মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৫০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

রমজানের সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য মুত্তাকী হওয়া

এএইচএম আহসান উল্লাহ
রমজানের সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য মুত্তাকী হওয়া

বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান, ধৈর্যের মাস মাহে রমজান, শান্তি, ক্ষমা ও মুক্তির মাস মাহে রমজান। একজন মুসলমান নিজেকে মুমিনে কামিল তথা মুত্তাকী রূপে পরিণত করার উপযুক্ত সময় মাহে রমজান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন একটি মহান মাস উম্মতে মোহাম্মদীকে তোহফা হিসেবে দিয়েছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের দেড় বছর পর অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রমজান মাসের রোজা ফরজ হয়। এই রোজাকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পাকে সওম ও সিয়াম শব্দে সম্বোধন করা হয়েছে। এই সিয়াম সাধনার তাৎপর্য ব্যাপক। নিছক কোনো উপবাস থাকা বা সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। আল্লাহ মুমিন মুসলমানের ওপর সিয়াম বা রোজাকে ফরজ করেছেন একজন মুমিন যেনো নিজেকে মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। আর মুত্তাকী হতে হলে সিয়াম সাধনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিজের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সিয়াম সাধনার দিকগুলো নিজের প্রাত্যহিক জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ইসলাম মানব জীবনের আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার যেসব পদ্ধতি নির্ণয় করে দিয়েছে ‘সিয়াম’ বা রোজা পালন তার মধ্যে প্রধানতম। রোজা শব্দটি ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় প্রচলিত। আরবি ভাষায় পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে রামাদ্বান (রমজান) ও সাওম এ দুটি শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে। ‘সিয়াম’ ‘সাওম’ শব্দ হতে উৎপত্তি। ‘সাওম’-এর বহুবচন হচ্ছে সিয়াম। অর্থ বিরত থাকা। আর রমজান শব্দের মূলধাতু হচ্ছে ‘রামযুন’। রমজানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়া। অর্থাৎ মাহে রমজানের রোজা একজন মুসলমানের পেছনের ১১ মাসের গুনাহ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়। এটাই হচ্ছে রমজান নামকরণের মর্মার্থ। আসলে সত্যিই আমরা যদি রমজানের বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত সকল দিক মেনে রমজানের রোজা পালন করি তাহলে অবশ্যই এই রোজা আমাদের পেছনের ১১ মাসের সকল গুনাহকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেবে। আর তখনই আমরা হয়ে যাবো আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং পুত-পবিত্র একজন মানুষ।

পবিত্র কোরআনুল কারীমে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আয়াত হচ্ছে--অর্থ : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিলো, যেনো তোমরা মোত্তাকী বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৩)। এই আয়াতের মর্মার্থ খুঁজলে প্রধানত দু’টি বিষয় পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে : রোজা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যেই ফরজ করা হয়নি বরং পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের জামানায় তাঁদের উম্মতদের উপরও ফরজ করা হয়েছিলো। অপরটি হচ্ছে : রোজার উদ্দেশ্য এই আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে মোত্তাকী বা খোদাভীরুতা অর্জন করা। যেটিকে আত্মার পরিশুদ্ধতা বলা হয়।

এক মাসের সিয়াম সাধনা পূর্ণাঙ্গভাবে অর্জন করতে পারলেই একজন মুমিন মুত্তাকীতে পরিণত হবে। আর মুত্তাকীদের সমাজই হতে পারে বৈষম্যহীন, শোষণ-বঞ্চনাহীন এক সাম্য মৈত্রীর সমাজ। যার দৃষ্টান্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের স্বর্ণযুগ।

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা হয়, রিপুর তাড়না তথা মনের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা হয়। মুত্তাকী, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি-- এগুলো সমার্থবোধক শব্দ। যার সহজ বাংলা হচ্ছে--খোদাভীরুতা অর্জন। 'তাকওয়া'র অর্থ হচ্ছে--সব ধরনের অমানবিক এবং শরীয়তবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করা। মিথ্যাচার, পাপাচার, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মজুদদারি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে নিরাপদ এবং বিরত রাখাই হলো রামাদ্বানের মূল বৈশিষ্ট্য। রোজা সহমর্মী, সমব্যথী হওয়া শেখায়। ফকির, মিসকিন, হতদরিদ্রকে তার ন্যায্য পাওনা পরিশোধ তথা জাকাত-ফিতরা শরীয়ত সম্মত পন্থায় আদায় করার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে রমজান মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আর এগুলোই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন তথা মুত্তাকী হওয়ার বৈশিষ্ট্য। আর একেই বলা হয় সিয়াম সাধনা। একজন মানুষ যদি পুরো একটা মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে তার মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করে নেয়, তাহলে বছরের বাকি ১১ মাস সে মানুষটি তাকওয়া ভিত্তিক জীবন পরিচালিত করবে। তখন আর তার দ্বারা অপরাধ, অমানবিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হবে না। আর তখনই তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন হয়ে যাবে। সে জন্যেই রমজান মাসের সিয়াম সাধনা হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

আর যদি রোজাও রাখলাম, পাশাপাশি সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, মজুদদারি, পাপাচার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি গর্হিত ও অমানবিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখলাম, তাহলে এই রোজা শুধুমাত্র উপবাস করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে আল্লাহ এবং প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। সুতরাং আমরা যেনো রমজানের রোজার অন্তর্নিহিত দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সিয়াম সাধনা পুরোপুরি অর্জনের মাধ্যমে রমজানের রোজাগুলো অতিবাহিত করি। রাব্বুল আলামিন যেনো আমাদের মনোবাসনা সেদিকে ঝুঁকিয়ে দেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়