বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩

অকালে হারিয়ে গেলেন নিবেদিতপ্রাণ এক ইসলামী সংগঠক

অনলাইন ডেস্ক
অকালে হারিয়ে গেলেন নিবেদিতপ্রাণ এক ইসলামী সংগঠক

চাঁদপুর জেলায় এক নামের দুজন ব্যক্তি সুখ্যাতি পেয়েছিলেন। এ নামটি আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন। কাকতালীয়ভাবে দুজনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। একজন ছিলেন আইনজীবী অর্থাৎ অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদ, বিদ্যোৎসাহী ও সমাজসেবক ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি একদিন অপরাহ্নে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নেন। অনেক সম্মান ও মর্যাদা পেয়ে হাজীগঞ্জের নিভৃত পল্লী ছয়ছিলা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তিনি যখন সুখ্যাতির তুঙ্গে, তখন আরেক আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন সুখ্যাতির সিঁড়িতে পা রেখে ওপরে ওঠার চেষ্টায় ব্রতী ছিলেন। তিনি পেশায় মাদ্রাসার শিক্ষক ও অধ্যক্ষ ছিলেন। মাওলানা আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন নামে ছিলো তাঁর ব্যাপক পরিচিতি। গত সোমবার (২০ জানুয়ারি ২০২৫) তিনি তাঁর বাড়ির সম্মুখস্থ কর্মস্থল রামপুর আলিম মাদ্রাসায় কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনিও অনেক সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর তীরে পারিবারিক কবরস্থানে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিনের মৃত্যুজনিত সম্মানজনক বিদায়ের তিন দশক পর চাঁদপুর জেলাবাসী দেখলো মাওলানা আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিনের মৃত্যুজনিত সম্মানজনক বিদায়ের দৃশ্য। দুজনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভিন্ন সময়ে ও ভিন্ন পরিবেশে হলেও মৃত্যুতে দেখা গেলো কী অসাধারণ মিল!

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে মাওলানা আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার দুটি পৃথক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বুধবারের সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে 'রামপুরের হুজুরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অধ্যক্ষ আবু জাফর ॥ অসংখ্য সুন্নী জনতা শোকে মুহ্যমান'। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুরের আপামর সুন্নী জনতার কাছে অধ্যক্ষ আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন নামটি বেশ সমাদৃত। দীর্ঘ ৪০ বছরের সাংগঠনিক জীবনে অসংখ্য নেতা-কর্মী গড়েছেন বহুমুখী গুণের অধিকারী এই নেতা। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চাঁদপুর জেলায় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি চাঁদপুর সুন্নীয়তের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া তরিকার দেশখ্যাত সংগঠন গাউছিয়া কমিটিরও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু হয় নিজ বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নস্থ রামপুর পীর বাড়ির প্রতিষ্ঠিত রামপুর আদর্শ মাদ্রাসার কর্ণধার হিসেবে। ১৯৯২ সালে এই মাদ্রাসাটি দাখিল মাদ্রাসা থাকাকালীন তিনি এখানে সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে যোগদান করেন। এরপর এটি আলিম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে থেকে দ্বীনি শিক্ষায় খেদমত দিয়ে যান। সুন্নীয়তের এই বীর সিপাহসালার ২০ জানুয়ারি সোমবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মাওলায়ে হাকিকির দীদারে চলে যান। ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে সমাহিত করা হয় তাঁর দাদা রামপুরের হুজুর খ্যাত, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা ওয়াজউদ্দিন (রঃ)-এঁর পাশে। এর আগে তাঁর দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় জানাজায় অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী ছাত্রসেনা, ইসলামী যুবসেনা ও গাউছিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, মুফতি মুফাসসির অংশ নেন। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও অঞ্চল ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে অনেক নেতৃবৃন্দ এসে জানাজায় অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে মরহুমের উপর স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান জননেতা মাওলানা এমএ মতিন, মহাসচিব সউম আবদুস সামাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডঃ আবু নাছের তালুকদার, সোলায়মান ফরিদ, চাঁদপুর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সভাপতি অধ্যক্ষ আল্লামা ড. একেএম মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আবু সুফিয়ান খান আবেদী আল-কাদেরী, ঘনিয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা হাফেজ জুনায়েদুল হক নকশবন্দী মোজাদ্দেদী, চাঁদপুর গাছতলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী নকশবন্দী মোজাদ্দেদী, হাশিমপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা শায়খ আশফাক আহমাদ উয়েসী রেফায়ী (মা.জি.আ.), চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাওলানা এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ।

মাওলানা আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন ইসলামের সুন্নী মতাদর্শের নিবেদিতপ্রাণ একজন বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। এজন্যে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ভিন্ন মতাদর্শের লোকজনের সমালোচনা, বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করতে হয়েছে চরম ধৈর্যের সাথে। তিনি দাখিল মাদ্রাসায় সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে যোগদান করে মাদ্রাসাটিকে আলিম মাদ্রাসায় উন্নীত করতে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন সহ আরো অনেক কিছুতেই দেখিয়েছেন আশাব্যঞ্জক সাফল্য। যে কারণে মাদ্রাসাটি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নে সমৃদ্ধ হয়েছে। তাঁর সাংগঠনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ছিলো ঈর্ষণীয়। তাঁর মাদ্রাসার সুনামের কারণে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা শুধু নয়, চাঁদপুর শহরসহ দূরদূরান্তের ছেলেমেয়েরাও এটির শিক্ষার্থী হয়েছে। তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান যেখানেই হোক না কেনো, সেটি যদি ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়, শিক্ষার্থীর অভাব হয় না। আমরা মাওলানা আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিনের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়