বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৩

কোরআন ও হাদিসের প্রমাণে মিরাজ

মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক
কোরআন ও হাদিসের প্রমাণে মিরাজ

'সুবহানাল্লাজী আসর বিআবদিহী লাইলাম্ মিনাল মাসজিদিল হা..র..মি ইলাল মাসজিদিল আকসাল্লাজি বারকনা হাওলাহু লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনা, ইন্নাহু হু-অস সামিউল বাচির।' অর্থাৎ পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্ত্বা তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। ( ১৭ সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ১)

'আসরা' শব্দটি 'ইসরা' ধাতু থেকে উৎপন্ন। এর অভিধানিক অর্থ রাতে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু রাসূলে পাক (সাঃ) মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-এর সঙ্গী হয়ে হযরত উম্মেহানীর ঘর থেকে বের হয়ে পবিত্র খানেয়ে কাবায় এসে বোরাকে আরোহনপূর্বক অতি অল্প সময়ের মধ্যে 'বায়তুল মুকাদ্দাস' বা 'মসজিদে আকসায়' এসে উপস্থিত হন। পথিমধ্যে তিনি 'আলমে বারযাখের' অনেক অনেক আযীবাত প্রত্যক্ষ করেন। মসজিদে আকসায় এসে সমস্ত আম্বিয়া আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপস্থিতিতে সকল নবী আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমাম হয়ে তিনি দু-রাকাত নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সকল নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশংসা করে সংক্ষিপ্ত ভাষণ বা খুতবা পেশ করেন। এ যার গর্ভ খুতবা প্রদান করে ইমামুল মুরসালীন হিসেবে সকলের থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। এ প্রক্রিয়াকেই আরবী ভাষায় "ইসরা" বলা হয়। পবিত্র আয়াতে কারিমায় এ দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। আয়াতে কারীমায় প্রথমেই 'সুবহানা' শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ তায়ালা জগৎবাসীদের জানিয়ে দিলেন যে, মেরাজ তোমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় মনে হবে আর এ ঘটনাকে আল্লাহ তায়ালা 'সুবহানা' শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয় মনে হবে। অথচ ইহাই বাস্তবে ঘটনা। আয়াতে কারীমায় 'আসরা' দ্বারা রাত্রিকালীন ভ্রমণ বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মেরাজ রাতে হয়েছে।

আয়াতে 'বি-আবদিহী' দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। আমার বান্দা বলে প্রেয়ময়তা বুঝানো হয়েছে। কেনো না আল্লাহ তায়ালা তাঁর কোনো বান্দাকে আমার বান্দা বলার দ্বারা তাঁর প্রতি ভালোবাসাই বুঝায়।

আর আয়াতে 'বি-আবদিহী' দ্বারা বুঝা যায় যে, মেরাজ স্ব-শরীরে হয়েছে। কারণ শুধু আত্মাকে দাস বলে না বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই দাস বলা হয়। এছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজ থেকে এসে উম্মে হানীকে যখন ঘটনা শোনালেন তিনি বললেন, আপনি কারোও কাছে ইহা প্রকাশ করবেন না; প্রকাশ করলে কাফেররা আপনাকে আর ও বেশি মিথ্যারোপ করবে। মেরাজ যদি স্বপ্নই হতো তাহলে মিথ্যারোপের কারণ থাকতে পারে না কেনো না স্বপ্নে মানুষ অনেক কিছুই দেখতে পারে। কথা অস্বীকার বা মিথ্যারোপের কোনো কারণ থাকতে পারে না। মেরাজ সত্য এবং স্ব-শরীরে বিধান কাফেররা ইহাকে মিথ্যারূপ করতে পারে। এতেই বুঝা গেলো যে মেরাজ স্ব-শরীরে ছিল।

