বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২২

পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ

শফিক আল মুজাদ্দেদী
পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ

সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিযা, পবিত্র শব-ই মিরাজ। স্ব-শরীরে মহান প্রভুর সাথে সাক্ষাত। মিরাজুন্নবী ﷺ মুসলিম উম্মাহর পবিত্র, বরকতময় ও মহিমান্বিত দিবসগুলোর অন্যতম। যা এমন একটি বিস্ময়কর ঘটনা যে, আল্লাহ্ এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন-

‘সুবহানাল্লাজী আসরা বি আব্দিহী লাইলাম মিনাল মাসজিদীল হারাম, ইলাল মাসজিদীল আকসা’।

সুবহানাল্লাহ দিয়ে আয়াতের শুরু করে আল্লাহ্ নিজেই জানিয়ে দিলেন মিরাজ বা ঊর্ধ্বজগত ভ্রমন বড়ই আশ্চর্যজনক ঘটনা। একই সাথে উক্ত আয়াতে স্ব-শরীরে মিরাজ গমনের প্রমাণ স্বরূপ ‘বি আব্দিহী’ শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা ‘আব্দুন’ শব্দটি আবদ হতে, যার অর্থ বান্দা আর বান্দা বলতে যার দেহ ও জীবন আছে। অর্থাৎ শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় রুহ ও দেহের সমষ্টিকে। তদুপরি বোরাক প্রেরণ ও বোরাক কর্তৃক নবী করিম (দঃ)কে বহন করে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেও স্ব-শরীরে মিরাজ গমনের প্রমাণ পাওয়া যায়। মিরাজ যদি স্বপ্নযোগে হতো তবে আল্লাহ্ ‘বি আব্দিহী’ শব্দ ব্যবহার করতেন না আর বোরাক প্রেরণের প্রয়োজন হতো না। কারণ স্বপ্নে ভ্রমণে দেহ লাগে না, শুধু রূহ থাকে।

আরও একটু বললে এভাবে বলা যায়, মিরাজ থেকে ফিরে আসলে কাফের সম্প্রদায় তা শুনে আশ্চর্য ও বিস্ময় প্রকাশ করে এবং তাতে সন্দেহ পোষণ করে। কারণ স্বশরীরে তা অসম্ভব! যদি নবীজী স্বপ্নযোগে মিরাজের কথা বলতেন তবে কাফেররা তাতে আশ্চর্য ও বিস্ময় প্রকাশ করতো না এবং তাতে সন্দেহ পোষণও করতো না। এতেও প্রমাণ হয় রাসুল (দরূদ) স্বপ্নযোগে নয় বরং স্ব-শরীরে মিরাজ করেছেন বলে ঘোষণা করেছিলেন।

রাসুল (দরূদ) ২৬ রজব রাতে হযরত জিবরাইল (আ.) এঁর সঙ্গে বোরাক নামক বাহনে চড়ে প্রথমে পবিত্র কাবা থেকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর করেন। সেখানে অন্যান্য নবী-রাসুলের ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর সেখান থেকে সপ্তম আসমান পেরিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পরিভ্রমণ করেন। এ সময় নবীজি (দরূদ) নভোমণ্ডল, বেহেশত-দোজখ ও সৃষ্টির বিভিন্ন রহস্য প্রত্যক্ষ করেন এবং পূর্ববর্তী নবীদের সাক্ষাৎ লাভ করেন। পরে রফরফ নামক বাহনে চড়ে নবীজি (দরূদ) আল্লাহ রব্বুল আলামীনের আরশে আজিম পর্যন্ত যাওয়ার ও মহান রব্বুল আলামীনের দিদার লাভ করেন। নবীজি (দরূদ.) আল্লাহর কাছ থেকে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

মিরাজের রাত্রে নবী করিম (দঃ) কে প্রথম সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল জিব্রাইল, মিকাইল ও ইস্রাফিল (আঃ) ফেরেস্তাত্রয়ের অধীনে সত্তর হাজার ফেরেস্তা দিয়ে। দ্বিতীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল নবী (আঃ) গনের মাধ্যমে। তৃতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল আকাশের ফেরেস্তা ও হুর দিয়ে এবং চতুর্থ ও শেষ সংবর্ধনা দিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলা। সিদরাতুল মুনতাহা ও আরশ মোয়াল্লা অতিক্রম করার পর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা একশত বার সম্বর্ধনামূলক বাক্য অর্থাৎ ‘হে প্রিয় বন্ধু, আপনি আমার নিকটে আসুন’ বলে নবী করিম (দঃ) কে সম্মানীত করেছিলেন। কোরআন মজিদে আয়াতটি এদিকেই ইঙ্গিতবহ বলে তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পবিত্র মিরাজ শরীফ তিনটি পর্যায়ে সুসম্পন্ন হয়েছিলঃ-

