মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৪

এটা কি গণশুনানি নাকি প্রহসন?

অনলাইন ডেস্ক
এটা কি গণশুনানি নাকি প্রহসন?

'মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের গণশুনানি সার্বজনীন হয়নি'--এমন শিরোনামেই বোঝা যায় গণশুনানির নামে আসলে কী হয়েছে। গতকাল এই শিরোনাম সম্বলিত সংবাদটি লীড নিউজ হিসেবে ছাপা হয়েছে ‘চাঁদপুর কণ্ঠে’।

    সংবাদটিতে মতলব উত্তরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ মাহবুব আলম লাভলু লিখেছেন,  মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের গণশুনানি সার্বজনীন হয়নি বলে মনে করছেন প্রকল্পবাসী। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) চাঁদপুর শহরের মঠখোলায় প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় প্রাঙ্গণে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানানো হয়।

    মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ২০ থেকে ৩০ কি.মি. দূরে। গণশুনানিটি বাস্তবমুখী করতে প্রকল্প এলাকায় এ গণশুনানি আয়োজনের প্রয়োজন ছিলো। সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমন্ত্রণ পাননি মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ইমাম, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী  ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রেসক্লাব, সাধারণ কৃষক (সমিতির লোক ছাড়া)। আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রশাসনের বাইরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন, ফেডারেশনের অধীনে ত্রিশটি ব্যবস্থাপনা দল ও ৫টি এসোসিয়েশন। তারাই কি শুধু সুবিধাভোগী--এমন প্রশ্ন অনেকেরই। পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন, ফেডারেশনের অধীনে ত্রিশটি ব্যবস্থাপনা দল ও ৫টি এসোসিয়েশন কৃষকের জন্যে কতোটুকু কাজ করে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

    বিভিন্ন  স্তরের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের  গণশুনানির বিষয়টি তারা জানেন না। আর যদি হয়ে থাকে, তাহলে সার্বজনীন হয়নি।   প্রশাসনের লোকজন ছাড়া এ গণশুনানিতে পানি ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা, সমিতির  কিছু লোকজন ছাড়া কথা বলার মতো তেমন উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলো না।

    মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক জানান, গণশুনানিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গণশুনানি প্রকল্প এলাকায় করা প্রয়োজন ছিলো। আমরা গণশুনানিতে অংশ নিয়ে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সমস্যা ও সম্ভাবনা  তুলে ধরতে পারতাম।  শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, সকল শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণে গণশুনানি হওয়া উচিত। গণশুনানি মতলব উত্তরে করা উচিত ছিলো। আমন্ত্রণ পেলেও ৩০/৪০ কি. মি. দূরে গিয়ে গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। স্থানীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা জানান, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় প্রাঙ্গণে গণশুনানি অনুষ্ঠানে  প্রেসক্লাব আমন্ত্রণ পায়নি।সার্বজনীন মানুষের অংশ গ্রহণে গণশুনানি করা উচিত ছিলো। প্রকল্প এলাকা কোনো শুনানির জন্যে উপযুক্ত স্থান। এতে করে সর্ব মহলের লোকজন প্রকল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পারতেন। পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম জানান, আমরা আগের দিন ফোনে দাওয়াত পেয়েছি। অনেকে অংশগ্রহণ করেছে। আমাদেরকে কাউকে দাওয়াত দিতে বলা হয়নি।

    উপজেলা     কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, গণশুনানির চিঠি পেয়েছি। আমার প্রতিনিধি গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, গণশুনানির দাওয়াত পেয়েছি। ব্যস্ততার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ে গণশুনানি করার কথা বলা হয়েছে। দাওয়াত তো দেওয়া হয়েছে।

    গণতান্ত্রিক সমাজে গণশুনানি একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। গণশুনানির অর্থ হলো জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়, ঘটনা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বা ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, মতামত ইত্যাদি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শোনা ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার যথাসম্ভব প্রতিকার করা। কোনো কোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধানও করা হয়, প্রচলিত দাপ্তরিক বা আইনি প্রক্রিয়ায় যার সমাধান করা হয়। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প দেশের অন্যতম বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। ধান উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্য এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সার্বজনীন অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণশুনানি করে প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

    মতলব উত্তরের মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এখন পর্যন্ত দেশের প্রখ্যাত পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর  ড. আইনুন নিশাতসহ অন্যান্য পানি বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কাছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায় নি। জন্মগত ত্রুটি নিয়েই চলছে এই প্রকল্পটি। আগাম পরিবেশ প্রতিক্রিয়া যাচাই করে নির্মাণ করা হয় নি এই সেচ প্রকল্পটি। এই প্রকল্প ঘিরে কতো প্রকার দুর্নীতি হয়েছে, তার বিবরণ অনেক দীর্ঘ।  অতএব,  এই প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প এলাকায় উন্মুক্ত পরিবেশে গণশুনানির আয়োজন করাই ছিলো যথার্থ।  কিন্তু এমনটি করার সাহস কোনো নির্বাহী প্রকৌশলীর নেই। বস্তুত বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীরও যে সেই সাহস নেই, সেটা  তিনি তাঁর চাঁদপুর শহরের কার্যালয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে  কম-বেশি রক্ষণশীলতার মধ্য দিয়ে গণশুনানির আয়োজন করে তার প্রমাণ রাখলেন। আমরা মনে করি, এটা গণশুনানির নামে প্রহসন হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়াটা বাঞ্ছনীয়।

    

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়