প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:২২
সিয়াম সাধনা হতে পারে সমাজ পরিবর্তনের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা

আহলাম সাহলান মাহে রামাদ্বান। শুরু হলো কোরআন নাজিলের মাস রমজান। ইবাদত-আমলের বসন্তকাল রমজান। মুমিন মুসলমান নিজেকে মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলার মাস রমজান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে এসেছে মহিমান্বিত মাস রমজান। পবিত্র কোরআনে পাকে সিয়াম এবং রমজান উভয় শব্দই এসেছে। রমজান মাসের প্রধানত দাবি হচ্ছে এক মাস সিয়াম সাধনা। আর এই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুত্তাকী হওয়া। যা কোরআনে পাকে রমজানের রোজা ফরজ হওয়া সংক্রান্ত আয়াতে কারীমায় উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, আমি ঈমানদারদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছি এ জন্যে যে, যাতে তারা মুত্তাকী হয়। এখন আমাদের জানতে হবে মুত্তাকী হতে হলে রমজানের রোজাকে কীভাবে সিয়াম সাধনায় রূপ দিতে হবে।
এক মাসের সিয়াম সাধনা করতে পারলেই একজন মুমিন মুত্তাকীতে পরিণত হবে। আর মুত্তাকীদের সমাজই হতে পারে বৈষম্যহীন, শোষণ-বঞ্চনাহীন এক সাম্য মৈত্রীর সমাজ। যার দৃষ্টান্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের স্বর্ণযুগ। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা হয়। রিপুর তাড়না তথা মনের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা হয়। মুত্তাকী, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি--এগুলো সমার্থবোধক শব্দ। যার সহজ বাংলা হচ্ছে--খোদাভীরুতা অর্জন। 'তাকওয়া'র অর্থ হচ্ছে, সব ধরনের অমানবিক এবং শরীয়তবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করা। মিথ্যাচার, পাপাচার, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি গর্হিত কাজ থেকে নিজেকে নিরাপদ এবং বিরত রাখাই হলো রমজানের মূল বৈশিষ্ট্য। রোজা সহমর্মী, সমব্যথী হওয়া শেখায়। ফকির, মিসকিন, হতদরিদ্রকে তার ন্যায্য পাওনা পরিশোধ তথা জাকাত-ফিতরা শরীয়ত সম্মত পন্থায় আদায় করার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে রমজান মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আর এগুলোই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন তথা মুত্তাকী হওয়ার বৈশিষ্ট্য। একেই বলা হয় সিয়াম সাধনা। একজন মানুষ যদি পুরো একটা মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে তার মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করে নেয়, তাহলে বছরের বাকি ১১ মাস সে মানুষটি তাকওয়াভিত্তিক জীবন পরিচালিত করবে। তখন আর তার দ্বারা অপরাধ, অমানবিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হবে না। তখনই তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন হয়ে যাবে। সে জন্যেই রমজান মাসের সিয়াম সাধনা হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।
আর যদি রোজাও রাখলাম, পাশাপাশি সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পাপাচার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি গর্হিত অমানবিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখলাম, তাহলে এই রোজা শুধুমাত্র উপবাস করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে আল্লাহ এবং প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। সুতরাং আমরা যেনো রমজানের রোজার অন্তর্নিহিত দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সিয়াম সাধনা পুরোপুরি অর্জনের মাধ্যমে রমজানের রোজাগুলো অতিবাহিত করি। রাব্বুল আলামিন যেনো আমাদের মনোবাসনা সেদিকে ঝুঁকিয়ে দেন।