১. ইসরাঃ

এ পর্যায়ে মক্কা শরীফ থেকে রাত্রে বোরাকে চড়ে বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা) পর্যন্ত পৌঁছা- এটাকে বলা হয় ইসরা বা নৈশ ভ্রমন।

২. মিরাজঃ

এ পর্যায়ে বোরাকে চড়ে বায়তুল মুকাদ্দস থেকে ৭ম আকাশে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছা- এটাকে বলা হয় মিরাজ বা উর্ধারোহন।

৩. ইরাজঃ

দীদারে এলাহীর উদ্দেশ্যে সিদরাতুল মুনতাহা থেকে রফরফে চড়ে (সবুজ রঙের নূরের চাদর) উর্ধারোহন করে আরশে আজিম তথা লা-মাকানে (স্থান কাল রহিত) পৌঁছা- এটাকে ইরাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

সাধারণভাবে পূর্ণ ভ্রমণকে এক নামে মিরাজ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কোরআন, হাদিসে মোতাওয়াতির এবং খবরে ওয়াহে দ্বারা যথাক্রমে এই তিনটি পর্যায়ের মিরাজ প্রমাণীত।

মিরাজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি বা সোপান। যেহেতু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে জান্নাতী এক সোপানের মাধ্যমে উর্ধালোকে ভ্রমন করানো হয়েছিল, তাই এ ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়। ইসলামের পরিভাষায় মসজিদে আকসা থেকে সিদরাতুল মুনতাহা ও তদুর্ধ জগতের ভ্রমনকে মিরাজ বলা হয়। কখনো কখনো উভয় ভ্রমনকে একত্রে ইসরা ও মিরাজ বলা হয়।

জেনে রাখা দরকার (মিরাজের রাত্রে) মসজিদে আকসাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নামাযের ইমামতি করেছেন এবং সমস্ত নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) মুক্তাদী ছিলেন। আর তা আত্মিক বা আধ্যাত্মিক ছিলোনা বরং তা ছিল শারীরিক সমাবেশ। ইমামতি করতে হলে ও জামাআতে শরীক হতে হলে স্ব শরীরে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ সবাই স্বীয় শরীর মোবারক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আল্লাহ্ সমস্ত নবীগণকে স্ব-শরীরে উপস্থিত করে হুজুর নবীয়ে করিম (দঃ) এঁর মোক্তাদী বানিয়েছিলেন। সেদিন সমস্ত নবীগণের ইমাম হয়ে নবী করিম (দঃ) ‘নবীগণেরও নবী’ বাস্তবে প্রমাণীত হয়েছিলো। সমস্ত নবীগণ অষ্ট অঙ্গ (দুই হাত, দুই পা, দুই হাটু, নাক ও কপাল) দিয়ে স্ব-শরীরে নামাজ আদায় করেছিলেন সেদিন। সমস্ত নবীগণ স্ব-শরীরে জীবিত, তারই বাস্তব প্রমাণ হয়েছিল মিরাজের রাত্রে ।

মোল্লা আলী ক্বারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মিরকাতের ৫ম খন্ডের ৪৩০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন -"নামাযের বিভিন্ন কাজ যেমন দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা ইত্যাদি শরীর দিয়ে আদায় করা যায়। শুধুমাত্র আত্মা দিয়ে এই রুকনগুলো আদায় করা যায় না।" [মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ৫ম খন্ড, পৃ. ৪৩০]।

মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল নবুয়তের ১১ বৎসর ৫ মাস ১৫ দিনের মাথায়। অর্থাৎ প্রকাশ্য নবুয়তের ২৩ বৎসর দায়িত্ব পালনের মাঝামাঝি সময়ে। সে সময় হুজুর (দঃ) এঁর হায়াতি দুনিয়ায় বয়স হয়েছিল ৫১ বৎসর ৫ মাস ১৫ দিন।

সার্বিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে মিরাজ যে স্ব-শরীরে হয়েছে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।

বাংলাদেশে আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাতে পবিত্র শব-ই মিরাজ। মওলায়ে কারীম আমাদের সাধ্যমতো নফল ইবাদত ও দরুদে পাক পাঠের মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করার এবং সোম ও মঙ্গলবার অথবা মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখার তৌফিক দিন-আমীন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়