মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০

প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটিকে সমস্যামুক্ত করুন

অনলাইন ডেস্ক
প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটিকে সমস্যামুক্ত করুন

‘জনবল সংকটে ফরিদগঞ্জ ভেটেরিনারি হাসপাতাল ॥ চিকিৎসাসেবা ব্যাহত’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ চরবড়ালি গ্রামে কয়েক বছর পূর্বে স্থাপিত ঈগল এগ্রো ফার্মের অংশীদার এমএম টুটুল পাটওয়ারী জানান, গবাদি পশু লালন পালনে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃহত্তর ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গরু ছাগলের আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা না থাকার ভুক্তভোগী আমরা নিজেরাই। পরিমাণ মতো ভিটামিন প্রয়োগ করতে না পারার কারণে কয়েক বছর পূর্বে আমাদের এগ্রো ফার্মের দুই কোটি টাকার শতাধিক বিদেশী ছাগল মারা যায়। এখন আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ বছর থেকে কোরবানিকে সামনে রেখে গরুর ফার্ম করবো। কিন্তু চিন্তা হলো হাসপাতালের লোকবলের অভাব। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউই নেই চিকিৎসা দেয়ার মতো। অর্থাৎ জনবল সংকটে ধুঁকছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। সেখানে ১১ পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি পদই শূন্য। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালটিতে কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গবাদি পশু।

জানা যায়, ফরিদগঞ্জ পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠির এ উপজেলাটিতে প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা গবাদি পশু ও গৃহপালিত পাখি পালনের সাথে জড়িত। ছোট-বড় দুগ্ধ ও গরুর খামার, পোল্ট্রিসহ প্রায় দেড় হাজারের অধিক খামার রয়েছে এ উপজেলায়। প্রতিদিন সেখানে অনেক গবাদি পশু চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসেন এলাকার কৃষক ও খামারিরা। কিন্তু লোকবলের অভাবে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে বাধ্য হচ্ছেন আশপাশের দোকানগুলো থেকে মুখস্থ ঔষধ নিতে। যদিও এতে ঝুঁকি থাকে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একজন, সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একজন, ভেটেরিনারি সার্জন একজন, ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার একজন, ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিসট্যান্ট তিনজন, ফিল্ড অ্যাসিসট্যান্ট (এআই) একজন, ড্রেসার একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর একজন এবং অফিস সহায়ক একজন থাকার কথা। অথচ ওই ১১টি পদের মধ্যে ৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য হয়ে আছে। নাহার এগ্রো ফার্মের মালিক কামরুন্নাহার বেগম বলেন, আমি দীর্ঘদিন গবাদি পশু পালনের সাথে জড়িত। গরু অসুস্থ হলে ফোন দেই, নামেমাত্র সেবা পাই, কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। খামারী শিপন বলেন, একমাত্র সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় খামারের গবাদি পশু অসুস্থ হলে এখন সবাই গ্রাম্য চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হয়। সেবাগ্রহীতা ইয়াকুব মিয়া বলেন, খামারে কয়েকটি গরু অসুস্থ হওয়ায় পর পশু হাসপাতালে যাই। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় ভালো সেবা পাই না। জনবল সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুমন ভৌমিক বলেন, জনবলের অভাবে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জনবল পেলে আরো ভালোভাবে সেবা প্রদান করতে পারবো।

একটি হাসপাতাল সেটি মানুষ বা অন্য যে কোনো প্রাণীর হোক না কেন, যদি তাতে জনবলের অর্ধেকের চেয়ে কম থাকে, তাহলে সেখানে সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের অবস্থা তেমনই। এখানে ১১জনের মধ্যে ৫জন অর্থাৎ অর্ধেকের চেয়ে কম জনবল দিয়ে যে কার্যক্রম চলছে, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবার নামে পশু-পাখির প্রতি অবজ্ঞাতুল্য কিছু করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এই হাসপাতালটির শূন্য ছয়টি পদ পূর্ণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ। বিদ্যমান জনবল দিয়ে এই হাসপাতালে প্রাণীদেরকে যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে, তাতে অনিয়মের অভিযোগ নেই। তবে অপর্যাপ্ততা ও হিমশিম অবস্থাটা প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের প্রধান উপায় হচ্ছে জনবল সঙ্কট নিরসন।

উন্নত দেশগুলোতে পশুক্লেশ নিবারণ সমিতি নামে মানুষদের দ্বারা সৃষ্ট সংগঠন থাকে, যারা পশু-পাখি সহ অন্যান্য প্রাণীর যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট নিরসনে কাজ করে যায়। আমাদের দেশে কালেভদ্রে এমন সমিতির কথা শোনা গেলেও বাস্তবে দেখা মিলে না। সেজন্যে সর্বত্র পশুক্লেশ নিবারণ সমিতি গঠনে কাউকে না কাউকে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে পশু-পাখির খামারের মালিক/ পরিচালক বা এ সংক্রান্ত উদ্যোক্তাকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, পশুক্লেশ নিবারণ সমিতি হলে তারা বোবা প্রাণীগুলোর পক্ষে কথা বলতে পারবে, দাবি তুলতে পারবে। এতে ফরিদগঞ্জ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালকে সমস্যামুক্তকরণসহ আরো বড়ো সমস্যা দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে। আর স্টেকহোল্ডার ও ওয়াচডগ পর্যায়ে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও লক্ষ্য করা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়