আয়াতে কারীমায় 'লাইলাম' শব্দ ব্যবহারের দ্বারা বুঝা গেলো মেরাজ রাতের সামান্য সময় ছিলো। মেরাজের জন্য সারারাত প্রয়োজন হয় না। দুনিয়ার হিসেবে ইহা নিতান্ত সামান্য সময়। রাসূল সাল্লাল্লাই আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানীর ঘরে শায়িত থেকে সেখান থেকে জিব্রাঈল (আঃ)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে মেরাজে চলেন। মেরাজ থেকে ভোর হওয়ার পূর্বেই আবার চলে আসেন। ইহাই; রাত্রের সামান্য সময় যা 'লাইলাম' দ্বারা বুঝানো হয়েছে। মেরাজ ছিল দীর্ঘ সাতাশ বছর। যা আমাদের হিসেবে সামান্য। ইহাই 'লাইলাম' দুনিয়ার হিসেবকে ব্রেক করে দিয়ে আদেশ জারি করে দিলেন চন্দ্রসূর্যসহ সকল সৃষ্টি যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাক আমি আমার হাবীবকে দীর্ঘ ২৭ বছর মেরাজে নিয়ে আসবো। ঠিক ২৭ বছর পর আবারও ঘোষণা জারি করে দিলেন যে, হে সৃষ্টি জগৎ তোমরা পূর্বের ন্যায় চলমান হয়ে যাও। এ ব্রেকেই ২৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আর ইহা আল্লাহর জন্যই সম্ভব। কেনো না মহান আল্লাহ তায়ালা সকল ক্ষমতার মালিক। আর ইহাই দুনিয়ার হিসেবে 'লাইলাম' এ 'লাইলাম' একেবারই সামান্য সময়। যা আল্লাহ তায়ালারাই কুদরত। আর এ জন্যই আয়াতের প্রথমেই 'সুবহনা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আয়াতে কারীমায় 'মিনাল মাসজিদিল হারামে ইলাল মাসজিদিল আকসা'। মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত তাঁর এ ভ্রমণ। তাহলে এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকছা পর্যন্ত ভ্রমণ পবিত্র কুরআন দ্বারা সাবেত। যেখানে এক মাসের পথ সেখানে যদি রাতের কিছু সময়ে যাওয়া সাব্যস্ত হয় তাহলে ঊর্ধ্বাকাশে যাওয়া ও আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এবং আল্লাহর ক্ষমতায় অবশ্যই অবশ্যই সম্ভব। কেউ কেউ বলেছেন যে, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত হচ্ছে 'আসরা'। আর মসজিদে আকসা থেকে সপ্তাকাশে, আরশে আজীম সেই ঊর্ধ্ব জগতের ভ্রমণই হলো মেরাজ।

আয়াতে 'বারকনা হাওলাহু' দ্বারা যার চার দিকে বরকতের কথা বলা হয়েছে যে, এ মেরাজে যাওয়ার পথের চতুর্দিকে বরকত ময়। এ 'হাওলাহু' দ্বারা সমগ্র সিরিয়াকে বুঝানো হয়েছে। এক হাদিসে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা আরশ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বরকতময় ভূ-পৃষ্ঠকে বিশেষ পবিত্রতা দান করেছেন। (রূহল মাইনী)

'লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনার' অর্থাৎ যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। মেরাজের রজনীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতের অসংখ্য বিষয় অবলোকন করেন। তন্মধ্যে সপ্তাকাশ, নবীদের সাথে সাক্ষাত, বায়তুল মুকাদ্দাসের সনরা পাথর, বোরাক, রফরফ, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম ও আলমে বরযখের কতিপয় দৃশ্যাবলীসহ মহান আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নিদর্শনাবলী।

নিম্নে আলমে বরযখের কতিপয় বিষয় তুলে ধরা হলো : বোরাকে আরোহন করার পর তিনি একটি সবুজ মাঠ দেখতে পেলেন সেখানে নারী-পুরুষ সজ্জিত হয়ে ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত। তারা একদিকে জমিন প্রস্তুত করেছে, অপরদিকে বীজ বুনন করছে। আর সাথে সাথে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে ক্ষেতে ভরে যাচ্ছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ)কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন ইহা ওই সম্প্রদায়ের উদাহরণ; যারা আল্লাহর রাহে প্রশস্ত মনে দুনিয়াতে দান সদকা করে।

এমন একদল বদ নসীবদের দেখা পেলেন যেখনে অসংখ্য নারী-পুরুষ বিরাট একটা পাথর যুক্ত মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আর তাদের মাথার উপর বড় বড় পাথর দ্বারা আঘাত করা হচ্ছে। পাথরের আঘাতে তাদের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, আবার উহা পূর্ববৎ ভালো হয়ে যাচ্ছে আর মারছে। এরা হচ্ছে ওই সম্প্রদায় যারা নামাজ না পড়ে বিছানায় আরামের সাথে শুয়ে থাকতো এবং অলসতা করে বিছানা ছেড়ে নামাজের জন্য যেতো না। বরং অহঙ্কার করে দিন কাটাতে । বিশাল আলোচনার যৎ কিঞ্চিত এখানে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল নবুয়তের ১২ সালে যা মক্কা শরীফে উম্মে হানীর ঘর বা কাবার হাতিম থেকে। এ সফরে তাঁর ছিনাচাক করা হয়েছে।

