প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৪
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে পানি পৌঁছেনি জমিতে চলছে এখনও ক্যানেল সংস্কারের কাজ। দুটি বুস্টার পাম্পে পানি উত্তোলন পরীক্ষা
২০ জানুয়ারি ২০২৫ মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কালীপুর ও উদমদী পাম্প হাউজে পানি সেচের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর এখনও অর্থাৎ গত ৮ দিনেও পানি পৌঁছেনি অধিকাংশ কৃষকের জমিতে।পাম্পের মাধ্যমে যে পরিমাণ পানি ছাড়ছে, তা থাকছে মূল ক্যানেলে সীমাবদ্ধ। ক্যানেল সংস্কারের কাজ চলমান থাকায় প্রকল্পে ভেতরের সেচ ক্যানেলে পানি আসতে পারছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
|আরো খবর
অধিকাংশ জমি প্রস্তুত থাকলেও পানির অভাবে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না কৃষক। বীজতলায় ধানের চারার বয়স বাড়তে থাকলেও রোপণ করতে না পারায় কৃষকরা উৎপাদনে বিপর্যের আশঙ্কা করছেন।
এদিকে এখনও চালু হয়নি দুটি বুস্টার পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন। তবে এ পাম্পের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৫) পানি উত্তোলন করা হয়েছে অথবা পানি উত্তোলনে টেস্ট করা হয়েছে। এ বুস্টার পাম্পের আওতায় সেচ সুবিধা পায় কলাকান্দা, মোহনপুর, এখলাশপুর ও গজরা ইউনিয়নের বেশির ভাগ জমি।এখলাশপুর বুস্টার পাম্পের আওতায় বড়ো (বেড়িবাঁধের সাথে) ক্যানেলসহ কয়েকটি সেচ ক্যানেলের সংস্কার কাজ চলছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৫) বিকেলে দেখা যায়, বুস্টার পাম্পের রিজার্ভে পানি আসছে। তবে সেচ ক্যানেলে পানি সেচ হয়নি। মঙ্গলবার ডুবগী বুস্টার পাম্প ১/২ ঘন্টা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমিতে বোরো চাষের জন্যে প্রস্তুত কৃষকরা। পানি জমিতে না পাওয়ায় বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন ক্যানেলে এখনও সংস্কার কাজ চলছে। ক্যানেল পানিশূন্য।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৯ শত ৮৪ হেক্টর ও উৎপাদন ৪৩ হাজার ১শত ৪৬ মে. টন। বীজতলা করার উপযুক্ত সময় ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে থাকাবস্থায় জমিতে রোপণ করতে হয়। ৪০ দিনের চেয়ে চারার বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমেই উৎপাদন কমতে থাকবে। কৃষকরা এখন পর্যন্ত সেচ সুবিধা না পাওয়ায় বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। তাই বেশি বয়সী চারা রোপণে উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, আমার এলাকায় ক্যানেলের কাজ হচ্ছে। আমাদের জমি প্রস্তুত করে রেখেছি। পানির জন্যে চারা রোপণ করতে পারছি না। চারার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। চারার বয়স বেশি হলে ফলন ভালো হয় না।
কলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষক বোরহান উদ্দিন মোল্লা জানান, দশানী এলাকায় বেড়িবাঁধের সাথের ক্যানেলে কাজ চলছে। কবে পানি পাবো বলতে পারছি না। সরষিা চাষী আল মামুন জানান, উঁচু জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এখানে সেচের পানি আসে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, বোরো মৌসুমে (সঠিক সময়ে) সেচ ক্যানেলে এখন পর্যন্ত পানি পাচ্ছে না বলে কৃষকরা ফোনে জানাচ্ছে। তাদের চারার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। এদিকে ধানের চারার বীজতলার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ করতে না পারলে বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, বোরো মৌসুমের জন্যে এখনও কৃষক পানি পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে জানতে পেরেছি। আমি এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলবো।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোন নাম্বারে কল করার পর রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিস সূ্ত্রে জানা যায়, বুধবার (২৯ জানুয়ারি ২০২৫) সেচের পানি কোথাও মিলেছে এবং কোথাও মিলেনি।তথ্যমতে, ষাটনল ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় পানি গিয়েছে এবং কিছু এলাকায় যায়নি।সাদুল্লাপুর ইউনিয়নে পানি আসছে।বাগানবাড়ি ইউনিয়নে পানি আসে নি।দুর্গাপুর ইউনিয়নে একটি ব্লকে অল্প পরিমাণ পানি রয়েছে। তবে সামান্য।ইসলামাবাদ ইউনিয়নে পানি আসে নি। সুলতানাবাদ ইউনিয়নে পানি আসে নি। ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নে একটি ব্লকে পানি আসছে।ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নে ক্যানেলে অল্প পরিমাণ পানি রয়েছে। ফরাজিকান্দি ইউনিয়নে পানি আসছে। জহিরাবাদ ইউনিয়নে মেইন নালায় পানি কম থাকায় পানি জমিতে যাচ্ছে না। এখলাশপুর ইউনিয়নে বড়ো নালায় পানি আছে, ভেতরের ক্যানেলে পানি যায় না। মোহনপুর ইউনিয়নে পানি আসছে। কলাকান্দা ইউনিয়নে পানি আসে নি। গজরা ইউনিয়নে পানি আসছে।ছেংগারচর পৌরসভায় পানি আসছে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