চিরবিদায় সত্ত্বেও প্রবীণ সাংবাদিক হাসান আলীর রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন!
ফরিদগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক জনপ্রতিনিধি হাসান আলী (৭০) আর বেঁচে নেই। তিনি বুধবার (২২ জানুয়ারি ২০২৫) রাত ১২টার দিকে ফরিদগঞ্জ বাজারে নিজ মালিকানাধীন ঝর্ণা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি হার্টসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দৈনিক গণকণ্ঠ ও দৈনিক ইত্তেফাকের ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই ‘ফরিদগঞ্জ কণ্ঠ’ নামে সাপ্তাহিক একটি প্রিন্ট পত্রিকার প্রকাশক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এছাড়া তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ বাজারে ঝর্ণা হাসপাতাল নামের একটি প্রাইভেট চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ফরিদগঞ্জের সাংবাদিক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এছাড়া রেখে গেছেন তাঁর সাংবাদিকতার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সাপ্তাহিক ফরিদগঞ্জ কণ্ঠকে। যেমনটি উপজেলা পর্যায়ে বিরলই বটে।
ফরিদগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক হাসান আলীর সমবয়সী উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের মধ্যে কচুয়ার আবুল হোসেন (সাবেক সভাপতি, কচুয়া প্রেসক্লাব), শাহরাস্তির কাজী হুমায়ুন কবির (সাবেক সভাপতি, শাহরাস্তি প্রেসক্লাব), হাজীগঞ্জের ইকবালুজ্জামান ফারুক (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাব)-এর নাম উল্লেখ করা যায়। এঁদের মধ্যে জনাব ফারুক ছাড়া অন্য দুজন সাংবাদিকতা করছেন। আর জেলা পর্যায়ে সত্তরোর্ধ্ব সাংবাদিকদের মধ্যে অধ্যাপক আহছানুজ্জামান মন্টু (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর প্রেসক্লাব) সাংবাদিকতা ছেড়ে শারীরিক অসুস্থতা সহ অন্য কারণে ঢাকা অবস্থান করছেন। দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের দীর্ঘকালের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম কিবরিয়া জীবন (সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাব) সাংবাদিকতা ছেড়ে দু পুত্র সন্তান ও স্ত্রীসহ আছেন এখন আমেরিকায়। এককালের তুখোড় সাংবাদিক আশি বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, চাঁদপুর প্রেসক্লাব) বহু বছর পূর্বে সাংবাদিকতা ছেড়ে ধর্মকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং বার্ধক্যজনিত জটিলতায় বর্তমানে চাঁদপুর শহরের মেথা রোডস্থ বাসাতেই দিনাতিপাত করছেন। তাঁর কিছুটা কনিষ্ঠ সাপ্তাহিক রূপসী চাঁদপুরের সম্পাদক ও প্রকাশক এম এ মাসুদ ভূঁইয়া বহু বছর পূর্বে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে চাঁদপুর ছেড়েছেন এবং আমেরিকা ও বাংলাদেশ মিলিয়ে দিনযাপন করছেন। উপরে যাঁদের নাম উল্লেখ করলাম তাঁদের সন্তানদের কেউই পেশাদার বা সৌখিন হিসেবে সাংবাদিকতায় আসেন নি। তাঁদের মধ্যে দুজন সাংবাদিকতায় কম-বেশি সক্রিয় থাকলেও তাঁদের মৃত্যুর পর সাংবাদিকতার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দৃশ্যমান কিছু রেখে যেতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। এঁদের সকলের মধ্যে ফরিদগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক হাসান আলী অবশ্যই ব্যতিক্রম। কেননা তিনি তাঁর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সাপ্তাহিক ফরিদগঞ্জ কণ্ঠকে রেখে যেতে পেরেছেন। দেখার বিষয়, এটি তাঁর উত্তরসূরিরা টেকসই করতে পারবেন কিনা। আমরা জনাব হাসান আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।