তফসীরে কুরতুবীতে আছে, ইসরার হাদিস সমূহ সব মুতাওয়াতির। নাক্কাশ সম্পর্কে ২০ জন সাহাবীর রেওয়ায়েত উদ্ব্যত করেছেন এবং কাযী আয়ায় শেফা গ্রন্থে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

ইমাম ইবনে কাসীর স্বীয় তফসীর গ্রন্থে এসব রেওয়ায়েত পূর্ণরূপে যাচাই-বাছাই করে বর্ণনা করেছেন।

কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে, তিনি মালিক ইবনু সস'আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। আল্লাহর নবী (সাঃ) -কে যে রাত্রে মি'রাজ করানো হয়েছিল, সে রাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাদেরকে বলেছেন, একদিন আমি কা'বার হাত্বীম অংশে কাত হয়ে শুয়েছিলাম।

বর্ণনাকারী (কতাদাহ্) কখনো কখনো (হাত্বীম-এর স্থলে) “হিজর' শব্দ বলেছেন। এমন সময় হঠাৎ - একজন আগন্তুক আমার কাছে আসলেন এবং তিনি এ স্থান হতে ওই স্থান পর্যন্ত চিরে ফেললেন। অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ হতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হলো, এরপর আমার অন্তরকে ধৌত করা হয়, তারপর তাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হয়।

অপর এক বর্ণনায় আছে- অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে তাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাকে বলা হয় ‘বুরাক’। তার দৃষ্টি যত দূর যেত, সেখানে তার পা রাখত। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর আমাকে তার উপরে আরোহণ করানো হলো।

এবার জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? বললেন, (আমি) জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। যখন আমি ভিতর প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে দেখতে পেলাম ইয়াহইয়া ও ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-কে। তারা দু'জন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরীল আলায়হিস সালাম (আমাকে) বললেন, ইনি হলেন ইয়াহইয়া আলায়হিস সালাম আর উনি হলেন ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আপনি তাদেরকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করলাম, তাঁরা উভয়ে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সদর সম্ভাষণ।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর। অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভিতরে প্রবেশ করে আমি সেখানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন ইউসুফ আলায়হিস সালাম তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন বড়ই শুভ! অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে ইদরীস আলায়হিস সালাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি ইদরীস আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম, অতঃপর তিনি জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। এরপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বে আরোহণ করলেন এবং পঞ্চম আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, (আমি) জিবরীল । পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। আবার প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে পৌছলাম, সেখানে হারূন আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হারূন আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিলেন। অতঃপর বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে উঠলেন এবং ষষ্ঠ আকাশে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)! পুনরায় প্রশ্ন করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হা। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তারা আগমন কতই না উত্তম! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে মূসা আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন, মূসা আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি তার জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানিয়ে) পাঠানো হলো, যার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহণ করলেন। অনন্তর জিবরীল আলায়হিস সালাম দরজা খুলতে বললে, প্রশ্ন করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম সেখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন আপনার পিতা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।

অতঃপর আমাকে ‘সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হলো। আমি দেখতে পেলাম, তার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতির কানের মতো। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরো দেখতে পেলাম চারটি নহর। দু’টি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এ নহরের তৎপর্য কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হলো জান্নাতে প্রবাহিত দু'টি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হলো (মিসরের) নীল এবং (ইরাকের) ফুরাত নদী। অতঃপর আমাকে বায়তুল মা'মূর' দেখানো হলো। তারপর আমার সামনে হাজির করা হলো এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। তার মধ্য হতে আমি দুধ গ্রহণ করলাম (এবং তা পান করলাম)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটা ফিত্বরাত'-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।

অতঃপর আমার ওপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করা হলো। আমি (তা গ্রহণ করে) প্রত্যাবর্তন করলাম। মূসা আলায়হিস সালাম-এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি (আমাকে) বললেন, আপনাকে কি করতে আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত সম্পাদনে সক্ষম হবে না। আল্লাহর শপথ! আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলদের হিদায়াতের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করেছি। অতএব আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (সালাত) আরো হ্রাস করার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরে গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানালে) আল্লাহ তা'আলা আমার ওপর হতে দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। তারপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি এবারও অনুরূপ কথা বললেন। ফলে আমি আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি আমার ওপর হতে আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। তাই আমি (আবার) ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ তা'আলা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) মাফ করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসলে আবারো তিনি ঐ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা'আলা আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত) সালাত কম করে দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। এবারও তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরে গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পুনরায় ফিরে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করতে আদেশ করা হলো? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়