বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কড়াইল বৌ-বাজার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট
  •   বাকৃবিতে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ
  •   সেনাবাহিনীর ভুয়া ক্যাপ্টেনসহ আটক ২
  •   মতলবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাদ দিয়ে তৃণমূলের অংশগ্রহণে কমিটি গঠনের দাবিতে বিএনপির গণমিছিল।
  •   এসোসিয়েশন অব মডেল ইনস্টিটিউশন্স চাঁদপুর-এর বৃত্তি পরীক্ষা

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬

কচুয়াবাসী যাঁর অভাব বোধ করবেই

অনলাইন ডেস্ক
কচুয়াবাসী যাঁর অভাব বোধ করবেই

চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের হারিয়ে যাওয়া সদস্যদের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হলো ফরহাদ চৌধুরীর অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। প্রথমে হারালাম প্রবীণ সাংবাদিক এমএমএ বাতেনকে, যিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। তারপর ফরিদগঞ্জের সেলিম মিয়াকে হারালাম সড়ক দুর্ঘটনায়। তৃতীয়ত বার্ধক্যজনিত কারণে চলে গেলেন যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওবায়েদুল্যা। এরপর অকাল মৃত্যুর শিকার হলেন মহামায়ার মমিন হোসেন আকাশ ও ফরিদগঞ্জের জসিমউদ্দিন। আর সর্বশেষ বিদায় নিলেন কচুয়ার রহিমানগর প্রতিনিধি ফরহাদ চৌধুরী, যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ফরহাদ চৌধুরী মহান বিজয় দিবসের আনন্দময় দিনে সকলকে নিরানন্দে ভুগিয়ে ভোর পৌনে ছয়টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো মাত্র ৪৬ বছর। তিনি ছয় বছরের এক পুত্র, তিন ভাই ও দুবোনসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর দিন বাদ আসর তাঁকে কচুয়া উপজেলার গোহট মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

ফরহাদ চৌধুরী পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি মূলত একজন ব্যবসায়ী, সংস্কৃতি সংগঠক ও নীরব সমাজকর্মী ছিলেন। সাংবাদিকতা ছিলো তাঁর সৌখিন কাজ। তাঁর সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নের কাজে তিনি সাংবাদিকতাকে কাজে লাগিয়েছেন। নিজে পুরো বিল পরিশোধ করে তিনি রহিমানগর এলাকায় চাঁদপুর কণ্ঠ নির্দিষ্ট হকারের মাধ্যমে বিলি করতেন।

ফরহাদ চৌধুরী ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ প্রতিষ্ঠা করে এতোটা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে, কচুয়ায় তাঁর সংগঠনের ন্যায় আর কেউ ভালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে পারতো না। শুধু কি তাই, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে চাঁদপুরের সেরা দশটি সংগঠনের একটিতে পরিণত হয়েছিলো। কচুয়া ও সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলার সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান, চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, উন্নয়ন মেলা, ইলিশ উৎসব ও বৈশাখী মেলায় ফরহাদ চৌধুরীর সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অবধারিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি গোহট জনকল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে করেছেন নীরব সমাজসেবা। তিনি নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে গণতান্ত্রিক উপায়ে দুটি সংগঠনের নেতৃত্ব পরিবর্তনে ছিলেন সচেষ্ট। যার কারণে অসুস্থ হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর দুটি সংগঠন নিয়ে কোনোরূপ কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্ব ছাড়াই ছিলেন সর্বোচ্চ সক্রিয়। সকল দল-মতের মানুষের কাছে তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং প্রশ্নাতীতভাবে ছিলেন গ্রহণযোগ্য। তাঁর কথা তাই কচুয়াবাসী সহজে ভুলবেন না এবং তাঁর অভাব বোধ করবেন অনেক অনেকদিন।

ফরহাদ চৌধুরী দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের রহিমানগরের নিজস্ব প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন ১২ বছরের অধিক সময় ধরে। তিনি চলতি ২০২৪ সালের ১৭ জুন চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তির স্মারক গ্রন্থে একটি লেখা লিখেছেন, যেটি ২৬৪-২৬৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে। 'চাঁদপুর কণ্ঠকে কেন ভালবাসি?' শিরোনামের লেখাটিতে দ্বিতীয় স্তবকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাকে ছেড়ে যেতে চাই না কেন ও এ পত্রিকাকে এতো ভালোবাসার কারণ কী? আমার পক্ষ থেকে এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর হচ্ছে--পত্রিকা সমাজের দর্পণ। পত্রিকায় থাকা চাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, সংবাদের নেপথ্য সংবাদ, সম্পাদকীয়তে থাকতে হবে গঠনমূলক সমালোচনা, সঠিক নির্দেশনা ও প্রস্তাবনা। এসব বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে চাঁদপুর কণ্ঠ নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৩০টি বছর অতিক্রম করেছে।’’

চাঁদপুর কণ্ঠ ফরহাদ চৌধুরীর এই অভিব্যক্তির মূল্য কোনোভাবেই আর পরিশোধ করতে পারবে না। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠ সহ তাঁর পুরো কর্মযজ্ঞ ছেড়ে যেতে না চাইলেও মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় অকালে ছাড়তে হলো তাঁকে সুন্দর ভুবন। আমাদের বিশ্বাস, তিনি তাঁর ভক্ত-অনুরাগী-শুভাকাক্সক্ষীদের মাঝে বেঁচে থাকবেন দীর্ঘকাল। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়