বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০

বিপত্নীক প্রবীণ পুরুষের জীবন

হাসান আলী
বিপত্নীক প্রবীণ পুরুষের জীবন

নানা কারণে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন আগে মারা যান। সমাজের দিকে তাকালে আমরা বিপত্নীক পুরুষের মুখ অল্পই দেখতে পাই। স্ত্রী মারা যাবার পর স্বামী নিজ থেকে আবার বিয়ে করতে আগ্রহী হন কিংবা পরিবারের সদস্যরা সেবা-যত্ন, দেখাশোনার জন্যে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। সমাজ জীবনে পুরুষের বিয়ে নিয়ে তেমন একটা হৈচৈ হয় না। প্রাপ্ত বয়স্ক যে কোনো নরনারীর বিয়ে করতে সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র বাধা দেয় না। কোনো বাধা না থাকলেও বিপত্নীক প্রবীণের পক্ষে বিয়ে করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

আবার প্রবীণ নিজেও আর বিয়ে করতে রাজি হন না।বেশির ভাগ প্রবীণই জানেন বিয়ে মানেই দায়িত্বগ্রহণ। ব্যক্তি সেই দায়িত্ব পালনে কতখানি সক্ষম সেটাও বিবেচনার বিষয়। যেসব প্রবীণের সহায় সম্পদ এবং শারীরিক সমস্যা আছে তাদের পক্ষে বিয়ে করা অনেক কঠিন বিষয়। সহায় সম্পদ থাকলে ছেলেমেয়ে, আত্মীয় স্বজনরা সম্পদ হাতছাড়া হতে পারে সেসব আশংকায় ভোগে। সন্তান, আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে এই ভয়ে কেউ কেউ বিয়ে করতে রাজি হতে চান না। শারীরিক সমস্যা বেশি হলে কাঙ্ক্ষিত কনে পাওয়া পাওয়া কঠিন। আবার যাদেরকে কনে হিসেবে পাওয়া যাবে তারা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে।

সাহস-সামর্থ্য না থাকার ফলে কেউ কেউ বিপত্নীক প্রবীণ জীবন বরণ করতে বাধ্য হন। প্রত্যেক মানুষই বার্ধক্যে নিঃসঙ্গ থাকতে পছন্দ করেন না। বিপত্নীক প্রবীণ জীবন অনেক কষ্টের। বেশির ভাগ বিয়ে অসম্মানজনক বলে মনে হয়। মূলত যিনি বিয়ে করেন বা যারা বিয়ের আয়োজন করেন তারা মূলত একজন সার্বক্ষণিক সেবিকা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গরীব, অসহায়, উপায়হীন নারীরা সার্বক্ষণিক সেবিকা হিসেবে স্বামী নামক একজন প্রবীণের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। যিনি স্ত্রী হিসেবে আসেন তিনি প্রায় সবারই করুণার পাত্র হয়ে থাকেন। সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাগ্য হলো, স্ত্রীকে স্বামীর সেবা শুশ্রূষা করতে হয় শুধু পেটে ভাতে, জামা কাপড়ে। স্বামীর মৃত্যু হলে ছেলেমেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করে। বিপত্নীক প্রবীণ প্রথম দিকে ছেলের বাড়ি, মেয়ের বাড়ি করে কিছু দিন কাটিয়ে দেন। যাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে অবস্থান করছে তারা বছরের একটা সময় দেশের বাইরে কাটিয়ে আসেন। যাদের ছেলেমেয়েরা দেশে থাকে, তারা কোনো একটা ছেলে কিংবা মেয়ের সাথে স্থায়ী ভাবে থাকার চেষ্টা করেন। মাঝে মধ্যে অন্য ছেলেমেয়েদের কাছেও থাকেন কিংবা পালাক্রমে সব ছেলেমেয়ের কাছেই থাকেন।

কেউ কেউ নিজের ঘরে থাকেন, খাবার দাবার ছেলেমেয়েরা ঘরে পৌঁছে দেন।কোনো কোনো প্রবীণ একাকী মেসে, হোস্টেলে, ফ্ল্যাটে, বাড়িতে কিংবা প্রবীণ নিবাসে বসবাস করেন। যেসব প্রবীণ আর্থিকভাবে দুর্বল তারা পরিবার পরিজনের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন। তাদেরকে পরিবার পরিজনের দয়া, করুণা, কৃপায় বাঁচতে হয়। কেউ কেউ হাটে বাজারে, শহরে, বন্দরে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করে। এই ভিক্ষার টাকার কিছু অংশ অসহায় ছেলেমেয়েদের জন্যে রাখেন কিংবা পাঠিয়ে দেন। সংকট তীব্র হয় যখন প্রবীণ অসুস্থ হয়ে পড়েন । তার চিকিৎসা, সেবা, হাসপাতালের খরচ, হাসপাতালে আনা নেয়া, চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তীব্র হয়। পরিবারের সবাই নানান কাজে ভীষণ ব্যস্ত। কে তাকে সময় দিবে? সময় দেবার, সঙ্গ দেবার, সাহস যোগাবার, পাশে দাঁড়াবার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অচেনা অজানা মানুষের সেবা-যত্নই ভরসা। এই সেবা মূল্য কে পরিশোধ করবে, কতখানি পরিশোধ করবে তা নিয়ে পারিবারিক মনোমালিন্য হতে দেখা যায়।

সামর্থ্যবান বিপত্নীক প্রবীণ নিজের স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে জীবনের শেষ দিনগুলোতে শান্তি ও স্বস্তিতে থাকার চেষ্টা করতে তেমন কাউকে দেখা যায় না। বরং পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমিজমা, নিজের কেনা সহায় সম্পদ ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিক্রি করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন।আবার কেউ যদি বিক্রি করতে চান, তবে ছেলেমেয়েরা নানা অজুহাতে বিক্রি করতে অসহযোগিতা করে। চিকিৎসার প্রশ্নে ছেলেমেয়ে, আত্মীয় স্বজনরা বলতে থাকে, জয়কালে ক্ষয় নাই, মরণকালে ওষুধ নাই। পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকেন অন্তিম যাত্রার কার্যক্রম নিয়ে। আবার কেউ সহায় সম্পদের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়েন। বিপত্নীক প্রবীণ ঝুঁকির কথা বিবেচনায় না নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য, জমি জমা, বাড়ি ঘর নির্মাণে টাকা পয়সা বিনিয়োগ করে দুর্দশায় পড়েন।শুধুমাত্র

পরিকল্পিত জীবন বিপত্নীক প্রবীণকে শান্তি ও স্বস্তি দিতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়