রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩

সকল শহীদ স্মরণে বিজয়ের প্রেরণা

রহমান মৃধা
সকল শহীদ স্মরণে বিজয়ের প্রেরণা

১৬ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। এটি বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাসের গৌরবময় এক অধ্যায়। আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ভ্রমণ হয়েছিল এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে। একবার আমি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলাম। চারপাশে মানুষের ঢল—বয়স, পেশা কিংবা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একত্রিত হয়েছিলেন। গাঢ় সবুজ আর লাল পতাকায় ঢাকা এই পরিবেশ যেন পুরো জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

স্মৃতিসৌধের এক কোণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন, কীভাবে একটি নিরস্ত্র জাতি দুঃসহ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে পড়লো, ১৯৭১ সালে বাঙালিরা শুধু একটি ভূখণ্ড চায়নি, তারা চেয়েছিলো ভাষার অধিকার, সংস্কৃতির মর্যাদা এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার স্বাধীনতা। ভদ্রলোকের কথা যেন আমার মনের গভীর অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তুলেছিলো। কারণ আমিও সেই ১৯৭১-এর এক স্বাধীনতাকামী শিশু সৈনিক ছিলাম। আমি তখন খুব ছোট হলেও মুক্তিযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা আর স্বাধীনতার চেতনা আমার শৈশবের স্মৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত।

আজ আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যায়—কী চেয়েছিলাম আর কী পেয়েছি? স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে অনেক কিছু অর্জন হয়েছেÑঅর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। কিন্তু তবুও, মুক্তিযুদ্ধের সেই শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন এখনও সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ছিলো মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বৈষম্য, আর দুর্নীতি আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও, এই বিজয় দিবসে আমাদের আশার আলো রয়েছে।

২০২৪ সালের গণআন্দোলন এবং স্বৈরশাসনের পতনের পর, জাতি নতুন করে আশার বাতিঘর খুঁজে পেয়েছে। ১৯৭১ সালের সেই বিজয়ের আলো আবারও আমাদের পথ দেখাচ্ছে। এই নতুন আলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ করছে, আমাদের শক্তি এবং সাহস দিচ্ছে একটি উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার জন্যে। বিজয়ের এই চেতনায় আমরা শপথ নিতে পারি, আমরা একটি সুন্দর, মানবিক এবং সাম্যের বাংলাদেশ গড়বো।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন কেমন হবে?

আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে জাতির প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল ইতিহাস নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবতায় প্রতিফলিত হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যেন তারা দেশকে আরও উন্নত এবং মানবিক করে গড়ে তোলে।

শেষমেষ, বিজয় দিবস উদযাপন শুধু আনন্দের দিন নয়, এটি আমাদের আত্মবিশ্লেষণেরও দিন। এই দিনে আমাদের বিবেক জাগ্রত করতে হবে, আবেগের সঙ্গে অনুভব করতে হবে সেই ত্যাগের মূল্য। বিজয় দিবসের এই বাণী “সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে”Ñশুধু একটি গান নয়, এটি একটি জাতির হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা।

১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিন। প্রতিবছর এমন দিনে আমরা যেন নতুন করে প্রতিজ্ঞা করি—আমাদের দেশকে গড়ে তুলবো সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। সেই উল্লাসে প্রতিধ্বনিত হোক :

“মোর মুখ হাসে, মোর চোখ হাসে, মোর টগবগিয়ে খুন হাসে,

আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।”

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়, এই দিনটি হোক জাতীয় ঐক্যের মন্ত্র। বিজয়ের আলো আমাদের পথচলায় চিরজাগ্রত থাকুক।

রহমান মৃধা : গবেষক ও লেখক। (সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়