, যেখানে দুর্নীতি, স্বৈরশাসন এবং অগণতান্ত্রিক শাসন থাকবে না, কেবল তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এবং সমানভাবে বাঁচতে পারবে। সাধারণ মানুষের দেশ চাই, চাই মুক্ত মানুষের দেশ।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী কলাম লেখক ও গবেষক ড. আজিজুল আম্বিয়া বলেন, একটা দেশের যদি গৌরবময় ইতিহাস না থাকে, তবে সে জাতি অস্তিত্ব সংকটে ভোগে। তাই যারা দেশে বৈষম্যবিরোধী বলে ইতিহাসসহ অনেক কিছুতেই বৈষম্য তৈরি করছেন, বিভিন্ন কাজে এখন দেশের একটা অংশ আপনারা প্রমাণ করছেন, তাতে দৃশ্যমান হয়েছে এই দেশ জঙ্গিযুক্ত। আর এই বাংলাদেশ কখনো ধর্ম এবং সংস্কৃতির অবাধ স্বাধীনতা দিতে পারে না। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনোদিন সাংবাদিকরা বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলে থাকতে পারে না। পৃথিবীর মানুষ জানে, সাংবাদিকরা মানুষ হত্যা করার মত খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পারে না। তাই প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের মিথ্যা মামলা থেকে জামিন বা খালাস করে দিবে সরকার এটা আশা করছি। বাংলাদেশের মধ্যে সংখ্যালঘু শব্দটিকে আর শুনতে চাই না। আর দেশের সম্পদ ও ইতিহাস বুলডেজার দিয়ে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র যেন আর না করা হয়। অচিরেই দেশের সব দল এবং মানুষের মতামত নিয়ে নির্বাচন করার সুষ্ঠু পরিবেশ করে দিবেন সরকার এবং জেল ও জুলুমমুক্ত করবেন রাজনৈতিক নেতাদের, যারা নির্বাচন করবেন। জাতিকে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিবেন ড. ইউনুস সাহেব, এই প্রত্যাশা করছি।
পর্তুগাল প্রবাসী সাংবাদিক ও ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ পাটওয়ারী বলেন, দুর্নীতি এবং দরিদ্রতাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দরিদ্রতা দূরীকরণের জন্যেও দুর্নীতি অন্যতম বড়ো বাধা। অর্থাৎ যদি দুর্নীতি দূর করা যায়, তাহলে আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ পাবো। তাছাড়া দুর্নীতি রোধ করা গেলে আমরা খুব সহজেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। দুর্নীতিপরায়ণতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভঙ্গুর করে রেখেছে। বিশ্বের মাঝে তাকালেই আমরা দেখতে পাই, যেই দেশ যতোটা দুর্নীতিমুক্ত সেই দেশ ততোটা উন্নত।সুতরাং দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত অর্থনীতির সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবো।
ইতালি প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী ও শতরূপা মানবিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক মোল্লা বলেন, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে তরুণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গড়তে চাই।
এস্তোনিয়া প্রবাসী সিরাজুল মোস্তাকিম পিয়াল কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে বলেন, ১. স্বাস্থ্যসেবা : কৃষক, জেলে ও গার্মেন্টস কর্মীদের জন্যে বিনামূল্যে সাধারণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ২. নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম : সরকার ভাত, ডাল, ডিম, তেলসহ সাধারণ খাবারের মূল্য নির্ধারণ করবে, যেন সব শ্রেণির মানুষ তা সহজে পেতে পারে। ৩. বিলাসবহুল পণ্যে কর : জনসাধারণের প্রয়োজন নয় এমন বিলাসবহুল পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর বসাতে হবে। ৪. শিক্ষা ব্যবস্থা : সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ভর্তুকি বাতিল, তবে ছাত্রদের জন্যে স্কলারশিপ ও গবেষণা তহবিল বাড়াতে হবে। ৫. দক্ষতা উন্নয়ন : মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে একটি স্কিল বা ব্যবহারিক জ্ঞানের বিষয় সংযোজন বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৬. কর্মসংস্থান : মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে। যারা ব্যবহারিক দক্ষতায় ভালো করবে, তারা বিশেষ ছাড় পাবে। ৭. সবার নিরাপত্তা : মা, বোন, পিতা, ভাই, বন্ধু, প্রেমিক, প্রেমিকা, কবি, পাগল, মুসলিম, হিন্দু, পাহাড়ি, সমতলের সকল নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. সরকারি পদে প্রবাসীদের নিষেধাজ্ঞা : যারা বিদেশি পিআর বা পাসপোর্টধারী তারা সরকারি আমলা, চাকরি বা রাজনৈতিক পদে অযোগ্য বলে গণ্য হবে। ৯. আইনের কঠোর প্রয়োগ : আইনের শাসন নিশ্চিত করতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্যে সমান আইন এবং আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর শৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ১০. অর্থ পাচার রোধ : দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ১১. সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, তার বদলে ছাত্র সংগঠন ও ঝঅঅজঈ-কে পুনর্গঠন এবং এর আওতায় তরুণদের মত সুবিধা দেওয়া।